পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের জন্য অঢেল ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করেছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের আমীর হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও বেফাকের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব সাহায্য জোগাড় করা হলেও তা বিলি করা হচ্ছে না। কি পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ সহায়তা পাওয়া গেছে তারও কোন হিসাব চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান হেফাজতের নেতারা।
গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের আরাকানে সেনাবাহিনী ও মগদস্যুদের বর্বরতম নির্যাতন শুরু হয় নিরপরাধ রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর। গণহারে নারী-শিশু-যুবকদের ধরে হত্যা করছে বার্মা সেনাবাহিনী ও সেদেশের মগদস্যুরা। জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশসহ আশপাশের কয়েকটি দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমও’র হিসাবে বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পাহাড়-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। যদিও সরকারি তরফে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯ হাজার বলে দাবি করা হচ্ছে। পৌষের শীতে পাহাড়-জঙ্গলে থাকা সহায়-সম্বলহারা রোহিঙ্গা মুসলিম নর-নারীর করুণ আহাজারি চলছে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়।
মিয়ানমারে ইতিহাসের ভয়াবহতম মুসলিম নির্যাতন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ ফুঁসে উঠেছে। হেফাজতে ইসলামসহ বাংলাদেশের ইসলামী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ এ বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন কক্সবাজার অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সরকারি বাধায় তা প- হয়ে গেছে।
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও শুরু থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজপথে নামে। তারাও কক্সবাজারে মহাসমাবেশ এবং মিয়ানমার অভিমুখী লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে পিছু হটে। হেফাজতের তরফ থেকে বলা হয়, সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় তারা এসব কর্মসূচি থেকে সরে আসে। রাজপথের কর্মসূচি থেকে সরে গেলেও গোপনে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ শুরু করে হেফাজত।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আছাদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ থেকে শুরু করে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হাটহাজারীসহ উত্তর চট্টগ্রাম, পটিয়া, আনোয়ারা থেকে শুরু করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রাণ সামগ্রী জোগাড় করার খবর পাওয়া গেছে। হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিশীল ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাও সাহায্য-সহযোগিতা দিচ্ছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী, নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজত নেতাদের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নগদ অর্থ এবং ত্রাণ সামগ্রী তুলতে দায়িত্বও দেয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সামনে রেখে ব্যাপক ত্রাণ সামগ্রী জোগাড় করে। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ মানুষ অকাতরে নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য ত্রাণ সাহায্য দিলেও এসব সামগ্রী নির্যাতিতদের কাছে পৌঁছেনি।
যে উদ্দেশ্যে ত্রাণ সামগ্রী এবং আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা না গেলে এসব ত্রাণ কি করা হবে সে নিয়েও হেফাজতের কোন বক্তব্য নেই। এ পর্যন্ত কি পরিমাণ সাহায্য পাওয়া গেছে তার হিসাব-নিকাশও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান হেফাজতের নেতারা। তবে হেফাজতের নেতারা বলছেন, প্রশাসনের অসহযোগিতা এবং কোথাও প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। আবার কোন কোন নেতা বলেন, নীরবে তারা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন।
রাজধানী ঢাকার বহু মাদরাসা, মসজিদ থেকে হেফাজত সংশ্লিষ্ট আলেমরা টাকা পয়সা তুললেও তা বিলি করতে পারছেন না বলে জানা যায়। আলেমরা জামিয়া ইবরাহিমিয়া কর্তৃপক্ষ ১৭ লাখ টাকা জমা দিলেও জানেন না এ টাকা প্রকৃত মজলুম রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুরা পাবে কিনা। মিরপুর ও পুুরান ঢাকার অনেক মাদরাসা টাকা জমা করলেও হাটহাজারিতে পাঠাতে দ্বিধান্বিত, কেননা শাপলা ট্রাজেডি ও আগে পরের কোটি কোটি টাকা কারা কোন খাতে ব্যয় করছেন তা রাজধানীর হেফাজত নেতারাও জানেন না। হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যতম নেতা বলেন, ত্রাণের টাকা বিতরণ নিয়ে স্বচ্ছতার অভাবের কথা আমরাও শুনেছি। পুরান ঢাকা থেকে ২ কোটি টাকা তুলে একটি টিম চট্টগ্রাম এসে সামান্য কিছু ত্রাণ বিতরণ করে এবং অল্প কিছু সামগ্রী হাটহাজারি পৌঁছে দিয়ে ঢাকায় ফিরে যায়। বর্তমানে দাতারা ২ কোটি টাকার বিস্তারিত হিসাব চাইছেন বলে শুনেছি। সারাদেশের আলেম ওলামা ও হেফাজত নেতাকর্মীরা আল্লামা আহমদ শফীর দিকে তাকিয়ে আছেন। যুগশ্রেষ্ঠ এ ওলীকে সামনে রেখে কেউ অনিয়ম করুক তা ধর্মপ্রাণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। তারা অবিলম্বে ত্রাণ ও টাকা সংগ্রহ এবং বিতরণের হিসাব ও শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছে। সউদী আরব, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও তাদের নানা সময়ে প্রেরিত দান ও চাঁদা যথাযথ ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন। হেফাজতের বিগত ৩/৪ বছরের প্রাপ্ত টাকা পয়সার হিসাবের শ্বেতপত্র প্রকাশ এখন সময়ের দাবি।
এ প্রসঙ্গে হেফাজত আমীরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ব্যাপকহারে ত্রাণ সামগ্রী জোগাড় করা হয়েছে। হেফাজতের আমীর হাটহাজারী মাদরাসাসহ কয়েকটি মাদরাসার দায়িত্বশীলদের এসব সামগ্রী সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার কাপড়-চোপড় ও শুকনা খাবার কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ ট্রাক ত্রাণ উখিয়া ও টেকনাফে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের বাধার কারণে পুরোদমে এসব সামগ্রী বিতরণ করা যাচ্ছে না।
এ পর্যন্ত কি পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা কিংবা ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেছে তার হিসাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ত্রাণ বিতরণ স্বাভাবিকভাবে করা যাচ্ছে না সেহেতু আপাতত নগদ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হেফাজতের আমীর।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চাঁদা ও ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। মানুষ অকাতরে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। এসব সাহায্য রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে এবং বাকি ত্রাণ সামগ্রীও যথাসময়ে বিতরণ করা হবে। চাঁদা এবং ত্রাণ সামগ্রী তোলার দায়িত্বে অনেকে নিয়োজিত আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে হিসাব চূড়ান্ত হয়নি।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে প্রশাসনের সহযোগিতা মিলছে না অভিযোগ করে বলেন, এরপরও নীরবে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণ নিয়ে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।