তৃতীয় মেয়াদে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করে কঠোর কোভিড নীতিতে শিথিলতা এনেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, যা মূলত জনগণের আসল উদ্বেগের চেয়ে তার ক্ষমতার স্থায়িত্ব পাকাপোক্ত করার একটি ব্যাপক কৌশলগত পদক্ষেপ।
কঠোর শূন্য কোভিড নীতি নিয়ে জনগণের বিক্ষোভের মুখে ওই নীতি থেকে সরে আসেন তিনি। তবে কোভিড উপসর্গ কিংবা উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন, ভ্রমণের জন্য বাধ্যতামূলক কোভিড টেস্টের মতো কঠোর সব কালাকানুন শিথিল ব্যাপক জনঅসন্তোষের শক্তিশালী প্রভাব।
সাংহাই ও অন্যান্য প্রধান শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য অন্যতম পরীক্ষা ছিল। চীনা কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিক্ষোভ দূর্লভ। এর মানে হলো চীনা জনগণ চুপচাপ থাকার পরিবর্তে সরকারের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের বিরুদ্ধাচারণের পথে হাঁটছে।
গত ২৪ নভেম্বর চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু ও অনেকে আহত হলে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার জন্য সরকারের কঠোর কোভিড নীতিকে দায়ী করে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে চীনের বিভিন্ন শহরে। জনগণের অভিযোগ ছিল, কোভিড বিধিনিষেধের কারণেই ঘরে বন্দি ছিলেন মানুষ। আগুন লাগার সময় তারা বের হয়ে আসতে পারেনি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসও কোভিড বিধিনিষেধের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে এবং কার্যক্রম বিলম্বে শুরু করে।
আগুন লাগার ওই ঘটনা সরকারের কঠোর কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে দেয়। ঘটনার পরদিন শতশত মানুষ উরুমকির রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। তারা শি জিনপিং ও সিসিপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভ থেকে সরকারের ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ জানায়। তারা সরকারের পদত্যাগ ও কোভিড নীতি শিথিলের দাবি তুলে সোচ্চার হয়।
বেইজিং ও অন্যান্য শহরে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের প্রতিরোধ মোকাবেলা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়ি রাখার খোলা একটি জায়গায় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘
লকডাউন শেষ করুন’। ২৭ নভেম্বর সাংহাইয়ে সবথেকে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। শিনজিয়াংয়ে নিহতদের স্মরণে সেদিন সাংহাইয়ের বাসিন্দারা সড়কে ফুল, মোমবাতি নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা ‘উরুমকির জন্য
লকডাউন প্রত্যাহার করুন, শিনজিয়াংয়ের জন্য
লকডাউন প্রত্যাহার করুন’ বলে স্লোগান দেন।
ওই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ব্যারিকেড বসায়, অনেককে আটক করে। কিন্তু আরও বেশি বিক্ষোভকারী সমবেত হয়ে চীনের জাতীয় সংগীত গান রাস্তায়। তারা স্লোগান দেন, ‘জনগণের পুলিশ জনগণের জন্য, আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দাও, মানুষ দীর্ঘজীবী হও’। পরবর্তীতে গোটা চীনে ওই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।