চীনের তৈরি
করোনা টিকাগুলোর কার্যাকারিতায় বিপত্তি দেখা দেওয়ায় দেশটিতে
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। টিকা কূটনীতিতে
করোনা টিকা দিয়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা দেশটি এগিয়েও ছিল কিছুটা। কিন্তু এখন টিকার কার্যকারিতা বিষয়টি সামনে চলে আসায় হিতে বিপরীত হযেছে দেশটির জন্য। দেশটির স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফাঁস হওয়া এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে তিব্বেতপ্রেস।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান সিটিতে নভেল
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই ভাইরাসের সংক্রমিত হলে তীব্র জ্বর, কাশি ও অবসাদ দেখা দেয় এবং এতে মৃত্যুও হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এই মহামারিতে ৬৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে যা মহামারিটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিতে পরিণত করে।
করোনা মহামারি দেখা দিলে ডজনখানে টিকা উদ্ভাবনের গবেষণায় ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা, করপোরেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কোটি কোটি টাকা ঢালে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৪ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনকে তার উদ্ভাবিত ক্যানসিনো টিকা সামরিক ব্যক্তি, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা পেশাদারদের জরুরি ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেয়। যদিও তখনো টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়নি।
এরপর চীনে আরও দুটি
করোনা টিকা উদ্ভাবিত হয়। একটি বেইজিং ভিত্তিক বায়ো-ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট কোম্পানির সিনোফার্মা এবং অন্যটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেকের সিনোভ্যাক। পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী জরুরি ব্যবহারের জন্য চীনের এই দুই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এ ক্ষেত্রে দেশগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনক্রমে ব্যবহার করতে বলা হয়। আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, মিসর, মরোক্কো, পাকিস্তান, পেরু এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬০ হাজার মানুষের ওপর টিকাগুলোর ট্রায়াল চালায় চীন।
চীন জানায়, ২০২১ সালে চীন তাদের নাগরিকদের মাঝে ২ কোটি ৪০ লাখ ডোজ এবং প্রায এক কোটি ৩০ লাখ ডোজ বিশ্বব্যাপী বিতরণ করে। সিনোফার্মার দাবি, ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কোম্পানিটি সাড়ে তিন কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করছে। চীনের এ টিকাগুলো বেশিরভাগই আমদানি করেছে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, ফিলিপাইন্স, মরোক্কো, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, চিলি, মেক্সিকো ও বাংলাদেশ।
তবে ২০২২ সালে দেশটির হেবেই প্রদেশের বাওডিং শহরের লাইশুই কাউন্টি কমিনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের টিকা নেওয়া লোকজনের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, জ্বর , ডায়েরিয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে অনেকের। পরে প্রদেশটির নেতারা এই টিকার ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে জোর দিতে বলেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, চীনের তৈরি টিকা নেওয়ার পরও স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ৪৭ দিন
কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ফাঁস হওয়া নথিগুলিকে ‘অতিরিক্ত জরুরি এবং জনসাধারণের কাছে প্রকাশ না করার’ লেবেল লাগানো ছিল।
এই কম কার্যকারিতাই চীনের শূন্য-কোভিড নীতির পথ প্রশস্ত করেছে। যদিও সম্প্রতি বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে দেশটি। পরে দেখা গেছে দেশব্যাপী
করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে, টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেওয়ার পরও
করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
চীনে হঠাৎ করে
করোনার নতুন ঢেউ টিকার কম কার্যকারিতার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগও তৈরি করেছে। বিশেষ করে যেসব দেশে চীন টিকা সরবরাহ করেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে চীন মর্ডানা ও ফাইজারের মতো আন্তর্জাতিক টিকা ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করেছিল এবং নিজ দেশের টিকার প্রচার করেছিল। তুরস্ক চীনের টিকা আমদানি করা প্রথমদিকের দেশগুলোর একটি। টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর নিজেরাই কার্যকারিতা যাচাই করছে দেশটি। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল প্রাথমিকভাবে চীনের টিকা ৯৭ শতাংশ এবং ৭৮ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছিল। পরে ২০২১ সালে উভয় দেশ বলেছিল কার্যকারিতা যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ ও৫০.৪ শতাংশ। শুধু তাই নয় টিকা প্রয়োগে বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে উভয় দেশই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বৃহৎ অর্থনীতি এবং বিশ্ব কূটনীতিতে চীনের গুরুত্ব অনুযায়ী দেশটির করোনা টিতা আধিপত্য বিস্তার করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে টিকার অকার্যকর টিকার কারণে উল্টো হলো।