Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মন্দার জেরে ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে দাঙ্গার আশঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

সার্বিক দিক বিবেচনায় গত দশকে ইউরোপের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশ শান্ত ছিল যুক্তরাজ্য। তবে ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের পর থেকেই দেশটিতে শুরু হয় আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা। ২০২২ সালে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাজ্যসহ পুরো ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সেই সঙ্গে দেখা দেয় জ্বালানি সংকট, বেড়ে যায় জীবনযাত্রার ব্যয়। বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য তথা ব্রিটেনের সংকট আরও ঘনীভূত হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রিটিশ নাগরিক বলছেন, দেশটিতে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের উর্ধ্বগতি শুরু হওয়ার খুব বেশিদিন বাকি নেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকের দাবি, আগামী বছর যুক্তরাজ্যে নাগরিক নৈরাজ্য বা দাঙ্গা দেখা দিতে পারে। এর আগেও মন্দার কারণে ব্রিটিশ নাগরিকরা সরকারবিরোধী দাঙ্গায় জড়িয়েছিলেন। অর্ধ শতাব্দী আগে ইপি থম্পসন নামের এক ইতিহাসবিদ বলেছিলেন, মানুষ সাধারণত দুটি কারণে দাঙ্গা করে। প্রথমত, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে নামেন। আর তাতে বাধা দিলে তারা ভাবতে থাকেন, সরকার তাদের সঙ্গে অসহনীয় আচরণ করছে। পরবর্তীতে তারা আরও উগ্র হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয়ত, অনেকে ভাবেন, দাঙ্গার মাধ্যমে তারা সমস্যার সমাধান ঘটাতে সক্ষম হবেন। যুক্তরাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় কারণেই দাঙ্গা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করছেন অনেকে। অনেকে আবার বলছেন, কতিপয় সুবিধাবাদী ও অপরাধপ্রবণ মানুষ মনে করেন, দাঙ্গায় যোগদানের সুযোগে যদি দামি জিনিস লুট করা যায়, তাহলে বেশ লাভবান হওয়া যাবে। ওই জিনিস বিক্রির টাকা দিয়ে বেশকিছুদিন চলা যাবে। মানুষের এমন মনোভাবও দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে হওয়া দাঙ্গার কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণকারী অপরাধবিদরা দেখতে পান, দাঙ্গা চলাকালে শহরগুলোতে হঠাৎ করেই নিম্ন-অপরাধ ভারসাম্য থেকে উচ্চ-অপরাধ ভারসাম্যের সৃষ্টি হয়। কারণ সেময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লুটপাট ও জ্বালাও-পোড়াও প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। তবে পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে দাঙ্গায় অংশ নেওয়া হাজার হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালত তাদের কঠোর শাস্তি দেন। এদিকে, নাজুক এ সময়ে লন্ডনকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেব বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ অতীতে সেখান থেকেই সারাদেশে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাস রয়েছ। তাছাড়া, গত কয়েক দশকে মেট্রোপলিটন পুলিশের ও লন্ডনবাসীর মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে শহরটির অধিকাংশ বাসিন্দা মনে করেন, পুলিশ তাদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। সম্প্রতি শহরটির মেয়রের কার্যালয় পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে লন্ডনের ৭৭ শতাংশ মানুষ পুলিশকে তাদের নির্ভরতার জায়গা বলে মনে করতেন। কিন্তু ২০২২ সালে সে সংখ্যা ৫৭ শতাংশে নেমে গেছে। অর্থাৎ পুলিশের ওপর লন্ডনের জনগণ ব্যাপকহারে আস্থা হারাচ্ছেন। তবে কেন পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের এমন অবনতি ঘটেছে, তা নিশ্চিত করে বলা সুযোগ নেই। ধারণা করা হয়, ২০১৮ সালের শুরুতে মেট্রোপলিটন পুলিশের পুনর্গঠনের পর এ অবনতির ঘটতে শুরু করে। তাছাড়া, ২০২১ সালে লন্ডনে লকডাউন চলাকালে বাইরে বের হওয়ায় সারাহ এভারার্ড নামের ৩৩ বছর বয়সী এক যুবতিকে আটক করেন ওয়েন কুজেনস নামের এক মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে ওই যুবতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এভারার্ডকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে কুজেনসকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আদালত। ধারণা করা হয়, এ ঘটনাটিও পুলিশ প্রশাসন ও লন্ডনের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দুরত্ব তৈরির অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকদের অযৌক্তিভাবে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেসাবাদের প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩ লাখ মানুষকে এ ধরনের জিজ্ঞেসাবাদের মুখে পড়তে হয়। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৭ লাখ হয়। লন্ডনে এ ধরনের অযৌক্তিক জিজ্ঞেসাবাদের মুখে পড়া ১০০ জনের মধ্যে বড়জোর ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর তারা অধিকাংশই মাদকব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন। পুরো যুক্তরাজ্যে এ ধরনের পুলিশি অনুসন্ধানের মধ্যে তিন-পঞ্চমাংশই ঘটে লন্ডনে। এমন আচরণে এখানকার বাসিন্দারা পুলিশ প্রশাসনের ওপর চরমভাবে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এক দশক ধরে যুক্তরাজ্যে কোনো দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। তবে আগামী বছর অর্থনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি আবারও দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র করতে পারেন। দ্য ইকোনমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ