দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর পাকিস্তানের মাটিতে ফিরেতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।২০০৯ সালে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশটিতে সফর করেনি বড় কোন দল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তৎপর পাল্টেছে। গত এক বছরের মধ্যে পাকিস্তান সফর করেছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মত দল।
তবে দেশের মাটিতে ক্রিকেট খেললেও পাকিস্তান ফেরেনি তাদের পুরনো রূপে।নিজেদের মাটিতে একসময় অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তান দুই দেশের বিপক্ষেই হেরেছে টেস্ট সিরিজ। এর মধ্যে সত্য সমাপ্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ।
ক্রমাগত বাজে পারফরম্যান্স এর কারণে পাকিস্তান দলকে নিয়ে সমালোচনা ধেয়ে আসছিল চারদিক থেকে।পিসিবি প্রধান,নির্বাচক,টিম ম্যান্যজম্যান্ট,ক্যাপ্টেন,খেলোয়াড়,পিচ কেউ রেহাই পাননি সমালোচনা থেকে।
সমর্থক ও সাবেক খেলোয়াড় ও বিশ্লেষকরা পুরো দলকে ঢেলে সাজার আহ্বান জানিয়েছিলেন।সেই পরামর্শ মেনেই পিসিবিতে এসেছে বড় ধরনের রদবল। পৃথিবীর চেয়ারম্যান নির্বাচকসহ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক বড় কর্মকর্তাকেই।
তবে সমালোচনা হলেও ক্যাপ্টেন হিসেবে এখনো বাবর আজমের উপরই আস্তা রাখছে পাকিস্তান। আর মাঠে সেই আস্থার তার প্রতিদান দারুণ ভাবেই দিলেন এই তারকা ব্যাটসম্যান।
দুই যুগ প্রথম পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করলে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি। তার হার না মানা ১৬১ ও প্রায় চার বছর সাদা পোশাকে ফেরা সরফরাজের ৮৬ রানের উপর ভর এগিয়ে থেকে প্রথম দিন শেষ করেছে পাকিস্তান।
প্রথম দিন শেষ পাকিস্তানের দলীয় স্কোর ৫ উইকেটে ৩১৭ রান। শেষ বেলায় সরফরাজ ফিরলেও অধিনায়ক বাবর অপরাজিত আছেন ১৬১ রানে, তাঁর সঙ্গী আগা সালমান।কিউইদের হয়ে দুই উইকেট শিকার করেছেন ব্রেসওয়েল।
করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেওয়া পাকিস্তানের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই তারা হারায় দুই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল-হকের সঙ্গে শান মাসুদকেও।৪৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে টেনে তোলার চেষ্ঠা করেন ক্যাপ্টেন বাবর আজম।পাচ নম্বরে নামা দলের তরুণ তুর্কি সৌদ শাকিলকে নিউও চতুর্থ উইকেট গড়েন ৬২ রানের জুটি।তবে দলীয় ১১০ রানের মাথায় অধিনায়ক টিম সাউদির বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়েন ২২ রান করা শাকিল।ফের চাপে পড়ে পাকিস্তান।
তবে এরপর রিজওয়ানের জায়াগায় দলে ফেরা সরফরাজ ক্যাপ্টেন বাবরকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ।কিউদের আর কোন সুযোগ না দিয়ে দুইজনে মিলে গড়েন বিশাল এক জুটি। ঘন্টার পর ঘন্টা বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে সচল রাখেন রানের চাকা,শুরুর চাপ সামলে দলকে নিয়ে যান চালকের আসনে।পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে যোগ করেন ১৯৬ রান।
ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস- ক্রিকেট মাঠে প্রতিষ্ঠিত এই উক্তিটি ভালোভাবেই টের পাচ্ছে কিউইরা।১২ রানে জীবন পাওয়া বাবর আজম যে দিনশেষ করেছেন ১৬১ রানে অপারজিত থেকে।
২০১৯ সালের জানুয়ারির পর আবার টেস্ট খেলতে নামা সরফরাজ প্রত্যাবর্তনের দারুন এক গল্প প্রায় লিখে ফেলেছিলেন। শেষ মুহূর্তে তালগোল পাকিয়ে তা আর পূর্ণতা পায়নি। শুরুতে একটু নড়বড়ে থাকা সাবেক এই পাকিস্তান দলপতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছিলেন ইনিংসের। স্মরণীয় এক সেঞ্চুরির পথেই এগোচ্ছিলেন। শেষ বেলায় এজাজের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে মিচেলের ভালো ক্যাচে পরিণত হয়ে তাঁকে থামতে হয় সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরেই। বাবরের মোটামুটি সহজ ক্যাচ ফেললেও এ ক্যাচটি নিচু হয়ে ভালোভাবেই নেন মিচেল। বাবরের সঙ্গে তাঁর জুটি থামে ১৯৬ রানেই। দ্বিতীয় নতুন বল আসার সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে নেন টিম সাউদি, সরফরাজের উইকেটটিও আসে তাতেই।
দিনের শেষ ওভারে বাবরকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার আলিম দার। লেগ স্টাম্প থেকে টার্ন করা বলটা বাবরের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত করে পেছনের পায়ে। রিভিউ নেওয়ার সময় তেমন আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি তাঁকে, তবে বলটা স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত বলে দেখায় হকআই। পাকিস্তান অধিনায়ক দিন শেষ করেন অপরাজিত থেকেই। এখন পর্যন্ত ইনিংসে ১৫টি চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মেরেছেন বাবর।