গ্রিসের এথেন্সে চীন পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট রয়েছে। এই ইউনিট চীন থেকে আসা ভিন্নমতাবলম্বীদের খুঁজে বের করে, হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল করে দেশে ফেরায় এবং তাদের রাজনৈতিক মতামতের জন্য শাস্তি দেয়। গ্রিসের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডাইরেক্টাস এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এথেন্সের কেন্দ্রস্থল এজেসিলাউ স্ট্রিটের একটি ভবনে চীনা পুলিশ বিভাগের এই শাখাটি অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে ভবনটি চীনা প্রবাসী নাগরিকদের জন্য গ্রিস সরকারের অনুমিত পরিষেবা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া কথা। কিন্তু এই ভবনেই ভিন্নমতাবলম্বীদের ভয় দেখানো হয়, অপহরণ করা হয় এবং জোরপূর্বক চীনে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রিস পুলিশ তদন্ত করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও চীনা পুলিশের এমন বিশেষ ইউনিট কাজ করছে।
অনুসন্ধানী প্রকাশনী আইজে-রিপোর্টিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনের এমন ধরনের পুলিশ স্টেশনের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধমে প্রকাশিত হয়েছে। এই নিয়ে ব্যাপক হইচই হয়েছে এবং বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি আইজে-রিপোর্টিকা বিভিন্ন দেশের চীনা পুলিশ স্টেশনের ঠিকানাও প্রকাশ করেছে, যেগুলোতে ভিন্ন মত দমন করা হয় এবং স্টেশনগুলো গুপ্তচরবৃ্ত্তি সম্পর্কিত কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছে।
মাদ্রিদ-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সেফগার্ড ডিফেন্ডারসের সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রবাসী নাগরিকদের অপরাধী হিসেবে ধরার জন্য একটি অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছে।
নিজেদের দেশের অপরাধী অন্য কোনো দেশে থাকলে সাধারণত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন- ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হয়। কিংবা কূটনৈতিকভাবে দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান শহরগুলোতে কয়েক ডজন পুলিশ সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করেছে। এখন এসব সার্ভিস স্টেশন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।
এদিকে চীনের এই ধরনের পুলিশ স্টেশনের নানান কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারকে হতবাক করেছে। এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও কানাডা যৌথভাবে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।
বেইজিংয়ের সমর্থন নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা স্থানীয় (স্বাগতিক) সরকারকে না জানিয়ে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে—এমন অভিযোগ চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য অস্বীকার করেছে। বেইজিং দাবি করেছে, পুলিশের ওই যোগাযোগের স্থানগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘বিদেশে চীনা পরিষেবা কেন্দ্র’, যা প্রবাসীদের মাধ্যমে পরিচালিত এবং প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করার জন্য সেগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
আইজে-রিপোর্টিকার মতে, চীনের ওই ধরনের পুলিশ স্টেশনগুলি দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার অনেক দেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।