ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে (ইপি) একটি কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর বিশ্ববাসী বিস্মিত হয়েছে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে কাতারের অবৈধ লবিং কার্যক্রম জড়িত। ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি কূটনৈতিক সংস্থা যা প্রতিকূল শাসন বা মানবাধিকার লঙ্ঘন বা গণতন্ত্রবিরোধী আচরেণে জড়িতদের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিশেষ পরিচিত। কিন্তু ওই লবিং কার্যক্রমের ঘটনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে বড় ধরনের সংকটকে এড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ৯ ডিসেম্বর বেলজিয়ামের পুলিশ ইউরোপোলের সহায়তায় ব্রাসেলস ও এর আশপাশের ১৬টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অন্তত চারজনকে গ্রেপ্তার করে। অপরাধী সংগঠন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত একটি তদন্তের অংশ হিসেবে ওই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নগদ ছয় লাখ ইউরো জব্দ করা হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কেন্দ্রস্থলে ব্যাপক দুর্নীতি ও লবিং সংক্রান্ত ঘটনায় ছয় মাস তদন্তের পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। খবর দ্য সিঙ্গাপুর পোস্টের।
গ্রেপ্তারকৃদের মধ্যে ইপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইভা কাইলিও রয়েছেন। তিনি ইপির ১৪ জন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন। তার বিরুদ্ধে কাতারে স্টেডিয়াম নির্মাণ শ্রমিকদের অবস্থার বিষয়ে গভীর আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও— ‘শ্রমিক অধিকারে অগ্রগামী' হিসেবে কাতারের ভূমিকাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তার ক্রমাগত ইতিবাচক প্রশংসা এবং তার দেখানো পথেই ফুটবল বিশ্বকাপ কাতারে গেছে। এছাড়া কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইপিতে তার পরস্পরবিরোধী মন্তব্যও অনেকের নজর কেড়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে কাতার কাইলির ওপর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ইইউ রাজনীতিবিদদের একটি প্রতিনিধি দলের কাতার সফর বাতিল করে। এর পরিবর্তে, তারা কাতারে কাইলিকে একা ভ্রমণ করায়। এতে তিনি ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অধিকার এবং এই জাতীয় অন্যান্য বিষয়গুলির ওপর কাতারের পক্ষে মূল্যায়ন প্রদান করেন। এখন এই কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর প্রশ্ন করা উচিত ২০১০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২২ আয়োজক নির্ধারণে যে নিলাম হয়েছিল এবং যা কাতারকে দেওয়া হয়েছিল সেই নিলামেও কোনো প্রভাব ছিল কিনা তার।
কাইলির পার্টনার এবং কাতার ও মরক্কো সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে ইপির উপদেষ্টা ফ্রান্সেসকো জিওরগিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর তার পরিচালিত এনজিও ফাইট ইমপিউনিটিতে পুলিশ তদন্ত করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে কাজ করা এনজিওটির বিরুদ্ধেও কাতারকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ফাইট ইমপিউনিটির সঙ্গে জড়িত অপর এনজিও নো পিস উইদাউট জাস্টিসের (এনপিডব্লিউজে) মহাপরিচালক নিকোলো ফিগা-তালামানকাকেও কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর কি ইইউ কাতারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে, নাকি ইউরোপীয় দেশগুলির প্রধান গ্যাস সরবরাহকারী দেশ কাতারের কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে তাই এখন দেখার বিষয়। তবে এটি ইইউর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য অখণ্ডতা কেলেঙ্কারি। শুধু তাই নয়, এই কেলেঙ্কারির ঘটনা ইইউর বৈধতাকে খর্ব করেছে। কারণ সংস্থাটিকে মানবাধিকার সুরক্ষায় সেরা এবং অপরাধের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখা হতো।