নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলো না বে ওভালের সুখস্মৃতি। যদি খুব মোটা দাগে জিজ্ঞেস করা হয় কেন? প্রতিবারের মত আবারও উত্তর হবে হতশ্রী ফিল্ডিং! ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিবতো বলেই ফেললেন, ‘আমাদের বোলারদের হয়তো ১৩-১৪টি সুযোগ তৈরি করতে হয় ১০টি উইকেট নিতে, অন্যদের ক্ষেত্রে যেটা হয়তো অনেক সময় ৯টা সুযোগ তৈরি করলেই ১০টা হয়ে যায়!’
মিরপুরে গতকাল ম্যাচের প্রথম থেকেই মাঠে উপস্থিত ছিল তিন হাজার দর্শক, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট সংস্কৃতির জন্য এটা বিরল। জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ১০০ রান, বাংলাদেশের ৬ উইকেট। এমন সমীকরণে চতুর্থ দিনের প্রথম ঘণ্টা নিজেদের নামে লিখেছিল স্বাগতিকরা। স্পিন ঘূর্ণিতে সফরকারীদের ৩ উইকেট তুলে নিয়েও পরের সমীকরণ মেলাতে পারেনি। শ্রেয়াস আইয়ার ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাটে আবারও ভারতের সঙ্গে আফসোসে পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। ৩ উইকেটের জয়ে ভারত সিরিজ জিতে নিল ২-০ ব্যবধানে।
সফরকারীরা ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারানো দল আরও কোনো উইকেটই হারাল না শ্রেয়াস ও অশ্বিনের দৃঢ়তায়। অষ্টম উইকেটে ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নিজেদের রাঙালেন তারা রোমাঞ্চকর জয়ে। অথচ এই জুটি থামতে পারত শুরুতে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ১ রানে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন অশ্বিন। কিন্তু বলে হাত ছোঁয়ালেও তা মুঠোবন্দি করতে পারেননি মুমিনুল। কে জানত, শুধু বল নয়, মাটিতে পড়ে গেল তখনও বাংলাদেশের সম্ভাবনাটুকুও! সেই অশ্বিন শেষ পর্যন্ত খেলেন ৪২ রানের ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ইনিংস। শ্রেয়াস অপরাজিত থেকে যান ২৯ রানে।
অথচ এর আগে মনে হচ্ছিল বড় দিনের সকালটা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় একটি দিন হয়ে আসবে। মেহেদী মিরাজের করা দিনের তৃতীয় বলেই হয় প্রথম রিভিউ। ব্যাট-প্যাড একসঙ্গে রেখে ডিফেন্ড করতে গিয়েছিলেন নাইটওয়াচম্যান জয়দেব উনাদকাট। ব্যাটের আগে প্যাডেই লেগেছিল বল, তবে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যায় তরুন এই ব্যাটার। পরের ওভারেই অবশ্য সাকিবকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। মাঠে আসেন সবচেয়ে ভয়ংকর সুন্দর ব্যাটার ঋষভ পন্ত। তার দিকেই তাকিয়ে ছিল ভারত। সীমানার ওপর যান পাঁচজন ফিল্ডার। সাকিবকে রিভার্স সুইপ করে নিজের সহজাত খেলাও শুরু করেন পন্ত। কিন্তু এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের সঙ্গে লড়াইটা জেতেন মিরাজই। জোরের ওপর করা বলটিতে সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে গিয়েও মিস করে যান পান্ত। আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউনের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত রিভিউ না করার সিদ্ধান্ত নেন পন্ত।
পরের ওভারে এসে মিরাজ নেন ইনিংসে পঞ্চম উইকেটটি। এবার তার শিকার উইকেটে দারুণ মানিয়ে নেওয়া অক্ষর প্যাটেল। পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, তবে নিচু হওয়া বলটির নাগাল পাননি। অক্ষরের প্যাডে লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে।অবশেষে তাকে থামতে হয় ৩৪ রানেই। অক্ষর আউট হওয়ার সময়ও ভারত জয় থেকে ৭১ রান দূরে দাঁড়িয়ে!
জয় তখন ডাকছিল হাতছানি দিয়ে। মিরাজ পেয়ে যেতে পারতেন ষষ্ঠ উইকেটটিও, তবে মুমিনুলের সেই ক্যাচ মিস, সেই সঙ্গে ম্যাচটিও নয় কি? গতকাল এ পজিশনেই কোহলির দারুণ একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন মিনি। সেই ফিল্ডার যখন অশ্বিনের ক্যাচ পড়ার সময় শর্ট মিড উইকেটে থাকা সাকিব আফসোসে প্রায় শুয়েই পড়েন! সেই ছবিটা একটা প্রতীকী বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। এরপর যে অশ্বিন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের আশাকে শুইয়ে দিলেন মাটিতে। এই স্পিন অলরাউন্ডার তখন ব্যাটিং করছিলেন ১ রানে, ভারতের প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান। শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে সেই অশ্বিনের জুটি এরপর অবিচ্ছিন্ন থাকে প্রথম ঘণ্টায়।
দুই ডানহাতির বিপক্ষে কাজটা এরপর তুলনামূলক কঠিন হয়ে পড়ে মিরাজের, প্রথম পানি পানের বিরতির পরপরই স্কয়ার ড্রাইভে চার মারেন শ্রেয়াস, ৬৮ বলের মধ্যে ইনিংসে সেটি ছিল প্রথম বাউন্ডারি। সেই চারের পরই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় সফরকারীরা। খুব অদ্ভুত লাগলেও সত্যটি হচ্ছে এরপরই বল টার্ন করা বন্ধ হয়ে যায়। গামিনি সিলভার তৈরি করা পিচ বলে কথা। কখন তার কি আচরণ কি হবে সেটা অনুমান করা যে বড্ড কঠিন। ৪৩তম ওভারে দিনে প্রথমবারের মতো পেসার আনেন সাকিব, তবে খালেদের ওই ওভারে অশ্বিন মারেন দুটি চার- প্যাডের ওপর থেকে ক্লিপ করার পর ড্রাইভে। খালেদের পরের ওভারে ৫০ রান ছুঁয়ে ফেলেন অশ্বিন-আইয়ারের জুটি। খালেদকে সরিয়ে এরপর মিরাজকে আনেন সাকিব, কিন্তু প্রথম বলটি আলগা পেয়ে ওয়াইড লং দিয়ে ছক্কা মারেন অশ্বিন। এরপর জয় পেতে আর বেগ পেতে হয়নি তাদের।
বাংলাদেশ হেরেছে কিন্তু লড়াই হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। এই লড়াকু টাইগারদেরই দেখতে চায় সমর্থকরা। যারা টেস্ট হারার আগে হারে না। দেশে টেস্ট সংস্কৃতিটা দাঁড়িয়ে গেলে হয়তো আর সাকিবকে আক্ষেপ করে বলতে হবে না- ‘আমাদের বোলারদের ৪-৫টা সুযোগ বেশি তৈরি করতে হয় দশ উইকেট নিতে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।