Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের গণ ডিএনএ সংগ্রহের প্রতিক্রিয়া

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৩৭ পিএম
চীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে; সেটি হলো অবৈধভাবে সংখ্যালঘুদের ব্যাপক ডিএনএ সংগ্রহ। বিশেষ করে তিব্বতি, উইঘুর এবং কাজাখদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে। 
হিউম্যান জেনেটিক্স নামের একটি বিজ্ঞান ম্যাগাজিন এই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করেছে। যেখানে স্পষ্ট ছিল যে সমগ্র গবেষণা প্রক্রিয়া চালানোর সময় আহত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনো সম্মতি নেওয়া হয়নি।
কারোর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড বা অভিযোগ না থাকলে তার ডিএনএ চাওয়া অস্বাভাবিক; কিন্তু তিব্বতের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। 
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য যেটা ইঙ্গিত করছে, সেটা হলো ডিএনএ নমুনা দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ এবং ডিএনএ নমুনা পেতে পুলিশের জন্য কোনো বেআইনি আচরণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণের প্রয়োজন নেই। তিব্বতি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুরা স্পষ্টতই চীনের ডিএনএ পুলিশিং প্রোগ্রামের বিষয় ছিল।
যদিও এটি সুস্পষ্ট যে চীন শক্তিশালী এবং তাকে খুব কমই ধরাছোঁয়া হয়; তবে সাম্প্রতিক একটি চিঠিতে চীনের অবৈধভাবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের নিন্দা করে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন। আশা করা হচ্ছে, এটি পরিস্থিতির ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে।
বিশ্বের ১৫টি দেশের আইন প্রণেতাদের একটি দল তাদের সরকারকে চীনের রাষ্ট্র-সমর্থিত বিজিআই গ্রুপ এবং মার্কিন কোম্পানি থার্মো ফিশারের মতো কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি দেখতে এবং বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যেগুলো উইঘুর অঞ্চল, তিব্বত এবং চীনের অন্যান্য অংশে বায়োমেট্রিক নজরদারি পরিচালনা করার জন্য চীন সরকারকে প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো রিপোর্ট করেছে যে চীনের কমিউনিস্ট সরকার ২০১৬ সালের জুন থেকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতে একটি বিস্তৃত ডিএনএ সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করছে। এই প্রোগ্রামটি তিব্বতের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে মনে করা হয়, যার মধ্যে অনেক তরুণও রয়েছেন। তদন্ত অনুসারে, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুলিশ অন্তত একটি আমেরিকান করপোরেশন থার্মো ফিশারের কাছ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিং কিট পেয়েছে বলে জানা গেছে।
চীন ইস্যুতে গঠিত আন্তঃ-সংসদীয় জোটের সদস্যরা যারা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন এমইপি আনা ফটিগা, অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ক্লেয়ার চ্যান্ডলার, কানাডার এমপি আরিফ ভিরানি, আয়ারল্যান্ডের সিনেটর মাইকেল ম্যাকডোয়েল, নিউজিল্যান্ডের এমপি সাইমন ও’কনর এবং যুক্তরাজ্যের এমইপি লর্ড জেমস বেথেল। এই সংসদ সদস্যরা দাবি করেন যে তাদের সরকার বিজিআই গ্রুপ এবং থার্মো ফিশারের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করবে এবং পরিস্থিতির বাড়তি তদন্ত করবে।
নমুনা সংগ্রহের ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আইপিএসি ইউ সদস্য এনগিন এরোগ্লু বলেছেন, বেইজিংয়ের ব্যাপক পরিসরে ডিএনএ সংগ্রহ গোপনীয়তা এবং মানবাধিকারের অধিকারের সঙ্গে একটি অসহনীয় সংঘর্ষ তৈরি করে। তিনি জাতীয় এবং ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ডিএনএ সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত ব্যবসা সংশ্লিষ্ট যেকোনো লেনদেনের বিষয়টি দেখতে এবং বন্ধ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছেন। 
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, চীন সরকার তাদের অনুমতি ছাড়াই তিব্বতি প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু এবং এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।
এ বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটিজেন ল্যাব আবিষ্কার করেছে যে গত ছয় বছরে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনা পুলিশ ৯ লাখ ২০ হাজার থেকে ১০ লাখ ২০ হাজার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে থাকতে পারে। এ চিত্রটি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সামগ্রিক জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ এবং এক তৃতীয়াংশের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করে। 
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের অনুসন্ধানে,  এটাও ব্যাপকভাবে প্রমাণ করেছে যে কীভাবে চীনা কর্মকর্তারা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের ডিএনএ-র একটি পদ্ধতিগত সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা মা-বাবার অজান্তে বা অনুমতি ছাড়াই কৌশলে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ডিএনএ সংগ্রহ করছে। সূত্র : জিও-পলিটিকো।


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ