Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

২০২৩ সালে যুদ্ধ লাগতে পারে আর কোন কোন দেশে?

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

এশিয়ায় আরেকটি স্নায়ু যুদ্ধ চলছে কি না তা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক। ২০২৩ সালে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাই দেখিয়ে দেবে, এ অঞ্চলে প্রকৃত স্নায়ুযুদ্ধ কখনোই শেষ হয়নি। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন ইউরোপে সে বিষয়টি প্রমাণ করে দিয়েছে, তেমনি আসন্ন বছরে এশিয়ায় উদারনীতি ও স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি দেখা যেতে পারে। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। তবে এর শিকড় রয়েছে কয়েক দশক পেছনে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে। ১৯৪৫ সালে জাপানের পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রকে একটি এশীয় পরাশক্তিতে পরিণত করেছিল। এটি পরাজিত প্রতিপক্ষের এলাকায় সামরিক শক্তি বিস্তার এবং এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দেয় মার্কিনিদের। এ ঘটনা অবশ্য জাপানে পশ্চিমাদের একটি গণতান্ত্রিক ঘাঁটিও তৈরি করেছিল। এখন নতুনত্ব হলো, দ্বিতীয় পরাশক্তি চীন এশিয়ায় আধিপত্যের জন্য লড়ছে। তবে বর্তমান উত্তেজনার সঙ্গে পূর্ব এশিয়ায় যুদ্ধ-পরবর্তী অশান্তিরও যোগসূত্র রয়েছে। ২০২৩ সালে হিমালয় সংলগ্ন একটি বিতর্কিত সীমানা ঘিরে আবারও সংঘাত শুরু হতে পারে। চীন-ভারতের মধ্যে এই বিরোধ চলছে সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ তাইওয়ান। বেইজিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে এই দ্বীপটি হলো ১৯৪০র দশকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গৃহযুদ্ধ জয়ের শেষ অসমাপ্ত অংশ। সেসময় পরাজিত জাতীয়তাবাদীরা তাইওয়ানে পালিয়ে যান এবং তখন থেকেই তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তাইওয়ান পুনরুদ্ধার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কাছে ‘পবিত্র লক্ষ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আত্মবিশ্বাসী চীনের কাছে তাইওয়ান হলো পূর্ব এশিয়া জুড়ে এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তারের মূল চাবিকাঠি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চীনের শক্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি তাইওয়ানের ওপর হামলার মনোভাবও বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেশ কয়েকবার বলেছেন, তাইওয়ানকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের এই নীতিগত পরিবর্তনে অনেকে আশঙ্কা করছেন, এটি চীনকে দেরি করার পরিবর্তে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করতে পারে। এরপরও ২০২৩ সালে তাইওয়ানের আশপাশে হয়তো উত্তেজনা বাড়বে, তবে তা সংঘর্ষে রূপ নেওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই। একটি বিষয় নিশ্চিত, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভøালাদিমির পুতিনের মতো বেপরোয়া জুয়াড়ি নন। রাশিয়া যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অবরোধে পঙ্গু হচ্ছে, চীনকে এগুলোর প্রতিরোধী প্রমাণ করতে সময়ের প্রয়োজন। সেই মোতাবেক আগামী বছর দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রও ও তার এশীয় মিত্রদের ক্ষমতা পরীক্ষা করবে বেইজিং। ফলে তাইওয়ানের তুলনায় জাপানের বিতর্কিত সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের আশপাশে তারা বেশি সংকট সৃষ্টি করতে পারে। রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফের ক্ষমতা দখল করা সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও অযোগ্যতা মিয়ানমারে বিস্তৃত সংঘাতকে আরও ইন্ধন দেবে। এশিয়ায় আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের আশঙ্কা ছড়াচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ২০২২ সালে দেশটির নেতা কিম জং উন হুমকি দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া আক্রমণের হুমকি অনুভব করলেই পারমাণবিক হামলা চালাবে। এ বছর তারা একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। ২০২৩ সালেও তারা এই ধারা অব্যাহত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে এশিয়ায় হিমালয় সংলগ্ন একটি বিতর্কিত সীমানা ঘিরে আবারও সংঘাত শুরু হতে পারে। চীন-ভারতের মধ্যে এই বিরোধ চলছে সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে। ১৯৬২ সালে তাদের মধ্যে একটি সীমান্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যাতে হেরে যায় ভারত। ২০২০ সালে আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২৪ সৈন্য নিহত হয়। এখন কোনো পক্ষই লড়াইয়ের জন্য উসখুস করছে না। শি জিনপিং তাইওয়ানের দিকে মনোনিবেশ করতে চান, আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানেন, এই মুহূর্তে পাহাড়ে সামরিক শক্তিতে তারাই এগিয়ে। তবে উভয় পাশের নতুন রাস্তাগুলো বাফার জোনের ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া দুই নেতার মধ্যে এক সময়ের উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্কও তিক্ত হয়ে উঠেছে। এগুলো হিমালয়ে আরেকটি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে সংঘাত চলতেই থাকবে। যুদ্ধোত্তর স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি এবং এর অনেক জাতিগোষ্ঠী কখনোই পুরোপুরি শান্তিতে ছিল না। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রক্তক্ষয়ী অভ্যুানের মাধ্যমে ফের ক্ষমতা দখল করা সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও অযোগ্যতা মিয়ানমারে বিস্তৃত সংঘাতকে আরও ইন্ধন দেবে। দেশটিতে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থিরা জান্তার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। কিন্তু জেনারেলদের হাতে রয়েছে বন্দুক, পাচ্ছে চীনের সমর্থনও। কেউই চায় না বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার আরেকটি ককপিট হোক মিয়ানমার। তা সত্ত্বেও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সহিংসতার দাবানল বছরের পর বছর জ্বলতে পারে।



 

Show all comments
  • Md Anwarul Anwarul ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
    এমনিতেই এক যুদ্ধের খরচ দিতে জীবন ঝালা পালা আবার নতুন করে যুদ্ধ লাগলে তার খরচ কিভাবে দিব,,
    Total Reply(0) Reply
  • Sanjoy Barai Sanjoy ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
    নিশ্চিত বাংলাদেশ৷ vs মিয়ানমার।
    Total Reply(0) Reply
  • Tajul Islam ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
    নিজের দেশের ব‍্যাপারে ভাবুন অন্য দেশ নিয়ে পরে ভাবুন।গত 14 ডিসেম্বর শাহিনবাগে মায়ের কান্না নামক ভূঁইফো সংঘটনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উপর হামলা পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে প্রতিবাদ এবং রাশিয়া রাষ্ট্রদূতের পাল্টা প্রতিবাদ বাংলাদেশের ব‍্যাপারে কিসের লক্ষণ।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্যের পথে অটল ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 1
    এবার যুদ্ধ হবে - আওয়ামী লীগের সাথে ১৮কোটি মানুষের
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Hakim ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
    বড়‌দের ব্যবসা ভাল হ‌বে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ