মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৯ বছর নেপালের জেলে থাকার পরে শুক্রবার মুক্তি পেলেন আদতে ফরাসী নাগরিক চার্লস শোভরাজ। মুক্তির পরে তাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট। চার্লস শোভরাজের বিরুদ্ধে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে অন্তত ২০জনকে খুন করার অভিযোগ আছে।
১৯৮০ সালে প্রকাশিত রিচার্ড নেভিল ও জুলি ক্লার্কের লেখা চার্লস শোভরাজের জীবনী 'দা লাইফ এন্ড ক্রাইমস অফ চার্লস শোভরাজ' বইতে এই সিরিয়াল কিলারের অপরাধগুলির বিস্তারিত লেখা হয়েছে। বিবিসি ও নেটফ্লিক্স ২০২১ সালে চার্লস শোভরাজকে নিয়ে একটি সিরিজ করে 'দা সার্পেন্টোইন' নামে। তার শিকারদের মৃতদেহগুলির মধ্যে অনেককেই বিকিনি পড়া অবস্থায় পাওয়া যায়, তাই তার আরেক নাম বিকিনি কিলার।
সুদর্শন এই পুরুষ মূলত হত্যা করতেন পশ্চিমা পর্যটকদের, যারা সস্তায় বিশ্ব ভ্রমণ করে বেরায়, সেই সব 'ব্যাকপ্যাকার'দের। তাদের কাছে থাকা অর্থ তো হাতিয়ে নিতেনই তিনি, আর সঙ্গে নিহতদের পাসপোর্টগুলোও সংগ্রহ করতেন। খুন করার পরে তার শিকারদের পাসপোর্ট ব্যবহার করেই পরিচয় গোপন করে তিনি অন্য দেশে হাজির হতেন, নতুন শিকারের খোঁজে।
ভারতে বেড়াতে আসা একদল ফরাসী ছাত্রছাত্রীকে মাদক খাইয়ে তাদের লুঠপাট করার চেষ্টা করেন মি. শোভরাজ ও তার দুজন সঙ্গী। ওই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন মারা যান, কিন্তু অন্য তিনজনের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তাকে দিল্লির অতি সুরক্ষিত তিহার জেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দশ বছর পরে তিনি নিজের জন্মদিন পালনের অছিলায় জেল রক্ষীদের মাদক মেশানো বিস্কুট, ফল ইত্যাদি খাইয়ে বেহুঁশ করে পালিয়ে যান। জেল পালানোর সময়ে মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ছবিও তুলেছিলেন চার্লস শোভরাজ।
মনে করা হয় তিনি আবারও ভারতেই ধরা পড়ার উদ্দেশ্যেই জেল থেকে পালিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে জেল পালানোর অপরাধে তার ভারতেই বিচার হবে, আর তা নাহলে ১২ বছরের জেলের মেয়াদ শেষ হলে তাকে ভারত থেকে থাইল্যান্ডে প্রত্যর্পণ করা হবে, যেখানে তার বিরুদ্ধে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড অপেক্ষা করে আছে। কিছুদিনের মধ্যেই গোয়াতে ধরা পড়ে যান চার্লস শোভরাজ।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া শুক্রবার এমন এক অবসরপ্রাপ্ত মুম্বাই পুলিশ অফিসারের সাক্ষাতকার ছেপেছে, যিনি চার্লস শোভরাজকে দুবারই গ্রেপ্তার করেন। ১৯৭১ সালে প্রথমবার মুম্বাইতে এক পাতি চোরের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ অফিসার মধুকর জেন্ডে গ্রেপ্তার করেন চার্লস শোভরাজকে। আবার তিহার জেল থেকে পালানোর পরে ১৯৮৬ সালে গোয়ার এক রেস্তোরা থেকেও জেন্ডেই ধরে ফেলেন শোভরাজকে।
জেল পালানোর অপরাধের সাজা খাটার পরে ১৯৯৭ সালে অবশেষে ভারতের জেল থেকে মুক্তি পান চার্লস শোভরাজ। ততদিনে থাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে হত্যার সাজা তামাদি হয়ে গেছে। ভারত থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ফ্রান্সেই ফিরে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে সাক্ষাতকার দিতেন শোভরাজ। তার জীবনের ওপরে বই লেখার জন্যও অনেক টাকা নিতেন তিনি।
৭৮ বছর বয়সী শোভরাজ তার জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন জেলেই। ২০০৩ সালে চার্লস শোভরাজকে নেপালে খুঁজে পেয়েছিলেন প্রতিবেদক যোসেফ নাথান। দা হিমালয়ান টাইমসের ওই সাংবাদিক একটি ক্যাসিনোতে প্রথম দেখেন শোভরাজকে। পরের দিন দা হিমালয়ান টাইমস আর তাদের সহযোগী নেপালি পত্রিকা অন্নপূর্ণা পোস্টে ছাপা হয়েছিল সেই সংবাদ।
'সিরিয়াল কিলার', 'বিকিনি কিলার' বা 'দা সারপেন্ট' ইত্যাদি নামে পরিচিত চার্লস শোভরাজকে যে কাঠমান্ডুতে দেখা গেছে, সেই খবরটা ছিল একটা 'স্কুপ'। খবরটা ছাপা হয় সাংবাদিক যোসেফ নাথানের নাম দিয়ে। ঘটনাচক্রে ২৩ বছর ধরে চার্লস শোভরাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেই সময়ে কাঠমান্ডু পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিস সুপারিন্টেডেন্ট গণেশ কে সি। তার গোয়েন্দা হয়ে ওঠাই যে শোভরাজকে খুঁজে বের করার জন্য।
গণেশ সংবাদ সংস্থা পিটিআই কে বলেছেন, "১৯৭৫ সালে আমার যখন ১২ বছর বয়স, তখন একটা ঝোপের মধ্যে এক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এক নারীর মৃতদেহ দেখতে গিয়েছিলাম আরও অনেকের সঙ্গে। আধপোড়া ওই মৃতদেহটি ছিল কনি জো ব্রনঝিখের। তার সঙ্গী, কানাডার নাগরিক লরেন কেরিরকেও চার্লস শোভরাজ হত্যা করেছিল শুনেছিলাম। ওই ঘটনাটার জন্যই পরবর্তী কালে গোয়েন্দা হয়ে উঠি আমি।"
যোসেফ নাথানের খবর ছাপা হতেই নেপাল সহ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হৈ চৈ পড়ে যায়। কাঠমান্ডু পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মি. গণেশ তার দলবল নিয়ে শহরের পর্যটন কেন্দ্র থামেলের বিভিন্ন হোটেলে হানা দেন। কিন্তু প্রতিবারই পালিয়ে যেতে সক্ষম হন চার্লস শোভরাজ। গণেশ বিবিসি নেপালি বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, "আমরা চার পাঁচটা হোটেলে হানা দিয়েছিলাম। অবশেষে খবরটা ছাপা হওয়ার পরের দিন একটা ক্যাসিনো থেকে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করি। কিন্তু তাকে জেরা শুরুর পরে আমরা বুঝতে পারি যে তার অপরাধ প্রমাণ করার জন্য আমাদের হিমালয় অতিক্রম করতে হবে। "
পুলিশের ডি আই জি পদ থেকে অবসর নেওয়া গণেশ কে সি জানিয়েছেন প্রথমে শোভরাজ স্বীকারই করছিলেন না যে তিনি আগে কখনও নেপালে এসেছেন। "আমরা জানতাম যে সে আমাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ছিল তার। অন্যদিকে আমাদের কাছে প্রমাণের অভাব ছিল। জেরার সঙ্গেই আদালতের পুরনো নথি খোঁজা চলতে থাকে। একই ব্যক্তি দুবার দুটো আলাদা পাসপোর্ট নিয়ে নেপালে প্রবেশ করেছে, এই অভিযোগে মামলা রুজু করি আমরা। অবশেষে দিল্লিবাজার আদালত থেকে পুরনো মামলার নথি উদ্ধার করা হয়," জানিয়েছেন গণেশ কে সি।
১৯৭৫ সালের দুটি খুনের দায়ে ২০০৩ সালে নেপালের আদালত ২০ বছরের জেলের সাজা দেয় চার্লস শোভরাজকে। কিন্তু এটা কখনই পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয় নি, যে কেন খুন করার অত বছর পরে চার্লস শোভরাজ নেপালে ফিরে গিয়েছিলেন ২০০৩ সালে। নেপালের জেল জীবনেও বারে বারেই শিরোনামে এসেছেন চার্লস শোভরাজ। তিনি জেলে থাকাকালীনই তার উকিলের মেয়ে, প্রায় ৪৪ বছরের ছোট নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন।
আবার জেল থেকেই তিনি কি করে এক বিদেশি সাংবাদিককে সাক্ষাতকার দিলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। বারে বারে তিনি আদালতের কাছে, কখনও আবার জাতি সংঘ মানবাধিকার কমিশনের কাছে মুক্তির আবেদন করতে থাকেন। অবশেষে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, যেহেতু তার বয়স ৭৮ বছর হয়ে গেছে, আর ১৯ বছর জেলে থাকাকালীন তার ব্যবহারও ভদ্র ছিল, তাই তাকে মুক্তি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।