বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মোমিন তার জীবনের প্রতিটি কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে নববী অনুসরণের মাধ্যমে ইহজাগতিক স্বার্থ ও পরজাগতিক কল্যাণ উভয় দিকই অর্জনে সক্ষম হতে পারে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : মিসওয়াক ব্যবহার করা মুখের পরিচ্ছন্নতা ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। (সুনানে নাসায়ী : ৫)।
শুধু দাঁত পরিষ্কারের উদ্দেশে মিসওয়াক করলে দাঁত তো পরিষ্কার হবে; কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না। পক্ষান্তরে সুন্নাতে নববী অনুসরণের উদ্দেশ্যে মিসওয়াক করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টিও হাসিল হবে। আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনে অনেক বেশি মিসওয়াকের আমল করতেন। বিশেষত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে, তাহাজ্জুদের সময় এবং সাহাবীগণের সাথে কথা বার্তা থেকে অবসর হয়ে তিনি মিসওয়াক করতেন।
এমনকি জীবন সায়াহ্নে যখন তিনি শয্যাশায়ী, তখনও মিসওয়াকের দিকে তাকালেন। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বুঝে ফেললেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) মিসওয়াক করতে চান। আয়েশা (রা.) তাঁর হাতে মিসওয়াকটি দিলেন। রাসূল (সা.) মিসওয়াক করলেন। এরপর উক্ত মিসওয়াক দ্বারা আয়েশা (রা.) নিজেও মিসওয়াক করলেন। তিনি অন্যান্য উম্মাহাতুল মু’মিনীনের উপর এ বলে গর্ব করতেন, আল্লাহর রাসূলের পবিত্র লালা তাঁর গলায় প্রবেশ করেছে এবং রাসূলের মাথা মুবারক তাঁর শিয়রে থাকাবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। (সহীহ বুখারী :৮৯০, ৪৪৪৯, ৪৪৫১, ৫৬১০)।
রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে আয়েশা (রা.) প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এত অধিক পরিমাণ মিসওয়াক কেন করেন? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রহমতের ফিরিশতাগণের সাথে আমার কথোপকথন হয়। মুখের দুর্গন্ধ তাদের অপছন্দ। তাই আমি অধিক পরিমাণ মিসওয়াক করে থাকি।’ মোটকথা, ইসলামের প্রতিটি কাজে দুটি কল্যাণ ও সফলতা রয়েছে। একটি দুনিয়ামুখী এবং অপরটি দ্বীনমুখী।
খলীফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মৃত্যুশয্যায় শায়িত। জনৈক যুবক এলেন তাঁর শুশ্রুষার জন্য। যুবক ফিরে যাওয়ার সময় খলিফা উমর (রা.) বললেন, ‘যুবকটিকে ডেকে আনো।’ যুবক ফিরে এলে তিনি তাকে সম্বোধন করে বললেন : বৎস হে! তুমি তোমার কাপড় টাখনুর উপরে উঠাও। কারণ, টাখনুর উপরে কাপড় পরা তোমার কাপড়ের জন্য অধিক পরিচ্ছন্নতা এবং তোমার পালনকর্তার অধিক তাকওয়া লাভের উপায়। (সহীহ ইবনে হিব্বান : ৬৯১৭)।
বস্তুত টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করার কাজ তো একটি; কিন্তু তাতে উপকারিতা দুইটি। একটি হলো, কাপড়ের পরিচ্ছন্নতা, অপরটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে : আল্লাহ তাআলা হাশরের ময়দানে তিন ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না- টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, উপকার করে খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বাজারজাতকারী। (সহীহ মুসলিম : ১০৬)।
কারণ, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা অহংকারের নিদর্শন। ফলে তা আল্লাহতাআলার ক্রোধ ডেকে আনে। সুতরাং টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করার মধ্যে যেমন কাপড়ের পরিচ্ছন্নতা রয়েছে, অনুরূপ তাতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিও নিহিত রয়েছে। এ হাদীস থেকেও স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, ইসলামের প্রতিটি কাজের মধ্যে দুটি কল্যাণ রয়েছে; যদি তা বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে নববী অনুসরণের মাধ্যমে হয়।
অন্য আরেক হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের প্রত্যেকের লজ্জাস্থানেরও একটি সদকা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, আমাদের কেউ স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করবে, তাতেও কি সাওয়াব লাভ হবে? উত্তরে তিনি বললেন, এ চাহিদা যদি হারাম পথে পূরণ করা হত তাহলে কি গোনাহ হত না? সুতরাং যখন কেউ হারাম পথ পরিহার করে হালাল পথে তা পূরণ করল, তখন এটিই একটি পুণ্যের কাজে পরিণত হল। (সহীহ মুসলিম : ১০০৬)।
সুতরাং স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলনেও দুটি দৃষ্টিকোণ বিদ্যমান। একটি তো হল জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং অপরটি হল হারাম পথ বর্জন। ফলে হারাম পথ পরিহারের নিয়তে বৈধ স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন হলে, অবশ্যই এটিও একটি নেক আমলরূপে গণ্য হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।