পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যানজট থেকে মুক্তি ও অল্প সময়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত মেট্রোরেল। দ্রæতগতিতে ও যানজটমুক্ত নগরীর জন্য মেট্রোরেল আশির্বাদ হয়ে আসছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মেট্রোরেল যানজটের শহরে দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ একটি বাহন হবে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরাও। আর মাত্র কয়েকদিন পর বহুল কাক্সিক্ষত এই মেট্রোরেল উত্তরা থেকে দুরন্তগতিতে ছুটে চলবে আগারগাঁও। আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। পরদিন থেকেই সাধারণ যাত্রীরা টিকিট কেটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেট্রো স্টেশনসহ ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়ার মেট্রোরেল অংশে মেট্রোরেলের ওপরের অংশের কাজ শেষ করে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নিচে সড়কের ভাঙা অংশগুলো বালু ও ইট দিয়ে সমান করা হচ্ছে। কিছু অংশে নতুন করে কার্পেটিং করা হয়েছে। ফুটপাথগুলোতে বসানো হচ্ছে টাইলস। তবে আগারগাঁও স্টেশন পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত। সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নির্মাণকাজের জিনিসপত্র। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ায় মেট্রোরেলের মালামাল সরানো হচ্ছে। ফলে রাস্তা আগের মতোই প্রশস্ততা ফিরে পাচ্ছে। মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে মিরপুর থেকে উত্তরার বিকল্প রুটের রাস্তাও তৈরি হচ্ছে।
এর পুরো সুফল পাবেন উত্তরা ও মিরপুরের কয়েক লাখ বাসিন্দা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও স্টেশনে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে তিনি ভ্রমণ করবেন মেট্রোরেলে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এজন্য ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকার ভবনের বাসিন্দাদের জন্য সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল হালিম এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় এসএসএফের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা এলাকাবাসীকে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকায় নির্দেশনা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
নির্দেশনাগুলো হলো: ১. কোনো ভবন বা ফ্ল্যাটে আগামী ২৯ ডিসেম্বরের আগে নতুন ভাড়াটিয়া উঠতে পারবেন না। ২. কোনো ভবনের কমার্শিয়াল স্পেসে ২৮ ডিসেম্বর নতুন কোনো অফিস, দোকান, রেস্তোরাঁ খোলা যাবে না। ৩. ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল সংলগ্ন কোনো ভবনের বেলকনি ও ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়া যাবে না এবং কেউ দাঁড়াতে পারবেন না। ৪. ওইসব এলাকার ভবন, বিল্ডিং বা ফ্ল্যাটে ওইদিন কোনো ছবি বা ফেস্টুন লাগানো যাবে না। ৫. মেট্রোরেল সংলগ্ন কোনো ভবনের কমার্শিয়াল স্পেসে বা আবাসিক হোটেলে ২৮ ডিসেম্বর কেউ অবস্থান করতে পারবেন না। ৬. ওই এলাকার কোনো ভবন বা ফ্ল্যাটে যদি বৈধ অস্ত্র থাকে, তা ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে হবে। ৭. মেট্রোরেলের দুই পাশের সব ব্যাংক বা এটিএম বুথ ২৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালীন পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
জানা যায়, ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এ প্রকল্প সরকার হাতে নেয় ২০১২ সালে। ২৮ ডিসেম্বর এই পথের প্রথমাংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলেও দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ২০২৩ সালের শেষ দিকে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিতাংশ চালু হতে পারে ২০২৫ সালে। এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় ব্যয় বাড়ে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তখন সর্বমোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়ন ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থায়ন ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে রাস্তার পুরো অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। ফুটপাথ দিয়ে লোকজনের চলাচলও শুরু হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এতে বহন করাতে পারলে মেট্রোরেলের সুফল পাওয়া যাবে। যানজট কমবে নগরীতে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় আমরা সবাই। কিন্তু মেট্রোরেলের ভাড়া অন্য গণপরিবহন থেকে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশেরও মেট্রোরেল চলাচল হয়। সেখানে কিন্তু ভাড়া এতো বেশি না। যদি দেশের মানুষ মেট্রোরেলে চড়তে না পারে ভাড়ার কারণে, সেটা দুঃখজনক। ভাড়া কমালে যাত্রী বাড়বে এবং যানজট কমবে বলে দাবি করেন তিনি।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেছেন, শেষ মুহ‚র্তের রুটিন ওয়ার্ক চলছে। মেট্রোরেল চলাচলের ক্ষেত্রে এ কাজ কোনো বাধা নয়। মেট্রোরেল চলতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন বলেও মন্তব্য করেন মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।