Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৈজ্ঞানিক গবেষণা এড়িয়ে ভেপিং নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিবৃতির সমালোচনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:১২ পিএম

সম্প্রতি ভেপিং নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া একটি বিবৃতি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। ভেপিং নিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এড়িয়ে বা আমলে না নিয়ে ওই বিবৃতিতে ভেপিংকে জনস্বাস্থ্যের জন্য আশঙ্কাজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিনের ওই বিবৃতে বলা হয়েছে, প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ভেপিংয়ে ক্ষতির মাত্রার কম হওয়ার পর্যাপ্ত প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

ভেপিং খাত-সংশ্লিষ্টরা এবং বিশেষজ্ঞরা এই বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করে এটিকে ”অবৈজ্ঞানিক”আখ্যায়িত করেছেন। কারণ যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (সাবেক পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড) সাড়া জাগানো গবেষণায় প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ভেপিং ৯৫ শতাংশ বেশি নিরাপদ, ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরি উপায় হিসেবে প্রতীয়মাণ হয়েছে। আধুনিক ও মানসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উদাহরণ সৃষ্টিকারী যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ধূমপান ছাড়তে ভেপিংকে উৎসাহিত করছে, এমন তথ্য ও গবেষণাগুলো এড়িয়ে গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভেপিং দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রের ঝুঁকির কারণ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয়। গবেষণায় প্রতীয়মাণ হয়, ধূমপানের সঙ্গে ভেপিং ব্যবহার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পাঁচ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন জামান বলেন, অধিদপ্তরের বিবৃতিতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ বা সূত্র উপস্থাপন করা হয়নি। বরং বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানে আসক্তি কাটাতে ভেপিং সবচেয়ে কার্যকর। সর্বশেষ যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত ককরেন সায়েন্টিফিক রিভিউতে বলা হয়েছে, ভেপিংয়ের ছয় মাসের ব্যবহারে ধূমপান ছাড়ার সম্ভাবনা নিকোটিন গাম বা প্যাচের তুলনায় অনেক বেশি।

ককরেন সায়েন্টিফিক রিভিউ মূলত স্বাস্থ্যখাতের গবেষণাগুলোর প্রাপ্ত ফলাফল ও উপাত্ত সমন্বয় করে। ভেপিং নিয়ে তারা ৭৮টি গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ ও সমন্বয় করেছে। এই গবেষণাগুলোতে ২২ হাজার ৫২ জন অংশ নিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত এবং জনস্বাস্থ্যখাত ব্যবস্থাপনায় মডেলে হিসেবে বিবেচিত দেশগুলোর প্রসঙ্গ টেনে সুমন বলেন, সেখানে ভেপিংকে ধূমপান ছাড়ার সহায়ক উপায় হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উত্থাপিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর খসড়ায় ভেপিং নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কর্মকর্তা ডা. রোবেদ আমিন বলছেন, ই-সিগারেট ব্যবহারজনিত জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে তিন হাজার মানুষ ফুসফুসে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যার মাঝে কমপক্ষে ৬৮ জন মুত্যুবরণ করেন।

বিবৃতি বাস্তবচিত্র এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ অবৈধ মারিজুয়ানা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কৃত্রিম স্বাদযুক্ত জুস ভেপিং যন্ত্রে (টিএইচসি অয়েল) ব্যবহারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রাণহানি। আর গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ভেপিং বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট পণ্য নিয়ন্ত্রণ করে সংস্থাটি।

রোবেদ আমিন বলেন, ভেপিংয়ের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই গবেষণা ফলাফলতো এখন পর্যন্ত কোনো বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আরা যুক্তরাজ্যের নাম শুনলেই সব মেনে নিতে চাই। এটাই সমস্যা। ভেপিং তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ এমন কোনো প্রমাণ নেই।’

তবে এই খাত নিয়ে কাজ করা সুমন বলেন, ভেপিং নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবস্থান “অবৈজ্ঞানিক। এমন অবস্থানের কারণে দেশে ধূমপানের হার হ্রাস করাটা কঠিন হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ