গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানী ঢাকায় বিপুল মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দার নেই স্থায়ী বাসস্থান। ভাড়াটিয়াদের অপ্রতুল নাগরিক সুবিধার পাশাপাশি নিত্যসঙ্গী অতিরিক্ত বাড়িভাড়া। আর এখানেও ঠকছেন নিম্নবিত্তরাই। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাসের এলাকার বাসাভাড়া তুলনামূলক বেশি। বিপরীত চিত্র উচ্চবিত্তদের এলাকায়। সেখানে বাসার আয়তন অনুসারে ভাড়া কম। সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫-এর মাস্টার প্ল্যানেও বাসাভাড়ার এমন বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। অন্য এক জরিপে দেখা গেছে, ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, ১২ শতাংশ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়িভাড়া খাতে। এ ছাড়া ৪ ভাগ ভাড়াটিয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫-এর মাস্টার প্ল্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের এলাকায় বাসাভাড়ার বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, নিম্নবিত্তের বসবাসকারী এলাকায় ৮০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ২ হাজার ৯০০ টাকা, ১০০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ৩ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া ৩৬ টাকা। এসব বাসায় একটি লাইট, একটি ফ্যান, যৌথ টয়লেট ও যৌথ রান্নাঘর থাকে। বাতাসের অবাধ চলাচলের সুযোগ নেই। এ ছাড়া ঘিঞ্জি পরিবেশে প্রাকৃতিক আলোও পাওয়া যায় না। অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।
ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকার চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, এসব এলাকায় বাসার আয়তনের তুলনায় ভাড়া কম। ২ হাজার ৫৫০ স্কয়ার ফিটের একটি বাসার ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া হয় ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এসব বাসায় থাকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসও পাওয়া যায়।
শুধু তা-ই নয়, এসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাসের সুবিধাসহ নানা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিপরীত চিত্র নিম্নবিত্তদের বসবাসকারী এলাকায়। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের পাশাপাশি প্রশস্ত রাস্তাঘাট ও মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও অভাব রয়েছে।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সমস্যা সমাধানে ভাড়ার টাকায় মানুষকে ফ্ল্যাট দেওয়ার একটা প্রস্তাব রয়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশে ৫৮টি স্থান আমরা প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট করেছি। সেখানে আমরা ১ হাজার ২০০ একর জায়গা নিতে চাচ্ছি। আমাদের টার্গেট ১ লাখ ফ্ল্যাট বানানো। ছোট ছোট ফ্ল্যাট হবে। ৬০০ থেকে ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট।
তিনি বলেন, বর্তমানে বস্তি এলাকার মানুষ মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া দেন। এ টাকাটা আমাদের ২০ বছরের কিস্তিতে দিলে ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে গেল। তাই আমরা ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক, এমন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছি।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১-এর ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়িভাড়ার অধিক কোনো ধরনের ভাড়া, জামানত, প্রিমিয়াম বা সেলামি গ্রহণ করতে পারবেন না। গ্রহণ করলে দণ্ডবিধি-২৩ ধারা মোতাবেক তিনি দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া দুই বছরের আগে ভাড়া বাড়ানো যায় না। ভাড়াটিয়া ও মালিকপক্ষকে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারা মতে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক ভাড়া কোনোভাবেই আদায়যোগ্য হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।