বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে নববী তথা রাসূলুল্লাহ (সা.) অনুসৃত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ইহজাগতিক যাবতীয় কর্মকাণ্ডও নেক আমলে পরিণত হয়। মানুষ মনে করে, মসজিদে গিয়ে নামায পড়া, কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা, হজে বাইতুল্লাহ এবং রমযান মাসের সিয়াম সাধনা তো ইবাদত।
পক্ষান্তরে ক্ষুধা-পিপাসা নিবারণ, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ, বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথোপকথন থেকে শুরু করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের সাথে সম্পৃক্ত যাবতীয় স্বভাবজাত কার্যক্রম শুধুই দুনিয়াবি কাজকর্ম। এর সাথে দ্বীন-ধর্ম ও ইবাদতের আবার কী সম্পর্ক? এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।
বস্তুত আমরা আমাদের জীবনব্যাপী স্বভাবজাত যত ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকি, তার প্রতিটিই নির্ভেজাল নেক আমলে পরিণত হতে পারে, যদি তা সুন্নাতে নববী তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণে করা হয়। শুধু প্রয়োজন বিশুদ্ধ নিয়তের।
বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে নববী যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে একজন মানুষের পানাহার, ওঠাবসা, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে চলাফেরা তথা জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই আমলে সালেহ তথা নেক আমলে পরিণত হতে পারে। তাই প্রত্যেক মুমিনের জীবনে বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে রাসূলের যথার্থ অনুসরণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
যেমনÑ রোযা বা সিয়াম সাধনা। যদি কেউ শুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকে, তা কিছুতেই ইবাদতরূপে গণ্য হবে না এবং তাতে কোনো সাওয়াব বা বিনিময় অর্জিত হবে না। কিন্তু তার এ উপবাস যাপন যদি রোযার নিয়তে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়, তখন তা ইসলামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে পরিণত হবে।
মোটকথা, শুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে রাসূল (সা.)-এর পরিপূর্ণ অনুসরণে আমাদের গোটা জীবন দ্বীনে পরিণত হয়ে যেতে পারে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যখন খাবার গ্রহণ শুরু করবে, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি সে খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে যেন সে খাবারের মাঝে বলে : খাবারের শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৭৬৭)।
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি খাবার গ্রহণ শেষে বলবে : তার বিগত জীবনের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। দু’আর অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাবার আহার করিয়েছেন এবং জীবনোপকরণরূপে তা দান করেছেন; আমার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ও শক্তি ব্যতীত। (জামে তিরমিযী : ৩৪৫৮)।
অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলে পানাহার শুরু করে এবং আলহামদু লিল্লাহ বলে শেষ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার বিগত সব সগীরা গুনাহ মাফ করে দেন। এখানে শুদ্ধ নিয়ত ও সুন্নাতে নববী অনুসরণের কারণে এত বড় কল্যাণ সাধিত হলো। ক্ষুধা পিপাসা নিবারণের প্রয়োজন তো পূরণ হলোই, পাশাপাশি পরকালীন বিশাল ফায়দাও অর্জিত হলো।
বস্তুত ইসলাম এটাই চায়, মুমিনের ইহজাগতিক প্রতিটি কাজও যেন দ্বীন ও ইবাদতে পরিণত হয়। যেমনÑ একজন মুমিন রাতে এই নিয়তে ঘুমাবে যে, ঘুম থেকে উঠে সে তাহাজ্জুদ পড়বে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন এ উদ্দেশ্যে পূরণ করবে যে, তাতে দৈহিক প্রশান্তি আসবে, ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে সে ইবাদত করতে পারবে। খাবার এ নিয়তে গ্রহণ করবে যে, তাতে শারীরিক শক্তি অর্জিত হবে, ফলে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা তার জন্য সহজ হবে। শুদ্ধ নিয়তের কারণে উল্লিখিত প্রতিটি কাজ নিখাদ ইবাদতে পরিণত হয়ে গেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।