হিমালয় থেকে তাইওয়ান পর্যন্ত চীনের আঞ্চলিক বিরোধগুলো অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণার বহির্গমনপথ বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি লেখক অলিভার গুইলার্ড। ফরাসি প্রকাশনা এশিয়ালিস্টে তিনি আরও লিখেছেন, চীনা সেনাবাহিনী জাতীয় হতাশা ভুলে যাওয়ার যুদ্ধে রয়েছে।
তিনি লিখেছেন, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে তাইওয়ান প্রণালী পর্যন্ত,২০২২ সালের শেষ দিনগুলো আবারও এর সাক্ষ্যবহন করে। মনে হচ্ছে নয়াদিল্লি, তাইপে বা পশ্চিমকে বিরক্ত করতে পছন্দ করে চীন।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কমিউনিস্ট সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন; যে বিধিনিষেধের কারণের দেশটির জনগণ ক্লান্ত।
গত ৯ ডিসেম্বর চীন ও ভারতের সেনারা বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের জুনে গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সহিংস সংঘর্ষের পর এ ঘটনা দেশ দুটির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল।
এশিয়ালিস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাওয়াংয়ের (অরুণাচল প্রদেশ) পার্বত্য অঞ্চলে একটি বিতর্কিত আঞ্চলিক এবং সীমান্ত পরিধিতে ভারতীয় সামরিক চৌকির কাছে বেইজিং এবং নয়াদিল্লির সৈন্যদের মধ্যে পাঁচ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় আবারও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের সৈন্যরা আহত হয়েছে।
গত ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্টে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং তাওয়াংয়ের ৯ ডিসেম্বরের ঘটনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সৈন্যরা একতরফাভাবে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল এবং সেটা তাওয়াং জেলার ইয়াংটসে এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওএসি) দখল করে।
রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে চীনের এই প্রচেষ্টার মোকাবিলা করেছিল। মুখোমুখি হওয়ার সময় হাতাহাতি হয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে পিএলএকে আমাদের ভূখণ্ড দখল করা থেকে বাধা দেয় এবং তাদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। হাতাহাতিতে উভয়পক্ষের কয়েকজন সৈন্য আহত হয়।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের পক্ষে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন- এ ঘটনার সারসংক্ষেপ কিছুটা ভিন্ন পরিভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
গুইলার্ড বলেছেন, ‘তা থেকে আমরা যা বুঝতে পারি, চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে স্থিতিশীল। উভয়পক্ষই কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে সীমান্ত ইস্যুতে বাধাহীন সংলাপ বজায় রাখে।’
‘আমরা আশা করি ভারতীয় পক্ষ মাঝপথে চীনের সঙ্গে দেখা করবে; দুই দেশের নেতাদের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য বাস্তবায়ন করবে। দুই পক্ষের দ্বারা স্বাক্ষরিত প্রাসঙ্গিক চুক্তির চেতনাকে কঠোরভাবে মেনে চলবে এবং এটি যৌথভাবে সীমান্তে শান্তি ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখবে। সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থির অবস্থার জন্য এটি অবশ্যই খুব বেশি দাবি না করার একটি প্রশ্ন হবে’, বলেন তিনি।
গুইলার্ড বলেন, ১৩ ডিসেম্বর অবশ্যই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তঃরাজ্য উত্তেজনা সমৃদ্ধ একটি দিন হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়ায় তাওয়াং থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার পূর্বে অত্যন্ত সংবেদনশীল তাইওয়ান প্রণালীতে চীনা সশস্ত্র বাহিনীও কাজ করছিল, স্থলে আর নেই কিন্তু বাতাসে।
তিনি আরও বলেছেন, তাইওয়ানের খাদ্য, পানীয়, অ্যালকোহল এবং মাছের পণ্য আমদানিতে বেইজিং নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক সপ্তাহ পরে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২১টি চীনা বিমানের (ভলিউম্যাট্রিকসহ ১৮ এইচ-৬ পারমাণবিক বোমারু বিমান...!) কোনো নোটিশ বা পূর্ব চুক্তি ছাড়াই তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলে উপস্থিতির নিন্দা জানায়। গুইলার্ড বলেন, ‘বেইজিংয়ের সামরিক হুমকি আগের চেয়ে আরও গুরুতর।’ সূত্র : এএনআই।