Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের দাবি নাগরিক সমাজের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:২৪ পিএম

জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এর আয়োজনে এবং ডিয়াকোনিয়া এবং ব্রেড-ফর-দি-ওয়ার্ড এর সহযোগিতায় জলবায়ু পরিবর্তনের সকল পদক্ষেপে মানবাধিকারকে বিবেচনায় রাখার আহবান জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিআরডি’র নির্বাহী প্রধান মো. শামছুদ্দোহা, ডিয়াকোনিয়া এর কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা, হেলভেটাস বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার আশিস বড়ুয়া, প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন এর রিজিওনাল ক্লাইমেট এবং রেসিলিয়েন্ট এডভোকেসি ম্যানেজার শাহনেওয়াজ ওয়ারা, এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক এবং অংশীজনেরা উপস্থিত থেকে মতামত ব্যক্ত করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সিপিআরডি’র পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রম গুলোর উপর একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন সিপিআরডি’র প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর মো. আকিব জাবেদ।

কর্মসূচিটিতে সভাপতির বক্তব্যে শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপর্যস্ত নানান অঞ্চলে ব্যক্তি এবং সম্প্রদায় পর্যায়ে ভিন্ন ও বহুমূখী বিপদাপন্নতার চিত্র অনুসন্ধানে সিপিআরডি. এরই মধ্যে কয়েকটি গবেষণা ও অনুসন্ধানী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অনুসন্ধানগুলোতে দেখেছি জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর খাদ্য, পানি, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার অধিকার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এবং সর্বোপরি মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার থেকে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী বা ব্যক্তির সামাজিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং লৈঙ্গিক পরিচয়ের উপর নির্ভর করে। আর্থিক ভাবে দূর্বল বা শারীরিক প্রতিবন্ধি নারীদের মানবাধিকার সবথেকে বেশি লঙ্ঘিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারকে কয়েকটি ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্যোগকালীন ক্ষয়-ক্ষতি এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সেই অভিঘাত ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর জীবনে নিয়ে আসে চরম দুর্গতি। তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ২০০৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউএনএইচসিআর এর বিশেষ প্রতিবেদনে গুরুত্বেও সাথে উপস্থাপিত হয়। রিপোটর্টিতে দেখানো হয় জলবায়ু পরিবর্তনে স্থানচ্যুত ও স্থানান্তরিত জনগোষ্ঠী তাদের স্থানান্তরনে কোন না কোন পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্থ জনগোষ্ঠী অন্যত্র বিশেষত শহরাঞ্চলে স্থানান্তরিত হলেও তারা ভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয় যেমন খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে সমস্যা, শ্রম বৈষম্য, শিশুশ্রম, যৌন হয়রানি, পাচার হওয়ার ঝুঁকি, বাল্য বিবাহ ইত্যাদি

ইউএনএইচসিআর’র ২০০৯ সালের রিপোর্ট আমলে নিয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ফ্রেমওয়ার্ক (ইউএনএফসিসিসি) ২০১৩ সালের সমঝোতা আলোচনায় সিদ্ধান্তগ্রহণ করে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সকল কার্যক্রম সব ধরনের মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখবে। পরবর্তিতে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রসমূহ গৃহীত প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্ট এ সিদ্ধান্ত হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সকল কার্যক্রমে রাষ্ট্রসমূহ মানবাধিকার সুরক্ষা নীতিমালার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত মানবাধিকার সুরক্ষার দায়ভার রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত করলেও এ বিষয়ে কোন আইনী কাঠামো নেই। অন্যদিকে চলমান মানবাধিকার সুরক্ষা নীতিমালা বিশেষ করে ইউনিভার্সেল ডিকলারেশন অন হিউম্যান রাইটস (ইউডিএইচআর) জলবায়ু অভিঘাতের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তেমন ভাবে উঠে আসেনি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রসমূহও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের মানবাধিকার লঙ্ঘন সুরক্ষায় তেমন উদ্যোগী নয়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক দ্বায়ভার উন্নয়নশীল ও অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহের নয়। এই পরিরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদাপন্নতাকে অনুধাবন করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বিবচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য একটি নতুন আইনি কাঠামো তৈরি করার কোন বিকল্পনেই। তিনি বিষয়টিকে বিশ^সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করার দাবি করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্তাপনায় মো. আকিব জাবেদ, সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুর জেলায় সিপিআরডি পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনা করেন। গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরীয়তপুর জেলার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। গবেষণা কার্যক্রমটি মূলত শরীয়তপুর জেলার নদীভাঙ্গন প্রবণ অঞ্চল নড়িয়া ও জাজিরা অঞ্চলে পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতির ফলে কেবল মানুষের সম্পদ, বসভিটা, ঘরবাড়ি এবং ফসল হানি হয় না এই ক্ষয়-ক্ষতি তাদেও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব রাখে যা চুড়ান্ত অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অধিকারকে ক্ষুন্ন করে।


খোদেজা সুলতানা লোপা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানবাধিকার বিপর্যস্ত হচ্ছে এবং এটি নিয়ে এখন আর কোন বিতর্ক নেই; আজকের আলোচনায় এবং উপস্থাপনায় এটি আবারও উঠে আসল। মানুষের অধিকার হরণের বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা এবং পর্যালোচনা অব্যাহত রাখতে হবে, এবং সেই গবেষণা লব্ধ ফলাফলকে জাতীয়-আন্তর্জাতিক নীতিমালায় অর্ন্তভুক্ত করতে কাজ করে যেতে হবে। আমরা গবেষণার ফলাফলের আলোকে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালা চাই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে বিপদাপন্ন এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য সক্রিয় ভূমিকা না রাখলে বাংলাদেশে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।

শাহনেওয়াজ ওয়ারা সিপিআরডিকে এই কর্মসূচীটির আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা পত্র পত্রিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মুখ থেকে তাদের বঞ্চনা এবং অধিকার হরণের গল্প শুনি, কিন্তু দেশীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায় থেকে তাদের অধিকার রক্ষায় কোন উদ্যোগ দেখতে পাইনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ