জর্জ অরওয়েল লিখেছিলেন, ‘যে অতীতকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে ভবিষ্যতকেও নিয়ন্ত্রণ করে’। যেকোন কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার মতোই ইতিহাসের পুনর্লিখন হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মূল কাজ এবং আবশ্যিকভাবে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি গড়তে চায়, উঠতে চায় বিশ্ব মঞ্চে।
আজকাল চীন তার জল ও স্থলসহ বিভিন্ন সীমান্তে আঞ্চলিক দাবির ক্ষেত্রে ইতিহাস সংশোধন বা পুনরায় পর্যালোচনায় ক্রমবর্ধমানভাবে মনোনিবেশ করছে। বিশেষ করে তাদের অত্যধিক মনোযোগ রয়েছে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে হিমালয় সংলগ্ন সীমানা; যেখানে রয়েছে প্রাচীন রাজ্য ‘ঝাংঝুং’।
ভারতের হিমালয় রাজ্য লাদাখের সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, বেইজিং পশ্চিম তিব্বতে ঝাংঝুং সম্পর্কিত প্রচুর পরিমাণে গবেষণা চালাচ্ছে।
ঝাংঝুং এর সঠিক সীমানা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলে যে রাজ্যটি বর্তমানে লাদাখ, নেপাল, পশ্চিম তিব্বত এবং গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অন্যদের যুক্তি, রাজ্যটি অনেক কম বিস্তৃত ছিল, শুধু নেপালের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে আর লাদাখের খানিকটা জুড়ে ছিল।
আবার অন্যদের দাবি, ঝাংঝুং ও তিব্বত প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের কোনো এক সময়ে আলাদা ছিল। তিব্বত সম্পর্কে যারা অনেক বেশি জানেন, তাদের যুক্তি- ঝাংঝুং সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না; এটি শুধু একটি রাজ্য ছিল যা আজকের তিব্বতের সাথে প্রায় মিলে যায়। হিমালয়ের ইতিহাস বিশেষজ্ঞরাও ঝাংঝুং কনসেপ্ট নিয়ে বেকায়দার কথা উল্লেখ করেছেন।
যাইহোক, ঝাংঝুং নিয়ে ঐতিহাসিক নির্ভুলতা এবং সত্য গুরুত্বপূর্ণ নয় বেইজিংয়ের কাছে। চীন স্পষ্টতই ঝাংঝুং নিয়ে বিস্তৃত ব্যাখ্যা পছন্দ করবে। সেইসঙ্গে ঝাংঝুং ঘিরে জ্ঞান এবং সঠিক তথ্যের অভাব একে আরও বিকৃত করে তুলবে।
দ্য ডিপলোম্যাট জানিয়েছে, এই রাজ্যের গুরুত্ব হলো- এটি অনেক সাংস্কৃতিক ও ভূ-কৌশলগত বিষয়ের সঙ্গে মধ্যে আবদ্ধ, যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে চায় চীন। বেইজিং তাই এই অঞ্চলে তার আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নতুন গল্প বানানোর চেষ্টা করছে।