Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কঠিন পরিস্থিতির মুখে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশে দেশে রেকর্ড পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ফলে পরিবার থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে ঋণের খরচ। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের এ পরিস্থিতিতে ব্যয়ে লাগাম টানছেন ভোক্তারা। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সংকটের মুখে পড়েছে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প। খবর রয়টার্স। শিল্প কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য বড় বাজারের ভোক্তারা পোশাক কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পটি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। যদিও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি এখনো শক্তিশালী এবং প্রধান অর্থনীতিগুলোর তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। তবে টেক্সটাইল খাতটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে এ শিল্পের ক্রয়াদেশ। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী বছরও এ খাতের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। ভারতের মোট রফতানি আয়ে প্রায় ২২ শতাংশ অবদান রাখে টেক্সটাইল। খাতটির রফতানি টানা পাঁচ মাস ধরে সংকুচিত হচ্ছে। সর্বশেষ নভেম্বরে এ শিল্পের রফতানি এক বছর আগের তুলনায় ১৫ শতাংশেরও বেশি কমে ৩১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। উচ্চমূল্য এবং আমদানি করা সস্তা পোশাকের কারণে অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশীয় পণ্যের বিক্রি মন্থর হয়ে পড়ছে। এতে খাতটির কর্মীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। ভারতের এ শিল্পে সাড়ে চার কোটিরও বেশি মানুষ কর্মরত আছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে শক্তিশালী বিক্রির পর স্থানীয় টেক্সটাইল কারখানাগুলো এখন উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। এতে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশটির শিল্পোৎপাদন ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশটির নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এমনিতেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করা লাখ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে টেক্সটাইল শিল্পের মন্দা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ধারা কমিয়ে দিতে পারে। গত মাসে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কভিডজনিত বিপর্যয় কাটিয়ে টানা ১৮ মাস শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পর ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে উচ্চমূল্যস্ফীতি ও হতাশাগ্রস্ত ভোক্তা মনোভাব বিশ্বজুড়ে পোশাকের খুচরা বিক্রিকে নিম্নমুখী করেছে। পাশাপাশি আগামী বছরও পোশাক খাতের সম্ভাবনা অন্ধকারে থেকে গিয়েছে। উৎপাদন খাত ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১৬ শতাংশ অবদান রাখে। অর্থনীতির অন্যান্য খাত উজ্জ্বল থাকলেও কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং দুর্বল চাহিদার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। যদিও কৃষি ও পরিষেবার ওপর ভর করে দেশটির অর্থনীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে তুলার উচ্চ দাম এবং অন্যান্য ব্যয় টেক্সটাইল খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার মার্জিনে আঘাত করেছে। যেখানে আগামী গ্রীষ্মের জন্য বিদেশী ক্রয়াদেশ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদায় দুর্বল রয়েছে। অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নরেন গোয়েঙ্কা বলেন, আমরা অন্তত আগামী ছয় মাসের জন্য কঠিন পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান বাজারগুলো থেকে ক্রয়াদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতাগুলো অভ্যন্তরীণ বিক্রিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের টেক্সটাইল হাব আহমেদাবাদের একজন গার্মেন্ট প্রস্তুতকারক সহিদ খান বলেন, তুলার দাম ২০২২ সালের রেকর্ড উচ্চতা থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে পোশাক বিক্রি কমে যাওয়ায় মুনাফাও নিম্নমুখী হয়েছে। একদিকে শ্রমব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে সুদের হার বেড়ে গিয়েছে। অথচ আমার পণ্যের বিক্রি কমে গিয়েছে। এদিকে তুলার আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দামে ভারসাম্যহীনতার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন টেক্সটাইল শিল্পের উৎপাদকরা। কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি অতুল গণাত্র বলেন, স্থানীয় তুলার দাম বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কের তুলনায় অন্তত ১০ শতাংশ বেশি। এ অবস্থায় স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সরকারকে তুলার ওপর ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। এতে মিলগুলো দেশের বাইরে থেকে তুলা আমদানির মতো বিকল্প পাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম স্থানীয় সরবরাহকারীদের তুলনায় প্রতি পাউন্ডে প্রায় ১০ সেন্ট কম। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে অনেক টেক্সটাইল প্রস্তুতকারক নতুন করে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার এ খাতে প্রণোদনা না দিলে কর্মী ছাঁটাইয়ের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের একটি নিটওয়্যার উৎপাদন হাব তিরুপুর। সেখানকার অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানও কর্মী বাহিনী কমিয়ে আনছে। কারণ ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় সংস্থাগুলো ৫০ শতাংশেরও কম সক্ষমতা ব্যবহার করছে। রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ