Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজয়ের পর ইসলাম কী করতে শেখায়-২

মাওলানা আবু হাসসান রাইয়ান বিন লুৎফুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৫৪ এএম

বিজয় অর্জিত হওয়ার পর মুমিন বান্দাদের সবচে বড় দায়িত্ব হল, আল্লাহপ্রদত্ত ভূখণ্ডকে সব ধরনের গোনাহ ও নাফরমানী থেকে মুক্ত রাখা। কেননা গোনাহ যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, আল্লাহর নাফরমানীর সীমা অতিক্রম করে, তখন ভূখণ্ডের অধিবাসীদের ওপর ধ্বংস ও বরবাদি নেমে আসে। বিভিন্ন কল্যাণ ও বরকত থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে যায়, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এই বিজয়; পরাজয়েও রূপান্তরিত হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তার ঐশ্বর্যশালী লোকদের (ঈমান ও সৎকর্মের) আদেশ করি। কিন্তু ওরা সেখানে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, ফলে সেই জনপদের ব্যাপারে (শাস্তির) কথা অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দেই। (সূরা বনী ইসরাঈল : ১৬)।

ইউরোপের একটি সামুদ্রিক দ্বীপ হল সাইপ্রাস। আরবিতে বলা হয় কুবরুস। খলীফায়ে রাশেদ হযরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে ২৮ হিজরি সনে সাইপ্রাস দ্বীপের ওপর মুসলিমদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর ইচ্ছায় যখন এই বিজয় অর্জিত হল, তখন দেখা গেল সবাই আনন্দে উদ্বেলিত, কিন্তু একজন মানুষ ক্রন্দনরত। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূলের বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবুদ দারদা (রা.)। তখন জুবাইর ইবনে নুফাইর তাকে জিজ্ঞাসা করল আপনি কেন কাঁদছেন? অথচ আজ আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত করেছেন।

তিনি বললেন, আফসোস তোমার প্রতি! নিশ্চয়ই এই জাতি ছিল বড় প্রতাপশালী জাতি। তাদের ছিল অনেক বড় রাজত্ব। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর হুকুম নষ্ট করল তখন তিনি তাদের এই পরিণতি ঘটালেন, যা তুমি দেখতে পাচ্ছ। আল্লাহর বান্দারা যখন আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে তখন তারা কীভাবে অপদস্থ হয়ে যায়! (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, ফাতহু কুবরুস অধ্যায় ৭/১১০)।

এত বড় বিজয় অর্জিত হওয়ার পরও হযরত আবুদ দারদা (রা.) যেই অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় ক্রন্দন করেছিলেন, সেই আশঙ্কাই আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। হযরত শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, এখন আমরা সেখানে গিয়ে হযরত আবুদ দারদা (রা.)-এর সেই শঙ্কার বাস্তবতা স্বচক্ষে দেখতে পাই। অর্থাৎ কুবরুসের বিশাল একটা অংশ মুসলমানদের হাত থেকে ছুটে গিয়েছে। আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এ অঞ্চল নিয়ে গ্রিক ও তুর্কিদের মাঝে যুদ্ধ চলছিল।

গ্রিকরা বলছিল এটা আমাদের এলাকা। আমরা এখানে শাসন করব। তুর্কি সরকার বলছিল, আমরা এখানে শাসন করব, এটা আমাদের অঞ্চল। একপর্যায়ে জাতিসংঘের সালিশিতে কুবরুস দ্বীপকে দুই ভাগ করা হয়। একটি অংশ দিয়ে দেয় গ্রিকদের। আরেক অংশ তুর্কিদের!... (বি. দ্র. মাসিক আলকাউসার, অক্টোবর ২০১৯, পশ্চিমে পাড়ি জমানোর আগে একটু ভাবুন, কুবরুস সফর, কিছু শিক্ষা, হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী)। হযরত আবুদ দরদা (রা.) কেঁদে কেঁদে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আজ তা স্বচক্ষে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই দ্বীপ আমাদের হাতে নেই। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আল্লাহ আমাদের এই বাস্তবতা উপলদ্ধি করার তাওফীক দান করুন।
বিজয় অর্জিত হওয়ার পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং জনগণের ঈমান-আকীদা হেফাজতের জন্য আল্লাহর দরবারে সকাতর প্রার্থনা করা। যেমনটা করেছিলেন হযরত ইবরাহীম (আ.)। কোরআনের ভাষায় : স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার রব! এই শহরকে করুন নিরাপদ এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে প্রতিমার পূজা থেকে দূরে রাখুন। (সূরা ইবরাহীম : ৩৫)।

এমনকি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) যখন মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করে এলেন, তখন দুয়া করেছিলেন : হে আল্লাহ! মক্কার প্রতি আমাদের অন্তরে যে মহব্বত সেই পরিমাণ অথবা তার চেয়ে অধিক মহব্বত মদীনার প্রতি তৈরি করে দেন। হে আল্লাহ! মদীনাকে স্বাস্থ্যকর স্থানে পরিণত করুন এবং আমাদের জন্য মদীনার মুদ ও সা (বিশেষ ধরনের পরিমাপক) এর মধ্যে বরকত দান করেন। আর মদীনার জ্বরকে জুহফা নামক স্থানে স্থানান্তরিত করে দেন। (সহীহ বুখারী : ২৯২৬)। সুতরাং শাসকবৃন্দের দায়িত্ব হল, দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনগণের ঈমান-আকীদা হেফাজতের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এই প্রসঙ্গে সর্বশেষ কথা হল, বিজয় অর্জন করা এক জিনিস। বিজয় অক্ষুণ্ন রাখা আরেক জিনিস। প্রত্যেক মুসলিম নাগরিকের দায়িত্ব হল, নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ সজাগ দৃষ্টি রাখা। নতুবা স্পেন, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকানের ভাগ্য বিপর্যয় আমাদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। মিসর বিজেতা বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস (রা.) মুসলিম উম্মাহকে এই দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন : কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদেরকে সর্বদা এই ভূখণ্ডের পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হবে। কেননা তোমাদের চারপাশে অসংখ্য শত্রু ওত পেতে আছে।... (আননুজূমুয যাহিরাহ ফী মুলূকি মিস্র ওয়াল কাহিরাহ ১/৯২)।

আল্লাহ আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিসহ প্রতিটি মুসলিম ভূখণ্ডকে রক্ষা করুন, তাদেরকে ঈমান ও ইসলামের সাথে কবুল করুন, সর্বপ্রকার কল্যাণ দান করুন- আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন