পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরান ঢাকার চকবাজার ইমামগঞ্জস্থ হার্ডওয়্যার মার্কেটের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। সেখানের হোসেন ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারীও তিনি। দোকানের আয় দিয়েই সংসার চালাতেন সংসার। তিল তিল করে জমানো টাকায় গড়ে তুলেছিলেন স্বপ্নের বড় দোকান। কিন্তু চোখের সামনে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখন পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। আগুন শুধু তার ব্যবসাই শেষ করেনি। পুড়ে গেছে যেন তার স্বপ্ন।
গত শনিবার রাত পৌনে ১১টায় ইমামগঞ্জের হার্ডওয়ার মার্কেটে হঠাৎ আগুন লাগে। আগুনের ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন ষ্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু মার্কেটের ও আশপাশের সবগুলো রাস্তা ও সরু গলির কারনে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারে নি। যে কারনে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেক বেগ পেতে হয় ফায়ার কর্মীদের। রাত প্রায় ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। কিন্তু পুরোপুরি নির্বাপন করতে সময় লেগেছে গতকাল রোববার ভোর পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দেলোয়ার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, প্রতিদিনের মতো গত শনিবার রাত ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় যাই। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসি। ঘটনাস্থলে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাথে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু চোখের সামনের আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুন লাগার কারণ এখনো জানতে পারি নাই। তবে এখানের বৈদ্যুতিক তারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেখান থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর আগে আমার ছোট একটি দোকান ছিল। অনেক কষ্টে ব্যবসার প্রসার ঘটাই। দীর্ঘ ১০ বছরের সকল জমানো টাকা দিয়েই সম্প্রতি দোকানো মালামাল ক্রয় করি। প্রায় কোটি টাকার মালামাল মুহুর্ত্যরে মধ্যেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইমামগঞ্জের হার্ডওয়ার মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ মার্কেটের দোকানগুলোতে ঝাড়ু, তারকাঁটা, আলকাতরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ছিল। পরে সেখান থেকে আশপাশের অন্তত চারটি বহুতল ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভবনে ব্যাংক, সুতা ও প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম রয়েছে। ফলে আগুনের তীব্রতা বাড়ে বলে দাবি তাদের। আগুনে ওই মার্কেটের পাশে একটি মন্দিরও পুড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
একই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী জীবন সরকার। তিনি দীপু ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী। তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো আমিও রাত সাড়ে সাতটার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় যাই। কিন্তু রাত ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে চলে আসি। ফায়ার সার্ভিসের সাথে আমিও কাজ শুরু করি। কিন্তু কিছুতেই আগুন নেভানো গেল না। পুড়ে ছাই হয়ে গেলে দোকানের সব মালামাল। ১৯৮২ সাল থেকে ওই মার্কেটে তিনি ব্যবসা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখনোই এখন ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয়নি। কিন্তু আগুনে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মো. আশরাফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ওই মার্কেটে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতাম। তবে দোকান বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার সময় বিকাশের মোবাইলসহ সব কটি মোবাইল ফোন নিয়ে যাই। তবে দোকানে থাকা ট্রেড লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তাদের মতো প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীর দোকান ও গুদাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া বাজারের পাশে অগ্রনী ব্যাংকের একটি শাখায় আগুন লাগে। এতে ব্যাংকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রাহকদের গ্রাহকগণকে নিকটস্থ মৌলভী বাজার কর্পোরেট শাখায় লেনদেন করতে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, তিন জন কর্মকর্তা বসে আছেন। এছাড়া ভেতরের ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। এছাড়া আসবাবপত্রগুলো এলোমেলো করে রাখা আছে।
ইমামগঞ্জ বাজারের, টিনসেট মার্কেটের সব কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই গেছে। এছাড়া মার্কেটের আশপাশের আরও কয়েকটি মার্কেট ও বহুতল ভবনেও আগুনে ব্যাপাক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পুড়ে গেছে আগুনে একটি মন্দিরও। এছাড়াও পুড়ে যাওয়া মার্কেটে ব্যবসায়ীরা এসেছেন। কেউ কেউ বার বার কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, শনিবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে একে একে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরই মধ্যে আগুন চারপাশের অন্যান্য মার্কেটেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা। হার্ডওয়্যার মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি রিজার্ভ পানিও ছিল না। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষয়ক্ষতি ও আগুন লাগার কারণ জানা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।