গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি আক্রমণে প্রায় ৫১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
আজ রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলা, ভাঙচুর, দ্রব্যাদি ও অর্থ লুণ্ঠন, গ্রেপ্তার এবং কার্যালয়ের আশপাশে বেপরোয়া গুলি ও টিয়ার গ্যাস বর্ষণ, খুন, জখম ও নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অফিস থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, নথিপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র, নগদ অর্থ লুট করা প্রকৃতপক্ষে একটি ডাকাতির ঘটনা।
তিনি বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর পুলিশি হামলার পর পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও মালপত্র লুটে অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় নগদ অর্থসহ ক্ষতি ও লুট হওয়া সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৫০,৮২,৫০০ (পঞ্চাশ লাখ বিরাশি হাজার পাঁচশ) টাকা।’
তিনি বলেন, কোনো অফিস বা গৃহ তল্লাশির সময় মালিকপক্ষ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে রাখার সাধারণ আইন অগ্রাহ্য করে পুলিশ যা করেছে, তা হানাদার বাহিনীর আচরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনায় জড়িত পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, মৌলিক মানবাধিকার, সাম্য ও সকল নাগরিকের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লাখো শহীদের রক্তে স্বাধীন বাংলাদেশে গত ৭ ডিসেম্বর ২০২২ নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশে অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকারের নির্দেশে তার বিভিন্ন বাহিনীর যে নির্মম নিষ্ঠুরতা ও বর্বর আচরণ আপনারা ও আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন, তা শুধু বিজয়ের মাসকে কলঙ্কিত করেনি, গণতন্ত্র হত্যাকারী ও বারবার গণতন্ত্র হত্যায় সহায়তাকারী বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী ও গণবিরোধী পরিচয় উৎকটভাবে পুনরায় প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রত গণমানুষের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে এবং একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপুল অস্ত্রসজ্জিত বিশাল সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতর্কিতে আক্রমণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দলীয় নেতাকর্মী, এমনকি সাধারণ পথচারীর ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, গুলি, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল আহমেদকে হত্যা, অসংখ্য নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে জখম করা এবং অফিসের ভেতর ঢুকে চেয়ারপারসন, মহাসচিবসহ নেতাদের এবং দল ও অঙ্গ দলের অফিস কক্ষ ভেঙে তছনছ করা; কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন দ্রব্য লুট ও ভাঙচুর, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল, সিসি ক্যামেরাসহ আসবাবপত্র বিনষ্ট করা এবং এসব অপকর্মকে যুক্তিসংগত প্রমাণের অপচেষ্টায় মিডিয়ার সামনেই ব্যাগে করে ককটেল বহন করে তা অফিসের বিভিন্ন কক্ষে রেখে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে বাধা দিয়ে অফিসের সামনে তাকে ঘেরাও করে রাখা—এসব কিছুই আপনারা ও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। যে কোনো সভ্য দেশে এমন সব ঘটনা শুধু অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রত নয়; এমন বর্বরতা ও ষড়যন্ত্রমূলক নিষ্ঠুরতা তীব্রভাবে নিন্দনীয়।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে যে চারটি মামলা রুজু করেছে, তার মধ্যে শুধু পল্টন থানায় করা ১০ নম্বর মামলায় ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশ থেকে গ্রেপ্তারকৃত কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, সাবেক এমপি খায়রুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, এ বি এম মোশারফ হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব এবং অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শাহ মো. নেছারুল হক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবুল কালাম আজাদ, হারুন অর রশিদ, মোস্তাক মিয়া, আবদুল খালেক, খন্দকার আবু আশফাকসহ ৪৫০ নারী ও পুরুষ নেতাকে গ্রেপ্তারকৃত আসামি উল্লেখ করে এবং আরও ১৫০০ থেকে ২০০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাত নারী কর্মীও রয়েছেন।
অন্য তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ও অজ্ঞাত আসামি মিলিয়ে ৭ ডিসেম্বরের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
এর আগে দলের অন্যতম সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় জনসমাবেশ থেকে ফেরার পথে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম নয়নসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ৮ ডিসেম্বর সকালে দলের মহাসচিব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজ অফিসে যেতে চাইলে নাইটিংগেল মোড়ে তাকে অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়া হয়। ওই দিনই দিবাগত রাতে ভোর ৩টার দিকে উত্তরায় নিজ বাসভবন থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং শাহজাহানপুরে নিজ বাসভবন থেকে ঢাকার বিভাগীয় জনসমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও মেয়র মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়। সারা দিন জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহসন করে বিকেলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর গত কয়েক দিনে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনা জনগণের তীব্র ঘৃণা ও অনাস্থার শিকার পতনোন্মুখে সরকারের স্বৈরাচারী কায়দায় টিকে থাকার ব্যর্থ প্রয়াস বলেই দেশবাসী মনে করে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এত নির্যাতন, বর্বর অত্যাচার, জেল-জুলুম সত্ত্বেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দুর্বল করা যায়নি, বরং তা আরও বেগবান হয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের পরে ঢাকা বিভাগের সর্বত্র সরকারী দল ও তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ ১০ ডিসেম্বরের জনসমাবেশ সফল করেছে। পরবর্তী প্রতিটি কর্মসূচি সফল করেছে। আমরা সংগ্রামী দেশবাসী ও সাহসী নেতাকর্মীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
পুলিশ তাদের মামলায় বলেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা নাকি ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি এবং ককটেল নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। বিপুল ও মারাত্মক সব আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার পুলিশকে ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও তাদের ভাষায় ককটেল দিয়ে আক্রমণ করার মতো হাস্যকর অভিযোগ জনগণ বিশ্বাস করে না। পুলিশের এজাহারেই বলা হয়েছে, তারা ৭ ডিসেম্বর বিকেলে মোট ১৭৯টি টিয়ার গ্যাস ও ৪৬০টি শটগানের গুলি ছুড়েছে এবং ৬টি সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।
এর বিপরীতে তাদের ওপর আক্রমণকারী বিএনপি নেতাকর্মীর ব্যবহৃত অস্ত্র হিসেবে আলামত দেখানো হয়েছে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ৫ বস্তা ইটের টুকরা (যা শহরের যে কোনো সড়ক থেকে যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়), ৮০টি বাঁশের লাঠি (যা শহরের বহু স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়) ও লাল স্কচটেপে মোড়ানো কথিত ককটেলের ভাঙা অংশ (যা ব্যবহৃত টিয়ার গ্যাসের শেল কিংবা পথের আবর্জনারও অংশ হতে পারে)।
এমন অসম যুদ্ধের বিবরণ ছোটদের গল্প কিংবা স্বৈরাচারী শাসকদের প্রেস নোটেই শুধু দেখা যায়। তথাকথিত ক্রসফায়ারের গল্পের মতোই এসব গল্প এখন শুধুই কৌতুকের খোরাক এবং অক্ষমের আর্তনাদ।
তিনি বলেন, দলের মহাসচিবকে অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে এবং দলের অন্যান্য নেতাকে কয়েকটি কক্ষে আটকে রেখে অসংখ্য টিয়ার গ্যাস, গুলি, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে গোটা এলাকাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্য দলীয় কর্মীর মতো প্রতিপক্ষকে হেয় ও বিপদাপন্ন করার জন্য সাদা ব্যাগে করে নিজেরাই ককটেল নিয়ে মহাসচিবের ও জাসাস কার্যালয়ের টয়লেটে মোট ১৫টি ককটেল রেখে তা উদ্ধারের যে নাটক করেছে, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা বিএনপির সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও বানোয়াট মামলাসমূহ প্রত্যাহারের দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, ৭ ডিসেম্বরের নারকীয় ঘটনার যারা নিন্দা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং বিএনপি কার্যালয়ে এসে আমাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, তাদের সকলকে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘৃণ্য ঘটনা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে যারা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, তাদেরও দলের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।