বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহর অলীগণের মধ্যে নবী ও রাসূলগণ ছাড়া কেউ মাছুম বা নিষ্পাপ নয় । কারণ নবী ও রাসূলগণ ওহী প্রাপ্ত এবং তাঁদের দায়িত্ব হলো নবুওত ও রিসালাতের বিধানাবলি মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া, যা আল্লাহপাক তাদের নিকট ওহীরূপে প্রেরণ করেছেন। আল কোরআনে এতদপ্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে : আর আমি প্রেরণ করেছি রাসূলগণকে সুসংবাদদাতাও সতর্ককারী রূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলগণের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা আন্নিসা : ১৬৫)।
এই আয়াতে কারীমার মর্মের প্রতিলক্ষ্য করলে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, মহান আল্লাহপাক ঈমানদারদের ঈমান ও সৎকর্মশীলতার পুরষ্কার স্বরূপ জান্নাতের সুসংবাদ দান করার জন্য এবং কাফের, বেঈমান, ও দুরাচারদের কুফুরী ও অবাধ্যতার শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক আযাবের ভীতি প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে, দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন কিয়ামতের শেষ বিচারের দিনে অবাধ্য ব্যক্তিরা অজুহাত উত্থাপন করতে না পারে যে, হে আল্লাহ! কোন্ কাজে আপনি সন্তুষ্ট আর কোন কাজে আপনি অসন্তুষ্ট হন, তা আমরা উপলদ্ধি করতে পারিনি। জানতে পারলে অবশ্যই আমরা আপনার সন্তুষ্টির পথ অবলম্বন করতাম।
অতএব, আমাদের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি মার্জনীয় এবং আমরা নিরাপরাধ। পথভ্রষ্ট লোকেরা যাতে এহেন অজুহাত পেশ করতে বা বাহানার আশ্রয় নিতে না পারে, তজ্জন্য আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট নিদর্শনসহ নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁরা সর্বস্ব উৎসর্গ করে সত্য পথ প্রদর্শন করেছেন। এতে তারা কোনোরকম কার্পণ্য করেননি। ফলে, প্রকৃতই তারা মাছুম ও নিষ্পাপ। অতএব, এখন আর সত্য দ্বীন ইসলাম গ্রহণ না করার ব্যাপারে কোনো অজুহাত গ্রহণ যোগ্য হবে না এবং কোনো বাহানারও অবকাশ নেই। কেননা, আল্লাহপাকের ওহী এমন এক প্রকৃষ্ট ও যথার্থ প্রমাণ যার মোকাবিলায় অন্য কোনো প্রমাণই কার্যকর হতে পারেনা।
কোরআনুল কারীম এমন এক অকাট্য দলীল যার সামনে কোনো যুক্তিই টিকতে পারেনা। তাছাড়া কোনো অলীই গায়েব জানে না। সৃষ্টি ও রিজিক প্রদানে তাদের কোনো প্রভাবও ভূমিকা নেই। তারা নিজেদেরকে সম্মান করতে অথবা কোনো ধন-সম্পদ তাদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করতে লোকজনকে আহ্বান করেন না। এমন কি তারা দুনিয়ার প্রতি কোনো প্রকার লোভ প্রদর্শন করেননা। তবে, যদি কেউ এমন কিছু করে তাহলে সে আল্লাহর অলী বলে বিবেচ্য হতে পারেনা।
বরং সে মিথ্যাবাদী, অপবাদ আরোপকারী, প্রতারণাকারী ও শয়তানের দোস্ত বা বন্ধু বলে বিবেচিত হবে। আল কোরআনে তাদের সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে : শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে; ফলে তাদেরকে আল্লাহর যিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। তারাই শয়তানের দল। সাবধান! নিশ্চয়ই শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্তশীল। (সূরা আল মুজাদালাহ : ১৯)।
মহান আল্লাহপাক তাঁর অলীত্ব তথা বন্ধুত্ব ও নৈকট্য লাভকারীদের পরিচয় তুলে ধরে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন : যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাদের জন্যই দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে রয়েছে সুসংবাদ। আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই; সেটাই মহাসাফল্য। (সূরা ইউনুস : ৬৩-৬৪)।
আলোচ্য আয়াতদ্বয়ের মূল মর্মের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে তিনটি বিষয়ের সন্ধান অতি সহজেই লাভ করা যায়। প্রথমত : অলী হওয়ার সহজ উপায় কি এবং কেমন? দ্বিতীয়ত : অলীদের দুনিয়ার সুসংবাদের অর্থ ও মর্ম কি? তৃতীয়ত : আখেরাতের সুসংবাদের অর্থ কি? আগামী আলোচনায় আমরা উল্লিখিত তিনটি বিষয়কে অনুধাবন করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।