গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘রক্তঋণ’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী স্মরণ সভার আয়োজন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’। গতকাল ১৪ ডিসেম্বর বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এরমধ্যে ছিলেন শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, গবেষক, চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক, কবিসহ বিশিষ্টজনেরা। এদের মধ্যে যিনি হার্টের চিকিৎসক ছিলেন তাঁর হৃদয় ভেঙে ফেলা হয়েছে। যিনি চোখের চিকিৎসক ছিলেন তাঁর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়। অনেকে প্রশ্ন করেন রনাঙ্গণে বুদ্ধিজীবীরা যুদ্ধ করেননি। যারা এইসব প্রশ্ন তোলেন তারা পাকিস্তানের দোসর। মুক্তিযুদ্ধে দেশের এই সূর্যসন্তানেরা বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন। একারণেই তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছে। জাতি শ্রদ্ধভরে তাদের স্মরণ করে।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে থাকা কৃষক-শ্রমিক মানুষ যখন কোনো মতে জীবন-যাপন করছিল। বঞ্চনা-নিগৃহ সয়ে সয়ে কৃষি উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়ে, পশ্চিমাদের পাকিস্তানি শক্তির সামরিক সরঞ্জামাদী কেনার ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছিল-পিতা মুজিব দাঁড়িয়ে তখন মুক্তির কথা বলেছিলেন, মুক্তির মানচিত্র এঁকেছিলেন।’
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে নিরস্ত্র হাড্ডিসার মানুষের উপরে হামলা শুরু হয়। সেই থেকে আমাদের বোধে রক্তঋণের স্থায়ী আবাসন। আমরা ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে রক্তঋণে আবদ্ধ হয়েছি। পরবর্তী ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে গেরিলা যোদ্ধারা একজন, একজন করে যখন পাকিস্তানি পিশাচের দল, রাজাকার, আল-শামস, আল বদর দ্বারা চিহ্নিত হয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন বীর যোদ্ধারা। দেশমাতৃকা রক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের রক্তঋণ। যে বেয়নেটের খোঁচায় বুদ্ধিজীবীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চোখ, সেই চোখে ১৬ কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। যে রক্ত বাংলাকে রক্তাক্ত করেছে, সেই রক্তে আমরা অসাম্প্রদায়িকতা কিনেছি। যে রক্তে বোনের স্তন কেটে নেয়া হয়েছে, সেই রক্তে আমরা মানচিত্র এঁকেছি। সেই রক্তে আমার ঋণ আছে। সেই একই শত্রুর আঘাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা মুজিবকে হত্যা করা হলো। রক্তাক্ত করা হলো ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকান্ড ঘটেছে। জেল নিরাপদ জায়গা অপরাধীদের জন্য। কিন্তু সেখানে চার জাতীয় বীর ছিল। তাদের চারজনকেই একে একে হত্যা করা হলো। এরপর ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর কন্যার শাড়ি রক্তাক্ত হলো। আইভী রহমান আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করলেন। রমনা বটমূলে কিছু মানুষ একেবারেই সাংস্কৃতিক চর্চা-গান শুনছিল, কিন্তু সেখানে বোমা হামলা করে গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করা হলো। বিনোদন প্রিয় মানুষ সন্তান-সন্তুতি নিয়ে সিনেমা হলে গিয়েছিল তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। উদীচীর শিল্পীরা গান গাইছিল মুক্তির, সাম্যের। আঘাতে জর্জড়িত করা হলো। নূর হোসেন গণতন্ত্র মুক্তিপাক স্লোগান বুকে ধারণ করলো, সেই বুক ঝাঁঝরা করা হলো। এইসব রক্তঋণের যে আবদ্ধতা সেটি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ।’
ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘যখনই গণতন্ত্রের সম্ভাবনা, মুক্তির সম্ভাবনা, যখনই অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মাণের পথে আমরা এগোতে যাই, তখনই রক্তাক্ত করা হয় এই জনপদ। যারা বাংলাদেশ চায়নি তারা চেয়েছিল ধর্মান্ধতা, অগণতান্ত্রিক শাসন, সামরিক শাসন। তার বিপরীতে আমরা যারা একসাথে মিলে গণতন্ত্রের গান গাই, মুক্তির গান গাই- শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে আমরা একটি আধুনিক পৃথিবী গড়তে চাই, মানবিক পৃথিবী গড়তে চাই। যেখানে কেউ হামলার শিকার হবে না। কারো রক্ত ঝড়বে না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক পবিত্র ভূমি সবাই মিলে গড়তে চাই বলেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেদিন সামরিক পোষাক পরিহিত অবস্থায়ই আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। তারপরেও তাদের লজ্জা হয়নি। সম্মিলনের ধারায় একত্রিত হয়ে জ্ঞানের আলোয় মুক্তির ধারায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সকল অশুভ শক্তিকে চিরতরে স্তব্ধ করি।’
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি স্মরণ করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকবৃন্দ। স্মৃতিচারণ শেষে সন্ধ্যায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আগত অতিথিবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে মোমবাতি প্রজ্জ¦লন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভিসি ড. মো. মশিউর রহমান, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার প্রমুখ। ‘রক্তঋণ’ শীর্ষক সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. খন্দকার বজলুল হক, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিশ^বিদ্যালয়ের ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘রক্তঋণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।