Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রেওয়াজি উপহার সামাজিকতার এক নিষ্ঠুর চেহারা-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

বিয়ে-শাদি আকীকা কিংবা এ জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে কেউ যখন নিমন্ত্রিত হয় তখন সেখানে কোনো উপহারসহ উপস্থিত হওয়া যেন আমাদের একপ্রকার সামাজিক বাধ্যবাধকতা। এ বাধ্যবাধকতা দুই দিক থেকেই। যিনি নিমন্ত্রিত, তিনি ভাবেন, একটি মানসম্মত উপহার ছাড়া সেখানে যাওয়া যাবে না। আবার যারা নিমন্ত্রক, তারা অতিথিদের বরণ করার তুলনায় উপহার গ্রহণের প্রতিই অধিক মনোযোগী হয়ে থাকেন। উপহার গ্রহণের জন্য থাকে ভিন্ন ব্যবস্থাপনা। এবং সেটাও অনেকটা এমনভাবে, যেন চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও কেউ উপহার প্রদান না করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পারেন। এটাও এখন সামাজিকতা।

এ উপহার এখন নতুন রূপ গ্রহণ করেছে। কিছুকাল আগেও রেওয়াজ ছিল, উপহার দেয়ার জন্য পছন্দসই কোনো কিছু কিনে ‘গিফট পেপার’ দিয়ে মুড়িয়ে তা নিয়ে যাওয়া হত। সে রেওয়াজ কিছুটা এখনো আছে। তবে এখনকার রেওয়াজ অনেকাংশেই নগদ টাকা। কেউ চাইলে এটাকে কোনো রেস্টুরেন্টের বিল পরিশোধের সঙ্গেও মিলিয়ে ভাবতে পারেন। তবে পার্থক্য হল, রেস্টুরেন্টে বিল দিতে হয় খাবার পর, আর অনুষ্ঠানে দিতে হয় খাবারের আগে।

আসলে এ সামাজিকতায় মৌলিকভাবে দু’টি ভালো দিকও রয়েছে এবং দুটোই ইসলাম সমর্থিত। কেবল সমর্থিত বললেও অবশ্য যথেষ্ট নয়, এ দু’টি বিষয় ইসলামে কাক্সিক্ষতও। এক. উপহার প্রদান, দুই. অন্যের আনন্দে শরিক হওয়া। পারস্পরিক উপহার আদান-প্রদানের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য করুন; রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তোমরা কিছুতেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তোমরা ঈমান না আনবে, আর যতক্ষণ তোমরা একে অন্যকে ভালো না বাসবে; ততক্ষণ তোমরা (পূর্ণ) ঈমানদারও হতে পারবে না। আমি তোমাদেরকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিই, যা করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন ঘটাও। (জামে তিরমিজি : ২৬৮৮)।

আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (রাহ.) তার ‘আলআদাবুল মুফরাদ’ নামক গ্রন্থে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একে-অন্যকে উপহার দাও, ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। (আলআদাবুল মুফরাদ : ৫৯৪)। উল্লেখিত দু’টি হাদীস থেকে আমরা জানতে পারিÑ ১. জান্নাতে যেতে হলে ঈমান আবশ্যক। ঈমান ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। ২. ঈমান যদিও আল্লাহ তা’আলার ওপর এবং নবী-রাসূল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, পরকাল ও তকদীরের ওপর বিশ্বাসের নাম, কিন্তু পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে এবং ঈমানের পূর্ণ সুফল পেতে চাইলে এ বিশ্বাসের পাশাপাশি ঈমানদারদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালোবাসাও জরুরি। ৩. পারস্পরিক এ ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য দুই হাদীসে দুটি পথ বলে দেয়া হয়েছে- এক. অধিক হারে সালামের প্রচলন ঘটানো, দুই. পারস্পরিক উপহার আদান-প্রদান।

নবীজী (সা.) আরো বলেছেন, তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া-উপহার দাও। এ উপহার অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। (জামে তিরমিজি : ২১৩০)। উপহারের আদান-প্রদানে সামাজিক বন্ধন যে কতটা বৃদ্ধি পায় তা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এটা আমাদের দেখা বাস্তবতা। পারস্পরিক এ নেয়া-দেয়াটা যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয় তখন দূর-বহুদূরের কারো সঙ্গেও গড়ে ওঠে আত্মার সম্পর্ক। এ সম্পর্ক অনেক সময় ছাড়িয়ে যায় রক্ত ও আত্মীয়তার বাঁধনকেও। এসবই মানুষের স্বাভাবিকতা।

আবার কাছের বা দূরের কোনো আত্মীয় কিংবা কোনো প্রতিবেশী বা বন্ধুর যখন কোনো খুশির উপলক্ষ্য আসে তখন তার সে আনন্দ ভাগ করে নেওয়াটাও আত্মীয়তা, প্রতিবেশ কিংবা বন্ধুত্বের দাবি। সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরেÑ এটা তো ইসলামের শিক্ষাই। তাই কারও বিপদে যেমন পাশে দাঁড়াতে হয়, পাশে থাকতে হয় কারও সুখের সময়ও। এটাই সামাজিকতা। এ নিয়েই আমাদের সমাজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন