পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : রাখাইন রাজ্যে ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রে কোনো ভেদাভেদ না করে সেখানে বসবাসরত সকল মানুষের মৌলিক নাগরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন আসিয়ান নেতারা। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আরো সময় চেয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সু চি গতকাল আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রীদের সাথে ইয়াঙ্গুনে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, রাখাইন প্রদেশে ত্রাণকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হবে, কিন্তু তারা সব জায়গায় যেতে পারবে না। আরাকানের যে সমস্ত জায়গায় রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং ধর্ষণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে, সে সব জায়গায় প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ইয়াঙ্গুনের এই বিশেষ বৈঠকে অং সান সু চি যা বলেছেন, তাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিতে খুব সামান্যই পরিবর্তন হচ্ছে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব চেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠী সম্পন্ন দুটি দেশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার কৃতিত্ব হচ্ছে এখানেই যে তারা অং সান সু চিকে এমন একটি বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য করতে পেরেছে যা তিনি ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মনে করেন।
প্রথমত, তিনি এই বৈঠকটি করতেই চাননি। বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তিনি এর আগে রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যু নিয়ে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু এটাও বলতে হবে যে, এ বৈঠকে সু চি নিজের জায়গা থেকে একটুও নড়েননি। বরং তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করার জন্য এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বলেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি জটিল বিষয় এবং এর নিষ্পত্তি করার জন্য তার সরকার যা করছে তার সুফল পেতে সময় লাগবে।
এক লাখের মতো রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবার ব্যাপারে কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি। সু চি শুধু বলেছেন, ত্রাণ পৌঁছে দেবার প্রয়োজনীয় সুযোগ দেয়া হবে। তবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর যে জায়গাগুলো - যেখানে সৈন্যরা হত্যাকা- ও ধর্ষণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে - সেগুলোতে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।
বৈঠককালে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ধারাবাহিক প্রতিবেদনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। এতে তিনি অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রাম এবং মসজিদগুলো জ্বালিয়ে দেবার বর্ণনা দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত টেক্সট অনুযায়ী জনাব আমান বলেন, ‘আমাদের সরকার উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সহিংসতায় আবারো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যে সহিংসতার কারণে নিরপরাধ মানুষের জীবনহানি ও হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি ‘জাতিগত নির্মূল’ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘গণহত্যা’র এই অভিযোগ দূরীকরণে মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে স্বচ্ছতা বিধানে সময়মতো সব তথ্য সরবরাহ করা এবং ত্রাণকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে দেয়া’।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় পুলিশের ৯ জন সদস্য নিহত হয়। এর পর থেকেই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিপি। এরই মধ্যে সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু দেশটির কথিত গণতন্ত্রপন্থী নেতা সু চি দাবি করেছেন, নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে রাখাইন। এ জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি জাতিসংঘ তাকে আহ্বান করেছে, রাখাইনে সরেজমিন গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। এর পরই সু চি গতকালের আসিয়ানের বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানান। আসিয়ানভুক্ত দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটনো মারসুদি বৈঠকে যোগ দেন। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে আজ (মঙ্গলবার) তিনি ঢাকা সফরে আসবেন। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও আসিয়ানের সদস্য দেশ মালয়েশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে বাংলাদেশেও।
মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নিয়ন্ত্রিত সরকার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি মেনে নিতে রাজি নয়। তারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী এসব মানুষকে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ বলে মনে করে যারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে গিয়ে বসবাস করছে।
বর্তমানে ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমের আশ্রয়দাতা মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে, আমরা এটা ভুলে যেতে পারি না যে, তাদেরও মৌলিক অধিকার রয়েছে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং রাখাইন রাজ্যে কোন ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রে ভেদাভেদ না করে সেখানে বসবাসরত সকল মানুষের মৌলিক নাগরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার অবশ্যই দিতে হবে’।
তিনি রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার না থাকা, গৃহহীনতার মতো বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ খুঁজে বের করা এবং ২০১২ সাল থেকে বাড়িছাড়া মানুষদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ করার জন্য অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটা করা গেলে উত্তেজনা হ্রাস এবং একটি কার্যকর ও টেকসই সমাধানে পৌঁছার পথে অনেক দূর এগোনো যাবে।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকরিশনান বলেন, ‘আসিয়ান মন্ত্রীরা মানবিক ত্রাণ সহায়তাসহ জটিল বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় ছিলেন গঠনমূলক, অকপট ও খোলামেলা’। তিনি বলেন, ‘রাখাইনের বিবদমান সকল গ্রুপের জন্য উপকারী একটি দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধান কীভাবে বের করা যায় তা নিয়ে মন্ত্রীরা মতবিনিময় করেছেন’।
এ মাসে আরো আগের দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব আব্দুর রাজাক কুয়ালালামপুরে রোহিঙ্গাদের সমর্থনে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে’ এবং যেখানে রাখাইনে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং নির্যাতন করা হচ্ছে সেখানে তিনি আর ‘চোখ বন্ধ করে চুপ থাকতে’ পারেন না।
মিয়ানমার সরকার নাজিব রাজাকের এই বক্তব্যকে ‘মানুষকে সহিংসতায় উৎসাহিত করা এবং ধর্মীয় চরমপন্থায় ইন্ধন যোগানো’র অভিযোগ করে। মিয়ানমার বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযোগকে মনগড়া ও রাজনৈতিক কারণে বলে উল্লেখ করে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস এটিকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে যার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে গতকাল প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের বক্তব্যেও। সূত্র : বিবিসি জাকার্তা পোস্ট ও ব্যাংকক পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।