Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে ইউনিলিভার ও ইপসার উদ্যোগে তারুণ্যনির্ভর ক্যাম্পেইন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:৩৯ পিএম

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অন্যান্য মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো ধীরে ধীরে প্রাণশক্তি হারাচ্ছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদীও বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এক সময়ের স্রোতস্বিনী এই কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে এবং বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে, ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) এবং ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) ‘নদীতে প্লাস্টিক না ফেলি’ থিমে একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। গত শনিবার চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত ইউবিএল ও ইপসা আয়োজিত এই ক্যাম্পেইনে প্রায় এক’শ তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ও ইউনিলিভারের কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সম্প্রতি পালিত হওয়া ‘আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস-২০২২’ উদযাপনের অংশ হিসেবে এবং প্রকৃতি থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে এই সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ৩৫ নং ওয়ার্ড-এর কাউন্সিলর হাজী নুরুল হক, ইপসা-এর চিফ এক্সিকিউটিভ মো. আরিফুর রহমান এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর এমপ্লয়ি রিলেশন্স লিড সানাউল্লাহ মল্লিক এর উপস্থিতিতে নগরীর কর্ণফুলী ব্রিজে প্লাস্টিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমটি শুরু হয় এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নদী ও পরিবেশে পলিথিন এবং অন্যান্য প্লাস্টিক ফেলার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারণকে অবহিত করেন। কর্ণফুলী নদীকে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাÐের লাইফলাইন’ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এটি এখন অনিয়ন্ত্রিত দূষণের সবচেয়ে বড় শিকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দুই থেকে সাত মিটার তলদেশ পলিথিন ও প্লাস্টিকে ঢেকে গেছে, আর তাই নদীটি এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, লক্ষ্য করা গেছে- সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষে ও সরকারি ছুটির দিন অনেকেই অবকাশযাপনের জন্য ও নদীরপাড়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে কর্ণফুলী নতুন ব্রিজে জড়ো হন। তখন দর্শণার্থীরা প্রায়ই নদীতে বিভিন্ন সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক দ্রব্য (এসইউপি) যেমন- খাবার প্যাকেজিং, পানির বোতল, চিপস ব্যাগ ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলে রাখেন। এই অসংবেদনশীল কাজ মারাত্মকভাবে নদী দূষণ ঘটাচ্ছে এবং প্লাস্টিক দিয়ে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, ইউবিএল ও ইপসা ‘প্লাস্টিকমুক্ত কর্ণফুলী নদী’ ক্যাম্পেইন চালু করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নগরীর কয়েক হাজার বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবী এবং দর্শণার্থী সঠিক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারেন এবং দূষণমুক্ত কর্ণফুলী সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ইপসা’র সঙ্গে অংশীদারিত্ত্বের ভিত্তিতে একটি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প চালু করেছে এবং বন্দর নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে কাজ করছে ও শহর থেকে ৩২০০ টন ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে।

এ উপলক্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ দ্রæতই বেড়ে চলেছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ইউনিলিভারের বৈশ্বিক লক্ষ্য, আমাদের উৎপাদিত প্লাস্টিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা এবং প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত একটি পৃথিবী গড়তে সচেষ্ট থাকা। প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে একটি টেকসই ভ্যালু চেইন তৈরি করতে আমরা ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও ইপসা ২০২২ সালের শুরু থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর ৪১টি ওয়ার্ডে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। প্লাস্টিক বর্জ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরি সমস্যার টেকসই সমাধানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ; তাই অংশীদার সংগঠন ইপসা’কে সঙ্গে নিয়ে আমরা তারুণ্য-নির্ভর এই সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করেছি। আজ আমাদের কর্মীরা সহ এক শ এর বেশি স্বেচ্ছাসেবক পরিবেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখতে তাদের প্রতিশ্রæতি পূরণ করেছেন এবং আগামী বছর আমরা আমাদের এই ক্যাম্পেইন চট্টগ্রামজুড়ে বাস্তবায়ন করতে চাই।

ইপসা-এর চিফ এক্সিকিউটিভ মো. আরিফুর রহমান বলেন, যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা সহ বেশ কিছু দূষণের কারণে আমাদের চট্টগ্রাম শহর তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। প্লাস্টিকের কারণে আমাদের চট্টগ্রাম শহরের মূল ‘লাইফলাইন’ কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা তৈরিতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে প্লাস্টিক। তাই এখানে উপস্থিত সকল স্বেচ্ছাসেবী বন্ধুরা ও সংগঠনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমরা যেন নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে প্লাস্টিক সংকট বিষয়ে সতর্ক থাকি এবং অন্যদেরও সচেতন করি। সকলের সহযোগিতায় আমরা চট্টগ্রাম শহর ও কর্ণফুলী নদীকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে সক্ষম হব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ