বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জানা আবশ্যক যে, আল্লাহপাকের এই বিশেষ অলীত্ব, বন্ধুত্ব বা নৈকট্যের স্তÍর অগণিত ও অশেষ। এর সীমা-সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এর সর্বোচ্চ স্তর নবী ও রাসূলগণের প্রাপ্য। কারণ, প্রত্যেক নবীরই অলী হওয়া অপরিহার্য। এর সর্বোচ্চ স্তরে সমাসীন আছেন সাইয়্যেদুল আম্বিয়া বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এর পর প্রত্যেক ঈমানদার ও মুত্তাকীগণ তাদের ঈমানী শক্তি ও নৈকট্যের স্তরের বৃদ্ধি-ঘাটতি অনুসারে বেলায়েতের তথা বন্ধুত্বের অধিকারী হবে। সুতরাং নেককার ও পুণ্যবান লোকেরা হলেন ডান দিকের দল।
যারা আল্লাহপাকের কাছে ফরজ আদায়ের মাধ্যমে কুরবত ও নৈকট্য অর্জন করেন। আল্লাহপাক তাদের ওপর যা ফরজ করেছেন তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করেন এবং যা কিছু হারাম করেছেন, তা সর্বোতোভাবে পরিত্যাগ ও বর্জন করেন। তাঁরা নকল কাজের প্রতি কম আগ্রহ বোধ করেন। কিন্তু যারা অগ্রবর্তী নৈকট্য প্রাপ্ত দলের অন্তর্ভূক্ত ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তথা উলুল আজম রাসূলগণের পদ মর্যাদায় অভিসিক্ত, তাঁরা আল্লাহপাকের কাছে ফরজ আদায়ের পর নফল এবাদতের মাধ্যমে নৈকট্য লাভে ধন্য হন। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নফল এবাদতে এতই বিভোর থাকতেন যে, তাঁর কদম মোবারকে কখনো কখনো পানি জমে যেত।
মনে রাখা দরকার যে, নফল সালাত ফরজ সালাতের পরিপূরক হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে করিম (সা.) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দাহর আমলের মাঝে সর্ব প্রথম তার সালাত সম্পর্কে হিসাব নেয়া হবে। আর সালাত যদি যথাযথ সঠিক প্রমাণিত হয় তবে সে সাফল্য অর্জন করবে। আর যদি সালাতের হিসাবই খারাপ হয়, তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
হিসাব অনুসারে সালাতের ফরজে যদি কিছু কম পড়ে, তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তখন বলবেন, তোমরা দেখ, আমার বান্দাহর কোনো নফল সালাত বা নফল এবাদত-বন্দেগী আছে কিনা, যদি থাকে তাহলে এর দ্বারা ফরজের কমতি পূরণ করো। পরে তার অন্যান্য সব আমলের ব্যাপারে এটিই বিবেচিত হবে ও অনুরূপভাবে কমতি পূরণ করা হবে। (জামে তিরমিজী)।
এ পর্যায়ে আরো একটি বিষয় জানা আবশ্যক যে, মহান আল্লাহর অলীগণ অন্যান্য মানুষদের থেকে প্রকাশ্যে বিশেষ কোনো পোশাক বা বেশ ভূষা দ্বারা একান্তভাবে পরিচিত হন না, এমন কি পার্থক্য সৃষ্টিকারী কোনো চিহ্ন ও ধারণ করেন না। তাঁদের চাল-চলন ও কর্মকাণ্ডের সর্বত্রই সহজ-সরল ও স্বাভাবিকতার এবং বিনয়ের ভাব পরিলক্ষিত হয়। সাইয়্যেদুল মুরসালীন (সা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলী তাদের মাঝে বিশেষভাবে ফুটে উঠে। তাদের অস্তিত্ব রয়েছে আল কোরআনের ধারক ও বাহকদের মাঝে; জিহাদে অংশগ্রহণকারী ও আল্লাহর রাস্তায় প্রাণোৎসর্গকারীদের মাঝে হালাল পন্থায়, ব্যবসায়ীদের মাঝে সৎ ও নিষ্ঠাবান বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকদের মাঝে; কারিগর ও কারিগরি বিদ্যায় পারদর্শীদের মাঝে; তাকওয়াবান কৃষক ও শ্রমজীবীদের মাঝে। মোটকথা, সকল শ্রেণির মুমিন-মুসলমানদের মাঝেই আল্লাহর অলীগণের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে, যারা জালেম, অত্যাচারী, সীমালংঘনকারী, আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশাবলীর বিরোধীতাকারী, এবং উম্মতে মুহাম্মাদির মধ্যে প্রকাশ্য বিদআত সৃষ্টিকারীরা কোনো কালেই অলীর মর্যাদা লাভের অধিকারী হবে না। বরং তারা অভিশপ্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।