Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হোক চিরকালীন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ পিএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিরস্ত্র বাঙালির মুক্তি কামনার আন্দোলনে প্রতিটি মানুষকে দ্রোহী, সাহসী এবং প্রশিক্ষণসমেত এক বীরযোদ্ধা করে তুলতে ভারত যে সহায়তা করেছে তা উপমহাদেশের গণতন্ত্রের বাতায়নকে উজ্জ্বীবিত করেছে। আমাদের সংগ্রাম ছিল মুক্তি প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আর মানব মুক্তি প্রতিষ্ঠার। মানব মুক্তির সে মহাসংগ্রামে ভারত-বাংলাদেশ অটুট বন্ধুত্ব ও আস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজো ভারত-বাংলাদেশ সম্মিলিত হয়ে, কাঁধে কাঁধ রেখে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য অব্যাহত কাজ করে যাচ্ছে। এই সম্পর্ক চিরকালীন। আর সংগ্রাম ও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক আচরণ ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে।’

রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন মৈত্রী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন হাজার বছরের। এর গ্লানি ও বঞ্চনার বয়সও তদ্রæপ। অন্যের দ্বারা শাসিত বাঙালি মুক্তির আকাক্সক্ষায় লড়াই করেছে বহুবার, কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। এ অঞ্চলে নানাবিধ কৃষক আন্দোলন বঞ্চনাবোধ থেকে গড়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু ন্যায্য দাবি থাকা সত্তে¡ও সেসব আন্দোলনের সম্পূর্ণ সুফল কৃষক সমাজ কখনোই পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে পারেনি। এরূপ একটি কৃষক সমাজের বাস্তবতাকে অনুধাবন করেও কৃষি অর্থনীতি নির্ভর এ সমাজের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির জন্য স্বাধীন ভূখন্ড ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। তাঁর লড়াইয়ে প্রধান অবলম্বন ছিল বাংলার কৃষক-শ্রমিক-মুটে-মজুর-ছাত্রসহ বাংলার আবালবৃদ্ধবণিতা। এক অর্থে তিনি গোটা বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালি সত্যিকার অর্থেই প্রস্তুতি রেখেছে জনযুদ্ধের। সম্মিলিতভাবে শত্রু মোকাবেলার সকল মানসিক প্রস্তুতি গণমানুষের ছিল। তবু বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হোক। পাকিস্তান বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামকে যৌক্তিকভাবে মেনে নিক। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক সরকার গণতান্ত্রিক পথে না হেঁটে অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করতে চাইলেন। ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালির ওপর নির্লজ্জভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। হত্যা করলো বহুজনকে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি আরও বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের কঠিন-কঠোর নয় মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গেরিলা যুদ্ধ আত্মস্থ করলেন। যে তরুণ-যুবক-পরিণত বয়সের মানুষ যুদ্ধ বা অস্ত্র চালাতে জানতো না, সে হয়ে উঠলো গেরিলা যোদ্ধা। তার চোখ ভরা স্বপ্ন শত্রুকে পরাজিত করা আর প্রিয় দেশমাতৃকাকে মুক্ত করা। মুক্তির আকাক্সক্ষায় জাগ্রত কৃষক-শ্রমিক-জনতা যে সম্মিলিত জনযুদ্ধ গড়ে তুললো তার কাছে পরাভ‚ত হলো পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। সেইসঙ্গে পরাভ‚ত হলো পাকিস্তানকে দেয়া সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশ বিনির্মাণবিরোধী আন্তর্জাতিক চক্র। সেই কঠিন দুঃসময় ও দুর্দিনে পৃথিবীর আরো বহু রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে আমাদের পাশে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আশ্রয় ও দায়িত্ব নিয়ে পাশে দাঁড়ালো আমাদের বহু পরীক্ষিত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের লড়াইয়ে ভারত এক অকৃত্রিম বন্ধু। কোটি শরণার্থীকে শুধু আশ্রয় দেয়াই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণদান, মিত্রবাহিনী গঠন, যৌথভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক লড়াই, বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়, অর্থনৈতিক সহায়তা, কোটি শরণার্থীকে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালনসহ বাঙালির পাশে সেদিন ভারত নিবিড় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমাদের মুক্তি সংগ্রামে অনন্য ভ‚মিকা

পালন করেছেন। পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রনায়ককে তিনি নিজে সচেষ্ট হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বগুণ ও শোষিত মানুষের জন্য তাঁর যে ভালোবাসা সে বিষয়ে ইন্দিরা গান্ধীর ছিল প্রবল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মূলত বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন এক ক্যারিশমেটিক লিডার যাঁকে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও আধুনিকবোধসম্পন্ন মানুষ ও নেতৃবৃন্দ পছন্দ করবেন সেটিই ছিল স্বাভাবিক। ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠার অনাগত পথে চিরকালীন বন্ধুত্ব নিয়ে দুটি রাষ্ট্র বন্ধুপ্রতীম হয়ে এগিয়ে গেলে বিশ্ব এক নবতর প্রশান্তির পতাকার আশ্রয় খুঁজে পাবে। কেননা, আমাদের পতাকায় লাল সবুজের আচ্ছাদনে মানবমুক্তির আকাক্সক্ষা বিচ্ছুরিত হয় অহর্নিশ।’

বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের আহŸায়ক বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রনয় ভার্মা, আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইদুর রহমান সজল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব নারায়ণ সাহা মনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ