মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রখ্যাত লেখক নিয়াল ফার্গুসনের ‘এম্পায়ার হাউ ব্রিটেন মেড দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড’ এবং ব্রæস গিলের ‘দ্য লাস্ট ইম্পেরিয়ালিস্ট’-এর মতো বইগুলোতে দাবি করা হয়েছে যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ভারত উপমহাদেশে ও অন্যান্য উপনিবেশে সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন এনেছে। কিন্তু ঔপনিবেশিকতার এই রঙিন উপস্থাপনা ঐতিহাসিক তথ্যের সাথে নাটকীয়ভাবে সঙ্ঘাতপূর্ণ। অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ রবার্ট সি অ্যালেনের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারত অঞ্চলে দারিদ্র্য চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা ১৮১০ সালে ২৩ শতাংশ থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি। ব্রিটিশ আমলে প্রকৃত শ্রম মজুরি হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছায়। তখন দুর্ভিক্ষ আরো ঘন ঘন এবং আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ভারতীয় জনগণের জন্য উন্নয়ন নয় বরং একটি মানবিক বিপর্যয় ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৮৮০ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদ ভারতের জন্য বিশেষভাবে ধ্বংসাত্মক ছিল। ১৮৮০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতিগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন, মাওবাদী চীন এবং উত্তর কোরিয়ার মিলিত সমস্ত দুর্ভিক্ষের চেয়ে বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, যার সংখ্যা ন্যূনতম ১০ কোটি। এটি মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নীতি-জনিত মৃত্যু সঙ্কট, যা সোভিয়েত ইউনিয়ন, মাওবাদী চীন, উত্তর কোরিয়া, পোল পটের কম্বোডিয়া এবং মেঙ্গিস্তুর ইথিওপিয়াতে সংঘটিত সমস্ত দুর্ভিক্ষ জনিত মৃত্যুর সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বড়।
ব্রিটিশ শাসনামলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটানোর জন্য দায়ী ছিল বেশ কিছু নীতি। প্রথমত, ব্রিটেন কার্যকরভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের উৎপাদন খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ঔপনিবেশিকতার আগে, ভারত ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প উৎপাদক, বিশ্বের সব প্রান্তে উচ্চমানের টেক্সটাইল রফতানি করত। ইংল্যান্ডে উৎপাদিত টাউড্রি কাপড় সহজভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারতো না। এর পরিবর্তন হতে শুরু করে, যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে বাংলা অধিগ্রহণ করে।
ইতিহাসবিদ মধুশ্রী মুখার্জির মতে, ঔপনিবেশিক শাসন কার্যত ভারতীয় শুল্ক লোপ করে দিয়ে ব্রিটিশ পণ্যগুলোকে অভ্যন্তরীণ বাজার সয়লাব করার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু অত্যধিক কর এবং অভ্যন্তরীণ শুল্ক ব্যবস্থা তৈরি করে তারা ভারতীয়দের নিজেদের দেশে কাপড় বিক্রি করতে বাধা তৈরি করে।
এই অসম বাণিজ্য ব্যবস্থা ভারতীয় ব্যবসায়ী ও নির্মাতাদের পিষে ফেলে এবং কার্যকরভাবে দেশটিকে শিল্পহীন করে। ১৮৪০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যান্ড চায়না অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গর্ব করে বলেছিলেন, ‘এ কোম্পানি ভারতকে একটি উৎপাদনকারী দেশ থেকে কাঁচা পণ্য রফতানিকারী দেশে রূপান্তরিত করতে সফল হয়েছে।’ ভারতকে দারিদ্র্য নিমজ্জিত করে ইংরেজ শিল্প মালিকরা একটি অসাধারণ সুবিধা লাভ করেছিল এবং এই উপমাহদেশের লোকেরা ক্ষুধা ও রোগের শিকার হয়েছিল। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গড়ায়, যখন ব্রিটিশরা আইনী কৌশলে লুণ্ঠনের একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যা সমসাময়িকদের কাছে ‘সম্পদের শোষণ’ হিসাবে পরিচিত। ব্রিটেন প্রধমে ভারতীয় জনগণের উপর কর আরোপ করে এবং তারপর ভারতীয় পণ্য নীল, শস্য, তুলা এবং আফিম কেনার জন্য ভারতীয় রাজস্ব ব্যবহার করে। এভাবে তারা এসব পণ্য বিনামূল্যে পেয়ে যায়।
এসব পণ্য সেসময় হয় ব্রিটেনের ব্যবহৃত হত বা সেখান থেকে বিদেশে পুনরায় রফতানি করা হত এবং ব্রিটেনের পকেটে সেই রাজস্বগুলো ঢুকতো। দেশটি তার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো উপনিবেশগুলোতে শিল্পোন্নয়নের জন্য অর্থায়নে ব্যবহৃত হত। এভাবে ব্রিটেন আজকের অর্থমূল্যে ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য ভারত থেকে শোষণ করেছে। ব্রিটিশরা তাদের শোষণ নীতি চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে চরম নির্দয় ছিল। এমনকি, খরা বা বন্যা স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেললেও তারা ভারতকে খাদ্য রফতানি করতে বাধ্য করেছিল। ইতিহাসবিদরা প্রমাণ করেছেন যে, ১৯ শতকের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ নীতি-প্ররোচিত দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ ভারতীয় অনাহারে মারা গিয়েছিল, কারণ তাদের সম্পদ ব্রিটেন এবং এর বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশগুলোতে চলে গিয়েছিল। ঔপনিবেশিক প্রশাসকরা তাদের নীতির পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন। কিন্তু তারা জেনেশুনে মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে থাকেন এবং লাখ লাখ লোককে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাখেন। সূত্র : আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।