বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন তাওহীদের দিকে এবং সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করার নির্দেশ দিয়ে সূরা আশ শুয়ারার ১৫ নং আয়াতে ১০টি বিধান দিয়েছেন। গত আলোচনায় আমরা ৪টি বিধান বর্ণনা করেছিলাম। আজকের আলোচনায় বাকি বিধানগুলো আলোচনা করার চেষ্টা করা হলো। পঞ্চম বিধান: আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে। এই ব্যাপকার্থক আয়াতাংশের বা বাক্যের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যথা : (১) আমি সকল প্রকার দলাদলি থেকে দূরে সরে নিরপেক্ষ ন্যায়-নিষ্ঠা অবলম্বনের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কোনো দলের স্বার্থে এবং কোনো দলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করা আমার কাজ নয়। সকল মানুষের সাথে আমার সমান সম্পর্ক। আর সে সম্পর্ক হচ্ছে ন্যায়বিচার ও ইনসাফের সম্পর্ক। যার যে বিষয়টি ন্যায় ও সত্য সে যত দূরেরই হোক না কেন আমি তার সহযোগী, আর যার যে বিষয়টি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী সে আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও আমি তার বিরোধী।
(২) আমি তোমাদের সামনে যে সত্য পেশ করার জন্য আদিষ্ট, তাতে কারো জন্য কোনো বৈষম্য নেই। বরং তা সবার জন্য সমান। তাতে নিজের-পরের, বড়র-ছোটর, গরীবের-ধনীর, উচ্চের-নীচের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সত্য নেই। বরং যা সত্য তা সবার জন্য সত্য। যা গোনাহ তা সবার জন্য গোনাহ। যা হারাম তা সবার জন্য হারাম এবং যা অপরাধ তা সবার জন্য অপরাধ। এই নির্ভেজাল বিধানে আমার নিজের জন্যও কোনো ব্যতীক্রম নেই।
(৩) আমি পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিষ্ট। মানুষের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করা এবং তোমাদের জীবনেও তোমাদের সমাজে যে ভারসাম্যহীনতা ও বে-ইনসাফী রয়েছে, তার ধ্বংস সাধনের দায়িত্ব আমাকে প্রদান করা হয়েছে। পারস্পারিক বিবাদ-বিসংবাদের কোনো মোকদ্দমা আমার কাছে আসলে তাতে ন্যায় বিচার করার নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে।
(৪) এখানে আদলের অর্থ সাম্য। সুতরাং আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, দ্বীনের যাবতীয় বিধি বিধান তোমাদের মধ্যে সমান সমান রাখার। প্রত্যেক নবী ও প্রত্যেক কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করার এবং সকল বিধান পালন করার। এরূপ নয় যে, কোনো বিধান মানবো এবং কোনোটি অমান্য করব। কিংবা কোনোটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব ও কোনোটির প্রতি করব না।
ষষ্ঠ বিধান : আল্লাহকেই আমি একমাত্র রব বা প্রতিপালক হিসেবে মানবো। তিনি আমাদের ও তোমাদের প্রতিপালক। একথা যদি তোমরা স্বীকার করে থাক, তাহলে তোমাদেরকে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে। তবে, তোমরা এটা মানতে রাজি নও। কিন্তু আমি মানি। আর আমার অনুসারীরা সবাই এটা মেনে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে।
সপ্তম বিধান : আমাদের কর্ম আমাদের কাজে আসবে তাতে তোমাদের কোনো লাভ লোকসান হবেনা। আর তোমাদের কর্ম তোমাদের কাজে আসবে। আমার তাতে কোনো লাভ ও ক্ষতি নেই। মূলত : দলিলের মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর তোমাদের না মানা কেবল শত্রুতা ও হঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয়। বিচার দিবসে তোমাদের কর্মফল তোমাদের সামনে এবং আমার কর্মফল আমার সামনে থাকবে।
অষ্টম বিধান : সত্য সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত হওয়ার পরও যদি তোমরা শত্রুতাকেই কাজে লাগাও, তাহলে তোমাদের সাথে তর্ক-বিতর্কের কোনো অর্থ নেই। সুতরাং আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এমন কোনো বিতর্কই নেই।
নবম বিধান : কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক আমাদের সকলকে একত্র করবেন এবং প্রত্যেকের কর্মের প্রতিদান দেবেন।
দশম বিধান : আমরা সকলে আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তন করব। সুতরাং তোমরা চিন্তা করে দেখ, কি কাজ করলে তখন তোমরা উপকৃত হবে। (তাফসীরে ইবনে কাসির, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে কাতহুল কাদীর)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।