গতকাল দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লিওনেল মেসি খেলতে নেমেছিলেন তার ১০০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। যেকোনো ফুটবলারের জন্যই এতগুলো ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য একটি বিশাল ব্যাপার।মাইলফলক ম্যাচে এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা আলো ছড়ালেন পুরোনো ৯০ মিনিট।তার গোলেই প্রথম লিড নেয় আর্জেন্টিনা।পরে ব্যবধান দিগুণ করেন আলভারেজ।শেষদিকে মেসির বানিয়ে দেওয়া সুযোগ সতীর্থরা ঠিকাটাক কাজে লাগাতে পারলে আলবিসেলেস্তেরা জয় পেতে পারত আরও বড় ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়া শেষদিকে একটি গোল শোধ করেছে বটে, তবে এর আগে ও পরে আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগকে বলার মত কোন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।শেষ পর্যন্ত স্কেলোনির দল ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। উঠে যায় কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে তারা মুখোমুখি হবে দিনের প্রথম ম্যাচে জয়ী নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
কাতারের আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে এ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও আর্জেন্টিনা দুই দলই শুরুটা করেছিল বেশ শান্তভাবে।ম্যাচের প্রথম ত্রিশ মিনিট বলার মত কোন সুযোগ তৈরী করতে পারেনি কেউই।ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ দেখে বিবিসির ধারাভাষ্যকার এক পর্যায়ে বলেই বসলেন নিরপেক্ষ ফুটবল দর্শকদের জন্য ম্যাচটা বেশ বিরক্তিকর হতে চলেছে। সেই ম্যাচে হঠাৎ প্রাণসঞ্চার করলেন লিওনেল মেসি।৩৫ তম আর দুর্দান্ত বলেন লিভ নেয় আর্জেন্টিনা।ডি বক্সের বাইরের থেকে পাস বাড়িয়েছিলেন গোমেজ। সেটি বক্সে থাকা ডিফেন্ডার ওটোমান্ডি পায়ের আলতো ছোঁয়ায় বাড়িয়ে দেন মেসির দিকে।
মেসির সামনে তখন নিশ্চিদ্র দেয়াল তৈরি করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডাররা। তবে বা পায়ের নিখুঁত কারুকাজে রক্ষণ দেয়াল ভেঙে এই জাদুকরের নেওয়া শট ঠিকই খুজে নেয় জাল। এই গোলের মাধ্যমে ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সব থেকে বেশি বয়সে গোল করার রেকর্ড নিজের নামে করলেন এই ৩৫ বছর বয়সি আর্জেন্টাইন তারকা। বিশ্বকাপের নকআউট মঞ্চে এটি মেসির প্রথম গোল।
এগিয়ে থেকেই বিরতিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ারদের শুরুতেই আলভারেজের গোলে ব্যবধান দিগুণ করে আলবিসেলেস্তেরা।তাতে অবশ্য বড় অবদান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের । ব্যাক পাসে অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়ে বল বিপদজনক জায়গায় হারান।সেই সুযোগে এগিয়ে গিয়ে বল জালে জড়ান হুলিয়ান আলভারেজ।
প্রথমার্ধে গোল পেলেও মেসি মূলত উজ্জ্বল ছিলেন বিরতির পরেই।অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলাররা তাকে কোনভাবেই আটকে রাখতে পারছিলেন না।রীতিমত তেড়েফুঁড়ে ক্ষণে ক্ষণে হানা দিচ্ছিলেন প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগে।যদিও বাকিদের সহযোগিতা না পাওয়ায় তার কোনটিকে দিতে পারেননি সফল পরিণতি।
৭৭তম মিনিটে সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্যবধান কমিয়ে লড়াই জমিয়ে তোলে সকারুরা। ক্রেইগ গুডউইনের জোরাল শট এনসো ফের্নান্দেসের মুখে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজের এ গোলে করার কিছুই ছিলনা।
তবে গোল খেয়েও আর্জেন্টিনা আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলেছে। এসময় মেসির তৈরী করা একাধিক সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি লাউতারো মার্টিনেজ।বিশেষ করে ৮৯ তম মিনিটে পেলেয়ার কখনো শেষ করার তোকে দিতে পারতেন এই স্ট্রাইকার। মাঝমাঠ থেকে বল বানিয়ে এনে মেসির বাড়ানো পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে উড়িয়ে মারেন ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড।যোগ করা সময়ে তার নেওয়া জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক। শেষ মুহূর্তে সমতাসূচক কোথায় থেকে প্রায় পেয়ে যাচ্ছিল সকারুরা।তবে গোলরক্ষক মার্টিনেজ বীরত্বে বেচে যায় আলবিসেলেস্তেরা।
আগামী শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও তিনবারের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডস।