বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামে আজান প্রবর্তনের ইতিহাস একটি সমুজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ অধ্যায়ের আলোকরশ্মী রোজ কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্বময় সত্যালোকের কিরণ বিতরণ করতে থাকবে। রাহমাতুল্লিল আলামীন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে ওহী লাভ করেন, এই মক্কা মোয়াজ্জমায় তার প্রচার কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর যাবৎ মক্কার কাফিরদের নির্যাতন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি আল্লাহপাকের নির্দেশ ক্রমে তিপ্পান্ন বছর বয়সে মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন।
মদীনায় হিজরত করার পর ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি তিনি সর্ব প্রথম মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। ফলে, সকল সাহাবায়েকেরাম জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে সমস্যা ছিল এই যে, নামাজের সময় হলে মানুষকে নামাজের জন্য আহ্বান করার কোনো উত্তম পন্থা জানা ছিল না বিধায় বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল সাহাবাদেরকে নিয়ে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করলেন। আলোচ্য সভায় এ ব্যাপারে কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যেমন : (ক) নামাজের সময় হলে ঝান্ডা বা পতাকা উত্তোলন করা হোক। (খ) বড় পরিসরে আগুন প্রজ্বলিত করা হোক। (গ) শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হোক। (ঘ) ঢোল বাজানো হোক।
কিন্তু আলোচ্য সভায় উত্থাপিত প্রস্তাব সমূহের কোনোটিই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হলো না। কারণ, যারা দূরে কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকবে, তারা পতাকা দেখতে পাবে না। তাই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি বাতিল বলে ঘোষিত হল। এ কারণে যে, অগ্নিপ্রজ্বলিত করা অগ্নি পূজকদের কাজ।
এ কাজ ইসলামের নিদর্শন হতে পারে না, আর তৃতীয়টি খৃস্টানদের কাজ। তারা গির্জায় শিঙ্গা ফুতকার করে থাকে। আর চতুর্থটি ইহুদিদের কাজ। তারা ঢোল বাজিয়ে উপাসনা করে থাকে। এ জন্য সবগুলো প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যাত হয়। তারপর পরামর্শ সভা সে দিনের মতো সমাপ্ত ঘোষিত হয় এবং সকলেই নিজ নিজ বাসস্থানে প্রত্যাবর্তন করেন।
কিন্তু উক্ত রাতেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) স্বপ্নে দেখেন যে, এক ব্যক্তি শিঙ্গা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হে ভাই! তুমি আমার নিকট শিঙ্গাটি বিক্রয় কর। এর মাধ্যমে আমি মানুষকে নামাজের জন্য আহ্বান করব। লোকটি বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়েও উত্তম পদ্ধতি শিক্ষা দেব? এ কথা বলে তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) কে আযানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দেন। রাত শেষ হলেই তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে স্বপ্নের ঘটনাটি খুলে বললেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর কথার সত্যতা স্বীকার করে নিলেন এবং আজানের বাক্যগুলো হযরত বেলাল (রা.) কে শিখিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সে মোতাবেক হযরত বেলাল (রা.) যোহর নামাজের আজান দিলে আজানের শব্দ শুনে হযরত ওমর (রা.) ছুটে আসলেন এবং বললেন, আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি। এভাবে সে রাতে ১৪জন সাহাবী একই স্বপ্ন দেখেছেন। আর সে দিন থেকেই আজানের রীতি চালু হয়ে যায়, যার ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।