Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকেই প্রতিদিন জাতীয় গ্রীগে যুক্ত হবে ১২ শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মাতারবাড়ি আল্ট্রা পাওয়ার বিদ্যুৎ প্রকল্প

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪:৫৩ পিএম

অনেক জল্পনাকল্পনা পেছনে ফেলে

দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে
বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি-আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন 'মাতারবাড়ি ১২শত মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট' বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ৫শত জন ব্যক্তি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার্বিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজে যুক্ত রয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের তিন চতুর্থাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুই ইউনিটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই একটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ
শুরু করবে। এর কয়েক মাসের মধ্যেই অপর ইউনিটেও শুরু হবে উৎপাদন। এ অবস্থায় মহেশখালী দ্বীপ থেকেই প্রতিদিন ১২শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত হবে জাতীয় গ্রীডে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- পরিবেশগত ভাবে কোনো প্রকার ক্ষতির আশংকা ছাড়াই মাতারবাড়িতে উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড়ো অবদান রাখবে।

গত বুধবার একদল সাংবাদ কর্মী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেন্দ্রের সকল স্থাপনা ও অবকাঠামো সাংবাদিকদের ঘুরে দেখিয়েছেন। কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি কেন্দ্র সাংক্রান্ত সার্বিক তথ্যও তুলে ধরেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এই নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেন, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, সংক্ষেপে যা সিপিজিসিবিএল হিসেবে পরিচিত। সিপিজিসিবিএল এর কর্মকর্তারা বলছেন, মূলতঃ এটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও জুলাই মাসে কেন্দ্রের আলাদা দুইটি ইউনিট
বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যাবে।

সাংবাদিকদের পরিদর্শনকালে এক সংবাদ ব্রিফঙ-এ কেন্দ্রটির তড়িৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান সরকার বলেছেন, ১২শত মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি- আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পুরুদমে এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি, আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ৬শত ইউনিট এবং একই বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ৬শত মেগাওয়াটের ইউনিট বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যেতে পারবে।

বিষয়টির আরও বিশদ বিবরণ দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মিজানুর রহমান বলেন, আগামী বছরের পুরুটা সময় আমাদের হাতে আছে, এক'শ মতো বিদেশীসহ এখানে কাজ করছেন মোট ১হাজার ৪শত ১০জন বিভিন্ন স্তরের জনবল। এরই মধ্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দুইটি ইউনিটে প্রতিদিন ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দরকার পড়বে। এই কেন্দ্র পরিবেশগত ভাকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কেন আশঙ্কা নাই।

মূলতঃ কয়লার জন্য পরিবেশ সম্মত উপায়ে কোল্ড ইয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। বড় ভ্যাসেল থেকে কয়লা নামিয়ে এই কোল্ড ইয়ার্ডে রাখা হবে। কোল্ড ইয়ার্ডটি সার্বিক ভাবে আচ্ছাদিত অবস্থায় থাকার কারণে ঝড়-বৃষ্টিতে কয়লা ছড়িয়ে পরিবেশগত ভাবে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না। সমুদ্র পথেই বিদেশ থেকে কয়লা আনা হবে। প্রাথমিক ভাবে কয়লা আমদানির জন্য তিনটি দেশকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। আপাতত অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়াকে কয়লা আনার জন্য বাছাই করা হয়েছে। তাছাড়া এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজও শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে ইতোমধ্যে এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৮৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, পরিবেশের দিকটা খেলাল রেখে কেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাগরে কোনো প্রকার বর্জ্য যেতে দেওয়া হবে না।

তাছাড়া সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন ও পানি শোষন ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই কেন্দ্রে কম পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে এবং কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। ফলে বায়ুদূষণসহ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে। এছাড়া নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ রোধ করার জন্য লোরেট বার্নার স্থাপন করা হবে। যেখানে সাফ-বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করা হবে।

এদিকে মাতারবাড়িতে এ বিদ্যুৎ স্থাপনের পটভূমিতে স্থানীয় বাসিন্দারাও বেশ উৎফুল্ল। স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাতারবাড়িকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করবে। মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএ ছমি উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁরেই দেওয়া বিশেষণ দ্বিতীয় টুঙ্গি পাড়া খ্যাত মাতারবাড়িতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে তিনি মাতারবাড়িবাসীকে আরও একবার মূল্যয়ণ করেছেন। এ নিয়ে মাতারবাড়িবাসী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেবে এই প্রকল্প। আমরা প্রত্যাশা করছি সময়মত কাজটি শেষ হবে। ২০১৭ সালের আগস্টে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কয়লাবিদ্যুৎ ও গভীর সমুদ্র বন্দরের মোট আয়তন ১ দশমিক ৮ একর। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮শ ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। শুরুতে মূল প্রকল্প বায় ছিল ৩৫ হাজার ১৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ৫১,৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা হয়েছে।

এ বিষয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ-সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মাতারবাড়ি আল্ট্রা পাওয়ার প্রকল্পটির ইতিবাচক দিক হচ্ছে, সময়মতো কাজটি এগিয়ে যাওয়া। আমরা আশা করছি- ২০২৪ সালে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১২ শত মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবো এবং এই প্রকল্পের কারণে একটি পোর্ট নির্মাণ হয়েছে। যেটিকে মাল্টিপল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর বাণিজ্যিকভাবে রুপান্তর করতে যাচ্ছি। ভূ- প্রকৃতির পরিবেশে এই বন্দর নির্মিত হচ্ছে- এটাই আমাদের বড় অর্জন। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ