Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিলাওয়াল ভুট্টোর পাল্টা দাবি, একাত্তরে পরাজয় ‘সামরিক ব্যর্থতায়’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৩৬ পিএম

পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কারণ সামরিক নয় বরং ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ ছিল বলে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মন্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহ পর তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাজয়কে ‘সামরিক ব্যর্থতা’ হিসেবে দাবি করেছেন দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) এই প্রধান। -ডন

বুধবার করাচির নিশতার পার্কে পিপিপির ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক সমাবেশে বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানের ‘সামরিক ব্যর্থতা’ তার নানা ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো নেতৃত্বাধীন পিপিপির জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছিল। সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় পিপিপির এই চেয়ারম্যান তার দলের ইতিহাসের স্মৃতিচারণ এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতার কৃতিত্বের কথা তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর তার নানা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ‘বিভক্ত হয়ে যাওয়া পাকিস্তান’কে ঐক্যবদ্ধ এবং ‘হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার’ করেন বলেও উল্লেখ করেন বিলাওয়াল ভুট্টো।

তিনি বলেন, ‘জুলফিকার আলি ভুট্টো যখন সরকারের দায়িত্ব নেন, তখন লোকজন ভেঙে পড়ে ছিল এবং সব আশা হারিয়ে ফেলে ছিল। কিন্তু তিনি জাতিকে পুনর্গঠিত করেন, লোকজনের আস্থা ফিরিয়ে আনেন। শেষ পর্যন্ত সামরিক ব্যর্থতার কারণে যারা যুদ্ধবন্দি হয়েছিলেন, সেই ৯০ হাজার সৈন্যকেও ফিরিয়ে আনেন তিনি। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছিল রাজনৈতিক আশা... রাজনৈতিক ঐক্য... এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির কারণে।’ গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক ব্যর্থতা দায়ী বলে মন্তব্য করেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়া সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।

বাংলাদেশে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেন দেশটির সাবেক এই সেনাপ্রধান। এসময় তিনি বলেন, এমন একটি বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করছেন, যা বেশিরভাগ মানুষই এড়িয়ে যান। বাজওয়া বলেন, ‘আমি কিছু তথ্য সংশোধন করে দিতে চাই। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) আলাদা হয়ে যাওয়া সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।’ তিনি বলেন, পাকিস্তানের লড়াইরত সৈন্যের সংখ্যা ৯২ হাজার নয়, বরং ৩৪ হাজার ছিল। বাকিরা সরকারের বিভিন্ন দফতরের ছিলেন। এই ৩৪ হাজার সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২ লাখ ৫০ হাজার সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর ২ লাখ সদস্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এসব কঠিন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের সেনাবাহিনী সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছে এবং অনুকরণীয় ত্যাগ স্বীকার করেছে; যা ভারতীয় সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেকশ স্বীকার করেছেন।

ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় বুধবার বিলাওয়াল ভুট্টো পিপিপির ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, তার দলের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করার ও ‘পুতুল নেতৃত্ব’ শক্তিশালী করার প্রয়াসে তাদের হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের বিরোধীদল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের সমালোচনা করে বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, ইমরানের খানের দাবির প্রেক্ষাপটে খাইবারপাখতুনখাওয়া এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদ থেকে কখনই পদত্যাগ করবে না পিটিআই। কারণ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা এবং ‘ইউ-টার্ন’ নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের।



 

Show all comments
  • মাহবুব উল্লাহ ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:২৭ পিএম says : 0
    ৭১ এ গণহত্যার নায়কের নাতীর শয়তানী কথা বার্তা এখনো যায়নি
    Total Reply(0) Reply
  • Tuhin Jabir ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
    একাত্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর ইসলাম চুত্যিই বিভক্তির কারণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Tuhin Jabir ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
    একাত্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর ইসলাম চুত্যিই বিভক্তির কারণ।
    Total Reply(0) Reply
  • আমিনুল ইসলাম ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৫ এএম says : 0
    ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমন্বয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠনই ভৌগোলিক ভাবে একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এক দিকে দুটি একই রাষ্ট্রের দুটি প্রদেশের মধ্যে হাজার মাইলের ব্যবধান,দুই অঞ্চলের মানুষের ভাষাগত পার্থক্য, এক প্রদেশ থেকে অন্য একটি দেশের উপর দিয়ে অন্য প্রদেশে যাতায়াত রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংগায় জন্মগত দিক থেকেই এটি ছিল বিকলাঙ্গ। অপরদিকে তৎকালীন সময়ে বৃটিশদের সাথে নতুন দেশ গঠনে দেনদরবারে নেতৃত্ব দানকারী পশ্চিমাংশের নেতারা একদিকে যেমন ইন্ডিয়ার সাথে আপোষ করে তাদের সুবিধাজনক ভাবে ভৌগোলিক সীমানা বুঝে নিয়েছিলেন অন্য দিকে শুরু থেকেই তারা প্রধান্য পূর্ব পাকিস্তানের উপর প্রধান্য বিস্তারে প্রথমেই এই অঞ্চলের মানুষের ভাষার উপর আঘাত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ অঞ্চলের ভাষা সচেতন নেতৃত্বের কাছে তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও তারা থেমে থাকেনি। তারা সকল ক্ষেত্রেই এ অঞ্চলের জনগনকে স্বাধীন দেশের নাগরিকের অধিকার থেকে বন্চিত করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিল।কিন্তু পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী এতে কর্নপাত না করে এ অঞ্চলের উপর তাদের শাসন শোষণ চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবে চলে যায় প্রায় ২৪ বছর। এ অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সংগ্রামের সার্বিক দায়িত্ব আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কাধে তুনে নেন বাংলার অবিসংবাদিত নতা শেখ মুজিবুর রহমান। তার জোরালো নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী হার মেনে দেশে শামরিক শাসনের মধ্যেই ১৯৭০ সালে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও দ্বিতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টুর কু পরামর্শে শামরিক শাসক ইয়া এহিয়া সাংবিধানিক ভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠত দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর তাদের অন্চলের সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত বিশাল সেনাবাহিনী দ্বারা নির্মম হত্যাজগ্ঝ শুরু করে। কিন্তু অকুতোভয় বাংঙ্গালীদের দৃঢ় প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক চাপে জুলফিকার আলি ভুট্টোর বাঙালী দমনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পাকিস্তান ভেঙ্গে বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম হয়। দীর্ঘ ৫১ বছর পরে হলেও পাকিস্তানী সেনা বাহিনী তাদের ভুল স্বীকার করে জুলফিকার আলি ভুট্টোর রাজনৈতিক হটকারী সিদ্ধান্তের পরিনতিতে পাকিস্তানের ভাঙ্গনের সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছেন। যদিও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় বহু আগেই এ সব বিষয় লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।। এখন তারা শুধু তাদের ভুলটুকু নিজ মুখে স্বীকার করলেন। কিন্তু এ সম্পর্কে ভুট্টাের নাতি পুনরায় ভুল পথেই হাটছেন। সে কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি? ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কি ফল বয়ে আনে সেটাকি সে তার নানা জুলফিকার আলি ভুট্টোর করুন পরিনতি থেকেও শিক্ষা পায়নি। রাজনীতির সমাধান রাজনীতির মাধ্যমেই করতে হয়। যুদ্ধ দিয়ে রাজনীতির সমাধানের চেষ্টা যে দেশেই করা করা হয়েছে তার ফল কখনোই ভালো হয় নি। রাজনীতিবিদরা রাজনীতিকে ভেল্কিবাজি না ভেবে যতদিন না সুষ্ঠু মানষিকতা নিয়ে রাজনীতি করবে তত দিন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা আশা করা যায় না। আর বর্তমান সময়ে অস্ত্র ও আধিপত্যবাদের যে প্রতিযোগিতা চলছে তাতে কে কাকে থামাবে এ প্রশ্নই বড় বিষয় হয়ে মানুসকে আতংকিত করে তুলেছে। আমরা আধিপত্যবাদ বা যুদ্ধ কোনটাি চাই না। সবসাই বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করবে এ প্রত্যাশা রইল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ