Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আযান অন্তরের গহিনে নাড়া দেয়া এক আহ্বান-১

সৈয়দ শামছুল হুদা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ১ ডিসেম্বর, ২০২২

পৃথিবীতে ছোট-বড় অনেক বহু ধর্ম আছে। আছে প্রত্যেক ধর্মের ইবাদত-উপাসনার আলাদা আলাদা পদ্ধতি। ইসলাম ধর্মের একটি বড় ইবাদত নামাযের দিকে আহ্বানের জন্য রয়েছে আযান। আযান ইসলাম ধর্মের এক অনন্য অনুপম আদর্শ। আল্লাহ প্রদত্ত ও তাৎপর্যমণ্ডিত এক নিদর্শন।

ইসলাম ধর্মে দিন-রাত মিলিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার নামাজের জন্য আযানের মাধ্যমে আহ্বান করতে হয়। ইথারে ইথারে মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে আযানের সুমধুর আওয়াজ। মন মাতানো সেই সুরতরঙ্গ মুমিনের হৃদয়কে করে তোলে আনন্দিত। প্রেরণা দিয়ে যায় ঐশী এক জাগরণের।

ইসলামের সুন্দর বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো আযান। এটা শুধুমাত্র ইবাদতের একটি আহ্বানই নয় বরং এর রয়েছে গভীর প্রভাব। মু’মিন হৃদয়ের গহিনতলে ঝড় তোলা এক আহ্বানের নাম আযান। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল ইবনু রাবাহ রাদিয়াআল্লাহু আনহু। বংশসূত্রে তিনি হাবশী। তাঁর অসাধারণ আযানে মুখরিত হয়ে উঠত মক্কা ও মদীনার আকাশ-বাতাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর যখন বিলাল রা. মদীনার উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে তাঁর হৃদয়কাড়া আযান দেন, তখন সমস্ত মদীনায় কান্নার রোল পড়ে যায়। আযানের প্রভাব এত বেশিÑ যে কারণে আজকের পাশ্চাত্য সমাজ প্রকাশ্যে আযান দেয়ার মতো একটি ইবাদতের আহ্বানকেও অনুমতি দিতে চায় না।

ইসলামে আযানের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি যিনি মুয়াজ্জিন তাঁর রয়েছে অনেক সম্মান। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যদি জানত আযান ও নামাযের প্রথম কাতারের মধ্যে কী পুণ্য রয়েছে, তাহলে এ দু’টি কাজ সম্পন্নের জন্য লটারির ব্যবস্থা করা লাগত। (বুখারী)’। অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান রা. বলেন, আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের গর্দান অনেক দীর্ঘ হবে। (মুসলিম শরীফ)।’ অর্থাৎ একজন মুয়াজ্জিনের অনেক মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে। কিয়ামতের দিন আযানদাতার জন্য আযান সাক্ষ্য হবে। শুধু সাক্ষ্যই নয়, কিয়ামতের দিন আযান মুয়াজ্জিনের জন্য ক্ষমার দুআ করে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, ‘ইমাম হলো জামিনদার আর মুয়াজ্জিন হলো বিশ্বস্ত। হে আল্লাহ ইমামদের আপনি সঠিক পথের দিশা দান করুন, আর মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন। (আবু দাউদ)।’ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ১২ বছর আযান দিবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। প্রতিদিন তার আযানের কারণে ৬০টি গোনাহ ক্ষমা করা হবে, আর প্রতি ইক্বামতের জন্য ৩০টি নেকি দান করা হবে। (ইবনে মাজাহ)।’

উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা এটা খুব পরিষ্কার যে, ইসলামে আযানের যেমন অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি যিনি আযান দেন, সেই মুয়াজ্জিনের রয়েছে অনেক সম্মান। আমরা মুসলিম দেশে বসবাস করার কারণে আযানের এই হৃদয়গ্রাহী অনুভূতিটা প্রতিদিন জাগ্রত হয় না। কিন্তু যারা অমুসলিম, কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষী না, তারা যখন ইসলামের আযান প্রথম শুনে তাদের ভেতরে অন্য রকম এক অনুভূতি তৈরি হয়।



 

Show all comments
  • Md Parves Hossain ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৯ এএম says : 0
    আযান শুরু হলে চুপ থেকে শুনে তার জওয়াব দেওয়া বিধেয় (সুন্নত)। মুআযযিন ‘আল্লাহু আকবার’ বললে, শ্রোতাও তার জবাবে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। মুআযযিন ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্‌’ বললে শ্রোতা বলবে, ‘অআনা, অআনা।’ অর্থাৎ আমিও সাক্ষি দিচ্ছি, আমিও। (আবূদাঊদ, সুনান ৫২৬নং)
    Total Reply(0) Reply
  • Sirajul Islam ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৮ এএম says : 0
    আযান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন ও প্রতীক। কোন গ্রাম বা শহরবাসী তা ত্যাগ করলে ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন। যেমন মহানবী (ﷺ) অভিযানে গেলে কোন জনপদ থেকে আযানের ধ্বনি শুনলে তাদের উপর আক্রমণ করতেন না। (বুখারী ৬১০ নং, মুসলিম, সহীহ)
    Total Reply(0) Reply
  • Sirajul Islam ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৮ এএম says : 0
    আযান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন ও প্রতীক। কোন গ্রাম বা শহরবাসী তা ত্যাগ করলে ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন। যেমন মহানবী (ﷺ) অভিযানে গেলে কোন জনপদ থেকে আযানের ধ্বনি শুনলে তাদের উপর আক্রমণ করতেন না। (বুখারী ৬১০ নং, মুসলিম, সহীহ)
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুজজামান ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
    কে মোরে শুনালো ঐ আজানের ধ্বনি এ যেন চির চেনা মধুর আহবান। অন্তরে শিহরণ জাগে। এসো কল্যাণের জন্য, এসো মুক্তির জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন