Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের সংস্কারক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের জীবনাবসান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৪৬ পিএম

চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন মারা গেছেন। লিউকেমিয়া এবং একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর বুধবার ৯৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। সিনহুয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নিজের শহর সাংহাইয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১৩ মিনিটের দিকে জিয়াংয়ের মৃত্যু হয়।

১৯৮৯ সালের তিয়ানানমেন স্কোয়ারের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের পর তিনি চীনের নেতা হয়েছিলেন। চীনে এক দশকের ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধির সভাপতিত্ব করার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন কারণ এটি পশ্চিমাদের সমীহ আদায় করেছিল এবং বিশ্ব সুপার পাওয়ার হয়ে উঠেছে। তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের প্রবেশ এবং ব্রিটিশদের কাছ থেকে চীনাদের কাছে হংকং হস্তান্তরের মতো উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

তিয়ানানমেন বিক্ষোভের পর জিয়াংকে চীনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছিল - এবং চীনা জনগণের কাছে তার বার্তা পৌঁছেছিল যে, বৃহত্তর গণতন্ত্রের দিকে আন্দোলন সহ্য করা হবে না। তার মৃত্যু এখন এমন এক মুহুর্তে এসেছে যখন চীন তার সবচেয়ে গুরুতর কিছু বিক্ষোভ দেখছে - করোনভাইরাস মহামারী বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে - তিয়ানানমেন থেকে।

ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ পরিষদ, পার্লামেন্ট, মন্ত্রিসভা এবং সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দল ও সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং চীনের জনগণের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে সাবেক নেতার মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। ‘কমরেড জিয়াং জেমিনের মৃত্যু আমাদের দল, সামরিক বাহিনী এবং আমাদের সকল নৃগোষ্ঠীর লোকজনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি,’ চিঠিতে ‘গভীর দুঃখের’ সঙ্গে দেয়া ঘোষণায় এমনটিই বলা হয়। চিঠিতে জিয়াং জেমিনকে ‘অত্যন্ত প্রিয় কমরেড’ অভিহিত করে তাকে অসামান্য নেতা, অনবদ্য মার্ক্মবাদী, অসাধারণ রাষ্ট্রনায়ক, সামরিক কৌশলবিদ, কূটনীতিক ও দীর্ঘ পরীক্ষিত কমিউনিস্ট যোদ্ধা তকমা দেয়া হয়েছে।

১৯৮৯ সালে তিয়ানআনমেনে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘চীনের রক্তাক্ত দমনপীড়নের’ পর ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসেন জিয়াং। তবে তার আমলে চীন আগের তুলনায় অনেক বেশি উদার হয়েছিল, কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটেছিল। জিয়াংয়ের ১০ বছরে চীন অর্থনৈতিকভাবেও অভূতপূর্ব উন্নতি করে। তার মৃত্যুতে ‘একটি যুগের অবসান’ হল জানিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন।

সাবেক নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পিপলস ডেইলি, সিনহুয়াসহ চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো তাদের অনলাইন সাইট বুধবার সাদাকালো করে রেখেছে। জিয়াং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ১৯৮৯ সালে, দেশের প্রেসিডেন্ট হন চার বছর পর, ১৯৯৩-তে। ২০০২ সালে দলে তার উত্তরসূরী হন হু জিনতাও; তার পরের বছর হু চীনের প্রেসিডেন্টও হন।

জিয়াং সামরিক বাহিনীর প্রধানের পদ ছাড়েন আরও পরে, ২০০৪ সালে। তারপর থেকে অবসরে থাকলেও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে পরবর্তী কয়েক বছরও জিয়াংয়ের ব্যাপক প্রভাব ছিল বলে মনে করা হয়। জিয়াং তার সময়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পরিষদ পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি নিজেদের অনুসারীদের দিয়ে ভরে রেখেছিলেন; সেসময় ওই কমিটিতে অনেকেই ছিলেন তথাকথিত ‘সাংহাং গ্যাং’-এর। তবে ২০০৪ সালের পর হু নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে ওই ‘সাংহাই গ্যাং’-কে নিস্ক্রিয় করে দেন; সাফল্যের সঙ্গে এক দশক দায়িত্ব পালন শেষে তিনিও উত্তরসূরী শি জিনপিংয়ের হাতে ক্ষমতা ছাড়েন। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ