Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেয়ার নয়াদিল্লির প্রচেষ্টার প্রতিবাদে ক্ষোভ, প্রাণ দিলেন বৃদ্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ১০:০৯ পিএম

ভারতে হিন্দি ভাষা-বিরোধী বিক্ষোভ নতুন নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে প্রায়ই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়ে থাকে। আর এবার জোর করে হিন্দি ভাষার ব্যবহার চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিলনাড়ু রাজ্যে এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন। -দ্য ডন, আউটলুক ইন্ডিয়া, এএফপি

সোমবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। এছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আউটলুক ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনেও এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী হিন্দি ভাষার ব্যবহার চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লির প্রচেষ্টার প্রতিবাদে দক্ষিণ ভারতে আশি বছরের বেশি বয়সী একজন বৃদ্ধ নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন বলে পুলিশ রোববার জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতের মতো একটি দেশে ভাষা খুবই আবেগপূর্ণ একটি বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে শত শত ভাষা এবং উপভাষা ব্যবহার করে থাকে মানুষ। আর তাই হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজিও ভারতে যোগাযোগের প্রধান সরকারি মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। এছাড়া রাজ্য সরকারগুলো তাদের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে থাকে। ২০১১ সালে হওয়া ভারতের সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, ভারতের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম ভারতীয় নাগরিক হিন্দি ভাষায় কথা বলেন। অর্থাৎ মাত্র ৪৪ শতাংশেরও কম ভারতীয় হিন্দিতে কথা বলেন।

কিন্তু গত মাসে ভারতের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে একদল সংসদ সদস্য হিন্দিকে দেশটির জাতীয় সরকারী ভাষা করার সুপারিশ করেন। এমনকি চিকিৎসা ও প্রকৌশলের মতো কারিগরি শিক্ষা হিন্দিতে পড়ানোসহ এই দাবি করা হয়। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইংরেজি ভাষার ব্যবহারকে ‘দাস মানসিকতা’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং ভারতীয় ভাষার ব্যবহারকে আরও বাড়ানোর পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু বিরোধীরা তার সরকারকে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ তুলছেন। এক্ষেত্রে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ মানুষের ভাষা হচ্ছে- দ্রাবিড়। যা ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর ভাষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং এই গোষ্ঠীর ভাষা পরিবারের মধ্যে হিন্দিও রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, হিন্দি ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর এমভি থাঙ্গাভেল নামে ৮৫ বছর বছর বয়সী একজন কৃষক নিজের শরীরে পেট্রোল এবং কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার মৃত্যু হয়। সংবাদমাধ্যম আউটলুক ইন্ডিয়া বলছে, হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে তামিলনাড়ুর সালেম জেলার ৮৫ বছর বয়সী কৃষক থাঙ্গাভেল মেট্টুরের পাশ্ববর্তী থালাইউরে রাজনৈতিক দল ডিএমকে কার্যালয়ের বাইরে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন।

সংবাদমাধ্যমটি আরও বলছে, ডিএমকে-এর সাবেক এই কৃষি ইউনিয়ন সংগঠক নিজের ওপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর বেলা ১১ টার দিকে ঘটনাস্থলেই মারা যান। হিন্দিকে শিক্ষার মাধ্যম করার বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কথিত পদক্ষেপের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। আগুনে পুড়ে নিজের জীবন দেওয়ার আগে থাঙ্গাভেল পিএন পট্টি শহর পঞ্চায়েত ডিএমকে সেক্রেটারি কুমারকে একটি চিঠি এবং প্ল্যাকার্ড লেখেন। সেখানে তিনি বলেন: ‘মোদী সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, আমরা হিন্দি চাই না। আমাদের মাতৃভাষা তামিল এবং হিন্দি ভাঁড়দের ভাষা। হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিলে শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রভাব পড়বে। হিন্দি ত্যাগ কর, হিন্দি ত্যাগ কর, হিন্দি ত্যাগ কর।’

তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে’র যুব শাখার সেক্রেটারি এবং রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের ছেলে উদয়নিধি স্ট্যালিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, রাজ্যের ওপর হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিলে দল তার প্রতিবাদ করবে। অবশ্য সর্বশেষ এই ঘটনাটির সঙ্গে ১৯৬৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তামিলনাড়ুতেই ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনার মিল রয়েছে। সেসময় কেলাপালুর চিন্নাসামি নামে ২৭ বছর বয়সী এক যুবক রাজ্যটির তিরুচি রেলওয়ে স্টেশনে আত্মহনন করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তামিল-পন্থি স্লোগান দেন পিতামাতার একমাত্র পুত্র চিন্নাসামি। এর এক বছর পর ভারতে সরকারি ভাষা আইন কার্যকর হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ