গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে মোট তিন হাজার ৬৭ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে নারী অধিকার সংগঠন জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ। এছাড়াও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাত দিয়ে সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে।
রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ এর পরিচালক নাজমা ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই মোট ৩৭১ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে- এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২ জন কন্যাসহ ৯১ জন; তার মধ্যে ১২ জন কন্যা ও ১০ জন নারীসহ ২২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ২ জন কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এছাড়াও ৫ জন কন্যাসহ ১০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নারী ও কন্যা পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৩টি- এর মধ্যে ১৮ জন কন্যা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাত দিয়ে নাজমা ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই দশ মাসে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৩০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৯ নারী, আর এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। এ ছাড়া আর ১৪১ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নোয়াখালী জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা-নারীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বাধা। এটা কোনো একক সমস্যা না। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। পুরুষতান্ত্রিক মন-মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে হবে। নারীর প্রতি এ সহিংসতা রোধে নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরাতন আইনগুলোকে সংস্কার করতে হবে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারী নির্যাতনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
এখনো সমাজের চোখে নারীদের অবজ্ঞার চোখে দেখা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তা কারও কাছে প্রকাশ করতে পারে না। এমনকি অনেকে নিজের পরিবারেও বলতে পারে না। আবার কখনো কোনো নারী তার প্রতি করা সহিংসতামূলক আচরণের প্রতিবাদ করলে, বেশিরভাগ মানুষ উল্টো ভুক্তভোগী নারীকেই দোষারোপ করে বা করার চেষ্টা করে ৷
নারী সহিংসতা হয়রানি ও নির্যাতন রোধে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো-
১. যৌন হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন’ প্ৰণয়ন করতে হবে;
২. কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসন বিষয়ক আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থন করতে হবে;
৩. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে প্রদানকৃত হাইকোর্টের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে; কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে এবং সমাজে নারী শ্রমিকের যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে;
৪. আদালতের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে;
৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার নিষ্পত্তি করা ও বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে হবে;
৬. বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর সংশোধনীতে (১ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রকাশিত গেজেট) মহিলাদের প্রতি সংক্রান্ত নতুন বিধি ৩৬১ক এবং সেই বিধির (২)’এ বর্ণিত অভিযোগ কমিটি গঠন মহামান্য হাইকোর্টের প্রদানকৃত গাইডলাইন-এর ভিত্তিতে করতে হবে;
৭. নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন মুকুট, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র সহ-সভাপতি এডভোকেট সীমা জহুর, ফেয়ারওয়্যার ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. বাবলুর রহমান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।