Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি কটূক্তির পরিণাম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বর্তমানে আমরা সাল গণনার দিক থেকে তিনটি সালকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সেহেতু আমরা বাংলা ভাষাভাষী সে জন্য বাংলা সাল বঙ্গাব্দকে বিশেষভাবে দিন, মাস ও বছর গণনায় প্রাধান্য দেই। এখন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ চলছে। আর আমরা মুসলমান। ইসলামী-আরবী সাল গণনার প্রতিও আমাদের গভীর দৃষ্টি রাখতে হয়। কারণ, ইসলামী দিন, মাস ও বছরের সাথে আমাদের যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এ জন্য ইসলামী হিজরী সনের সাথে আমরা বিশেষভাবে পরিচিত। বর্তমানে আমরা হিজরী ১৪৪৪ সাল অতিক্রম করে চলেছি।

তবে, আমাদের চলার পথে খ্রিষ্টীয় সাল বা খ্রিষ্টাব্দের প্রয়োজনীয়তাও কম নয়। আমরা শত শত বছর খ্রিষ্টানদের শাসনাধীন ছিলাম। তাই, খ্রিষ্টানরা তাদের আরাধনার ধন খ্রিষ্টাব্দকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি। বরং আমাদের সর্বাবস্থায় খ্রিষ্টাব্দের ওপর ভর করে চলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এতে করে চলমান ২০২২ খ্রিষ্টাব্দকেও আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এজন্য খ্রিষ্টাব্দের জৌলুসপূর্ণ রঙ মাখা ক্যালেন্ডার আমাদের প্রত্যেক ঘরে ঘরে শোভা বর্ধন করে চলেছে। এর রেশ কত দিন পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা-ইবা কে জানে!

বর্তমান দুনিয়ার মানুষ যারা অমুসলিম খেরকা পরিধান করে তাধিন তাধিন নর্তন ও কুর্দনে ব্যস্ত, তারা ইসলাম এবং ইসলামের নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে কুৎসা, কটূূক্তি ও মিথ্যাচারে এতখানি লিপ্ত হয়ে পড়েছে যে, এছাড়া তাদের পেটের ভাত হজম হয় না বলেই প্রতীয়মান হয়। তাদের এই ধৃষ্টতা এবং মিথ্যাচারের প্রতিবিধান কঠোরভাবে প্রদান করার ঘোষণা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক প্রদান করেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : শপথ বহুপথ বিশিষ্ট আসমানের; নিশ্চয়ই তোমরা পরস্পরবিরোধী কথায় পরিলিপ্ত। (সূরা আয যারিয়াত : ৭-৮)।

উল্লেখিত ৭ নং আয়াতে ‘হুবুক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই শব্দটি আরবী ‘হাবাকাতুন’ শব্দের বহুবচন। এই ‘হুবুক’ শব্দের কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যেমন : (ক) কোনো কোনো তাফসিরবিদ বলেন, এখানে ‘হুবুক’ অর্থ শোভা ও সৌন্দর্য। এখানে মহান আল্লাহ পাক শোভা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আকাশের কসম খেয়ে বলেছেন, হে অকৃতজ্ঞ মানুষ, নিশ্চয়ই তোমরা পরস্পরবিরোধী কথা ও মন্তব্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছ, যা প্রকৃতই মিথ্যা। সুতরাং মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হবেই।

(খ) বিশেষ শ্রেণির তাফসিরকারকগণ বলেন, বায়ুপ্রবাহের কারণে মরুভূমির বালুকারাশির বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয় এবং একই কারণে বদ্ধ পানিতে এবং স্রোতশীল পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এই ঢেউ এবং বালিয়াড়িকেও ‘হুবুক’ বলা হয়। কিন্তু ঢেউ এবং বালিয়াড়ির স্থায়িত্ব বলতে কিছুই নেই। বাতাসের অভাবে ঢেউ ও বালিয়াড়ির অস্তিত্ব শূন্যে মিলিয়ে যায়। ঠিক তেমনি ইসলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে মিথ্যা উক্তিকারীরা কালের করাল স্রোতের টানে ধ্বংস হয়ে যাবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই।

(গ) একদল বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘হুবুক’ শব্দের অর্থ হলো কাপড়ের পাড়। কাপড় বুননে উদ্ভূত পাড় কাপড়টির সীমানা নির্ধারণ করে। এটা পথ সদৃশ বলে পথকেও হুবুক বলা হয়। এক পথ যেমন অন্য পথের সাথে মিলে যায় ও নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে, তেমনি ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে মিথ্যাচারীরাও কালের খেয়াঘাটে হারিয়ে যাবে, নিঃশেষ হয়ে যাবে, এরও কোনো ব্যত্যয় হবে না।

(ঘ) এখানে মহান আল্লাহ পাক আসমানকে হুবুক-এর অধিকারী বলার কারণ হচ্ছে এই যে, অধিকাংশ সময় আসমানে নানা রকম বা আকৃতির মেঘরাশি ছেয়ে থাকে এবং বাতাসের প্রভাবে বার বার তার আকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে। আবার কখনো কোনো আকৃতি না স্থায়ীত্ব লাভ করে, না অন্য আকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। সুতরাং ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে মিথ্যাচারীদের ধ্বংসও অনিবার্য।

(ঙ) অথবা আকাশকে ‘হুবুক’-এর অধিকারী বলে শপথ করার কারণ এই যে, রাতের বেলা যখন আকাশে তারকাসমূহ ছড়িয়ে থাকে, তখন মানুষ তার নানারকম আকৃতি দেখতে পায়, যার কোনোটি অন্য গুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় না। এই বৈসাদৃশ্যই প্রমাণ করে যে, ইসলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি কটূক্তিকারীও মিথ্যাচারীরা অতি শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে।



 

Show all comments
  • Bablur Rahman ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৮ এএম says : 0
    পৃথিবীর যেকোনো ভূখণ্ডে শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ, নবী ও সাহাবিদের সম্মান রক্ষার্থে অত্যন্ত কঠোর আইন অত্যাবশ্যক। অন্যথায় কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটালে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে ও ক্রোধে ফেটে পড়বে। শুরু হবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। সূত্রপাত ঘটবে মারামারি-হানাহানির মতো ঘটনার।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৮ এএম says : 0
    ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৭)
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৮ এএম says : 0
    ‘তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করে, তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৩)
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৯ এএম says : 0
    নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উল্লেখ করেন, সব মাজহাবের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত হলো—নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারী কাফির এবং তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজমুল আলম ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৯ এএম says : 0
    রাসুল (সা.)-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী ব্যক্তি উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • salman ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৮ এএম says : 0
    Preo Nobi'r & Islam er Dusmon raa DHONGSHO hok.....ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন