মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বন্দুকের চেয়ে বিপজ্জনক কলম এবং ওই কলমে লেখা একটি বই! কারণ বন্দুকের পাল্লায় পড়ে একজন মানুষ খুনি উঠতে পারেন। আরেকটি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই তার। কিন্তু বই অগুন্তি মানুষের ভাবনা ভূবনে বদল আনতে পারে, বুনে দিতে পারে বিপ্লবের বীজ। বই ভাবতে শেখায়। যা সমাজ, রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রকর্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে অনেক সময়। বার বার বই নিষিদ্ধ করে সেকথাই প্রমাণ করেছে শাসকেরা। যেমন এই সাতটি বই। ব্যতিক্রমী ভাবনার দোষে যেগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। এমনকী এর মধ্যে কয়েকটি বই আজও নিষিদ্ধ বেশ কিছু দেশে। একই সঙ্গে তারা বিশ্ব সাহিত্যের সম্পদ!
অ্যানিমেল ফার্ম : ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েলের রূপকধর্মী ব্যাঙ্গাত্বক উপন্যাস। ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয়। খোদ লেখক জানিয়েছিলেন, স্ট্যালিন যুগের আবহ প্রতিফলিত হয়েছে এই উপন্যাসে। অরওয়েল ছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টির সদস্য এবং স্ট্যালিনের ঘোরতর সমালোচক। উপন্যাসের চরিত্ররা পশু খামারের বিভিন্ন প্রাণী। তারা দমন-পীড়ন চালানো খামার মালিককে কীভাবে শায়েস্তা করে তা নিয়েই রচিত উপন্যাস। তথাকথিত কমিউনিজমকে ব্যঙ্গ করার দোষে উপন্যাসটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিউবা ও উত্তর কোরিয়ায় এখনও ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ নিষিদ্ধ।
১৯৮৪ : জর্জ অরওয়েলের আরও একটি কালজয়ী উপন্যাস। অ্যানিমেল ফার্ম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই উপন্যাস লেখেন অরওয়েল। কাহিনিতে উঠে এসেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ ও শান্তি ভাবনা। এটা স্বাভাবিক যে অ্যানিমেল ফার্মের লেখার পরে অরওয়েলের উপন্যাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে স্ট্যালিন। তার উপরে এই উপন্যাসে স্ট্যালিনের রাষ্ট্রনীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়। এই সেদিন ১৯৯০ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে নিষিদ্ধ ছিল বইটি। অন্যদিকে একই বইকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মর্জাদা দেয়া হয়।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস : সালমান রুশদির লেখা চতুর্থ উপন্যাস। চরম বিতর্কিত। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত। এর কিছু অংশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়। জাদু বাস্তবতাবাদ ও সমসাময়িক ঘটনাকে গুলিয়ে দিয়ে চরিত্র নির্মাণ করেন লেখক। ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এখানে। তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়া রুশদির উপন্যাসটি ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা-সহ বহু দেশে নিষিদ্ধ হয়। এই উপন্যাসের পর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যু ফতোয়া জারি করে।
অ্যালিস অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড : লুইস ক্যারেলের অন্যতম ক্লাসিক অ্যালিস অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড। প্রায় দুশো বছর হতে চলা বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৬৫ সালে। এর ১৩৫ বছর পর বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আমেরিকার একটি স্কুল। কেন? বিশ্বখ্যাত লেখক অশ্লীল এবং যৌন ফ্যান্টাসির কাহিনি বুনেছেন, এমনটাই অভিযোগ। সম্প্রতি চীনের একটি প্রদেশে অ্যালিস অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ ওঠে, এই কাহিনিতে বন্যপ্রাণী ও মানুষকে সমান বলা হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের উপর খারাপ প্রভাব পড়েছে।
মেইন ক্যাম্প : অ্যাডলফ হিটলারের আত্মজীবনী ‘মেইন কাম্প’। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত। হিটলারের কঠোর ইহুদি বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে তার লেখাতে। যে কারণে লাখ লাখ নিরীহ ইহুদি নিহত হয়েছিলেন। আত্মজীবনীতে হিটলার তার মৌলবাদি দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন। নিজের দেশ জার্মানির বিষয়ে তিনি কী ভাবেন, তাও জানান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান আইন নাৎসি দর্শন সমর্থন করা বইটির বিক্রি এবং প্রকাশ্যে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে। যদিও ‘মেইন ক্যাম্প’-এর কপিরাইট জার্মান রাজ্য বাভেরিয়াকে দেয়া হয় সেই সময়। যদিও বাভেরিয়া বই ছাপতে অস্বীকার করে। অন্যদিকে নৃশংস শাসক হিটলারের প্রতি কৌতূহলী ছিল বাকি বিশ্ব। ফলে বইটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
ফিফটি শেডস অফ গ্রে : এরিকা লিওনার্দো জেমস বা ই এল জেমসের ইরোটিক উপন্যাস ফিফটি শেডস অফ গ্রে। প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য লেখা এই উপন্যাস গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দেয়। বই বিক্রিতে বহু পুরনো রেকর্ড ভেঙে দেয় ই এল জেমসের এই বই। এতখানি হিট কিন্তু সাহিত্য বিচারে নয়, বরং কাহিনির একাধিক যৌন উত্তেজক দৃশ্যের কারণে। অশ্লীল বিষয়বস্তুর অভিযোগে বইটি আমেরিকার তিনটি রাজ্য এবং মালয়েশিয়াতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল।
ইউলিসিস : ইউলিসিস আইরিশ লেখক জেমস জয়েস-এর কালজয়ী সৃষ্টি। ১৯২০ সালে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। যদিও উপন্যাস আকারে সম্পূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশের আগেই অশ্লীলতার দায়ে ইউলিসিসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় আমেরিকায়। গ্রন্থটিকে নিয়ে মামলাও চলে। দুই দশক নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৩০ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। একই সময়ে ইংল্যান্ডেও নিষিদ্ধ ছিল ইউলিসিস। ১৯৫০ সালে সেখানেও বইটির উপর থেকে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। অধিকাংশ সাহিত্য সমালোচকের দাবি, ইউলিসিস ইংরেজি ভাষায় লিখিত বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। সূত্র: টাইমস নাউ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।