Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রিমপ্রতি কাগজের দাম ৮ মাসে বেড়েছে ১৯০০ টাকা, দাম কমানোর দাবি প্রকাশকদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২২, ৭:২১ পিএম

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলায় কাগজের (৮০ গ্রাম) দাম রিমপ্রতি ছিল ১৬০০-১৭০০ টাকা, সেটির বর্তমান দাম ৩৫০০-৩৬০০ টাকা। এছাড়া আগের দিনের দামের সঙ্গে পরের দিনের দাম মেলে না। এমন ভারসাম্যহীনতায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রকাশকরা। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান কাগজের বাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের বিনিয়োগ ও লভ্যাংশের স্বচ্ছতা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নির্ধারণসহ আরও বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে প্রকাশকদের সংগঠন সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য।

সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্য আয়োজিত ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথ। লিখিত বক্তব্যে মিলন নাথ বলেন, কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের পুরো প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। একইসঙ্গে যোগ হয়েছে আমদানি নির্ভর প্লেটের দুষ্প্রাপ্যতা। জরুরি প্রকাশনায় উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না এসব উপকরণ। এই অস্বাভাবিকতা এখন চরম পর্যায়ে। বর্তমান বাজার মূল্যে ছাপা কেন্দ্রিক কোনো কাজকর্মই করা সম্ভব হচ্ছে না।

আমরা সাধারণত কাগজের মূল্য হিসাব করেই বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। কিন্তু একটি বই পাঠকের হাতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত প্রায় ১৬টি পেশাদার হাত ঘুরে আসে। তাদের পেশাজীবন বইকে কেন্দ্র করেই। এখানে পাণ্ডুলিপি তৈরি ও কম্পোজ, প্রুফ রিডিং, সম্পাদনা, মেকআপ, ডিজাইন, প্রচ্ছদ, প্লেট, ছাপাখানা, বাইন্ডিং ও প্যাকেজিং খাতগুলো সম্পৃক্ত। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের শ্রম খাত এটি। প্রতিটি খাতেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ডলার সংকট। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নানা ছলচাতুরী করে কাগজের দাম বেড়েই চলেছে। গতকালের মূল্য আর আজকের মূল্য ঠিক থাকছে না। সরকার আমদানি নির্ভর ডিজেল, পেট্রোলিয়াম, চাল, আটা, চিনি, সয়াবিনের মতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সিল করে দিচ্ছে বাজার শৃঙ্খলার জন্য। কিন্তু কাগজের ক্ষেত্রে সেটা করা হচ্ছে না। এই ভারসাম্যহীনতায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা।

তিনি বলেন, বইয়ের মূল্য বা প্রাইজ ট্যাগ বদলানো যায় না। একবার ছেপে ফেললে সেই সংস্করণের কপি শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই থাকে। যদি কাগজের মূল্য কমে যায়, তাতেও সমস্যা, বেড়ে গেলেও সমস্যা। আমরা সরকারের প্রতি জোর মিনতি এর আশু সমাধানকল্পে জরুরি ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।

বাংলা একাডেমি অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ানোর কৌশল খুঁজছে

মিলন নাথ বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক মিলন ঘটে অমর একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে। এই মেলাকে কেন্দ্র করেই বছরের সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশিত হয়। মাসব্যাপী এই মেলা আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার কাজটি সম্পাদন করে থাকে বাংলা একাডেমি। এ আয়োজনের রাষ্ট্রীয় অভিভাবক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই মেলার অবধারিত প্রাণশক্তির জোগানদাতা আমাদের মতো বিপদগ্রস্ত প্রকাশকরা। কিন্তু মর্মান্তিক সত্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি এই নির্মম সত্য কথাটি ভুলে যায়। ভুলে যায় একজন স্বাপ্নিক প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা চট বিছিয়ে এই মহীরুহের জন্ম দিয়েছিলেন, তিনি বাংলা একাডেমির বেতনভুক চাকরিজীবী ছিলেন না। তিনি আমাদের মতো একজন সাধারণ প্রকাশকই ছিলেন।

অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা স্থানান্তরিত হওয়ার পর ইতোপূর্বে দুই কিস্তিতে স্টল ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এবারও কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাড়ানোর কৌশল খুঁজছে। দুঃখজনক ঘটনা হলো, সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র রেজিস্টার্ড সংগঠন আইনি জটিলতার আবর্তে পড়ে বর্তমানে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই সংস্থার নেতারা প্রতিনিধি হয়ে একাডেমির সিদ্ধান্ত গ্রহণের আলোচনায় অংশ নিতে পারছেন না। ভাড়া বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে তারা একতরফাভাবে কিছুতেই নিতে পারেন না।

তিনি বলেন, বাংলা একাডেমিকে আমরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কখনো দেখতে চাই না। প্রতিষ্ঠানের জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদানের রক্তদান জড়িত। ব্যবসা করা বাংলা একাডেমির মূল কাজ নয়। আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানাই, অমর একুশের বইমেলায় তারা যেন ভর্তুকি দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন এবং এ বছরের মেলা আয়োজনে স্টল ভাড়া অর্ধেক মূল্যে প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

তিনি আরও বলেন, কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে আমরা নতুন বই প্রকাশ করতে অপারগ হয়ে পড়েছি। ২০০ টাকা মূল্যমানের একটি বই আমরা বর্তমান কাগজ মূল্যে ৪০০ টাকাও রাখতে পারছি না। দেশে বইয়ের উৎপাদন ও মানোন্নয়ন এবং বইমেলার জন্য প্রযোজ্য সরকারি নীতির অসংগতি দূর করতে হবে। এ জন্য একটা গ্রহণযোগ্য সমন্বিত নীতি প্রণয়ন করা অতি জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ লক্ষ্যে একটি স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমগ্র প্রকাশনীর প্রকাশক শওকত আলী, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনীর প্রকাশক কমল কান্তি দাশ, আবিষ্কার প্রকাশনীর প্রকাশক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ