Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যশক্তিগুলো বিশ^কে নতুন আকার দিচ্ছে

ফাইনান্সিয়াল টাইম্স

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ তথাকথিত মুক্তবিশ্ব এবং রাশিয়ান (এবং চীনা) কর্তৃত্ববাদের মধ্যে একটি নতুন স্নায়ূ যুদ্ধের মতো বলে মনে হতে পারে, যেখানে ইউরোপে আমেরিকার মিত্ররা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় এবং ভøাদিমির পুতিনের প্রতি বেইজিংয়ের নিরঙ্কুশ সমর্থনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে।

তবে, অন্যান্য রাষ্ট্র, বিশেষ করে বিশ্বের দক্ষিণভাগে এর ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের স্নায়ূ যুদ্ধের মিত্র সউদী আরব এবং বর্তমান মার্কিন নিরাপত্তা অংশীদার ভারত সম্প্রতি আরো একাধিক খোলামেলা সম্পর্কের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ককে পুনর্গঠন করেছে। সউদীরা ব্রিকস দেশগুলোর দিকে ধাবিত হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয়রা ছাড়ে রাশিয়ান তেল নিতে বেশ বড় রকমের চাহিদা তৈরি করেছে (যদিও সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্র মোদি যুদ্ধের জন্য পুতিনকে তিরস্কার করেছিলেন)। সহজভাবে বলতে গেলে, মধ্যম শক্তির রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তাহীনতা এবং উচ্চাকাক্সক্ষা বিশে^র ভূ-রাজনৈতিক রূপকে ক্রমশ বদলে দিচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবেশকে পুনর্র্নির্মাণের প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে মধ্যশক্তিগুলোর সক্রিয়তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। তাদের অনেকই এখন ইউক্রেনের সাথে একাত্মতার জন্য পশ্চিমা আবেদন কানে তুলছে না। বৈশ্বিক দক্ষিণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভের প্রতিরোধকে ঔপনিবেশিকতা বিরোধী যুদ্ধ হিসেবে দেখতে অনিচ্ছুক। তাদের নিজস্ব উত্তর-ঔপনিবেশিক পরিচয় রাশিয়া বা চীন নয় বরং ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। এবং যখন যুক্তরাষ্ট্র উন্মুক্ত সম্পর্কের প্রতি তার কিছু মিত্রদের নতুন আবিষ্কৃত আকর্ষণের বিরুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, তুরস্ক, সউদী আরব এবং ইসরাইলের মতো দেশগুলি তাদের রাষ্ট্রগুলোকে শক্তিশালী করার ক্ষমতা এবং উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে কাজ করছে।

বলতে গেলে, এসব দেশের মধ্যে খুব বেশি মিল নেই। এগুলোর কিছু গণতন্ত্র, কিছু স্বৈরাচারী এবং বাকিগুলো মাঝামঝিতে অবস্থান করছে। তবে, একটি আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে তাদের স্নায়ূযুদ্ধ-পরবর্তী পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেখানে একজনের প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা তার নিকটতম মিত্র নয় এবং যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা তাদের মধ্যকার আদর্শগত বিভাজনের চেয়েও বেশি পরিণতিমূলক হতে পারে। কিন্তু তারা সকলেই একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য বহন করছে, ভূ-রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা মধ্যশক্তির সক্রিয়তার একটি আদর্শ উদাহরণ। আঙ্কারা মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকার বিনিময়ে ন্যাটো সদস্য এবং মার্কিন মিত্র হিসাবে তার পরিচয় হ্রাস করেছে। তবে, মধ্যশক্তিগুলোর মধ্যে কোনো অভিন্ন মতাদর্শ নেই। প্রকৃতপক্ষে, তারা প্রায়শই ভিন্ন বা প্রতিযোগিতামূলক আগ্রহ পোষণ করে থাকে। মধ্যশক্তিগুলো বিশ্বজুড়ে ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের একচ্ছত্র প্রভাবের আকাক্সক্ষা করে, তবুও তারা ভালো করেই জানে যে, তা কতটা অসম্ভব। কিন্তু, যেমন করে স্নায়ূযুদ্ধের সময় মধ্যশক্তিগুলোকে পরাশক্তিগুলোর ইচ্ছা ও পরিকল্পনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল, বর্তমানে ঠিক সেভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকেও তাদের সক্রিয়তার মাধ্যমে নতুনভাবে তৈরি বিশ্বকে পরিচালনা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ