Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানুভব রাসূল (সা.)

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) ছিলেন নবী কারীম (সা.) এর খাস খাদেম। ঘরে-বাইরে সর্বত্র খেদমতের জন্য তিনি তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। প্রিয়নবী (সা.) তাঁর কাছ থেকে কেবল খেদমত গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হতেন না; প্রয়োজনীয় শিক্ষা-দীক্ষাও তাঁকে দান করতেন।

তত্ত্ব ও তথ্যমূলক জ্ঞানের পাশাপাশি তাঁর চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা ও আখলাক-চরিত্র গঠনের প্রতিও লক্ষ্য রাখতেন। অর্থাৎ তালীমের পাশাপাশি তারবিয়াতও দান করতেন। এ হাদীসটি তাঁর সে তারবিয়াতেরই অংশ। তিনি নিজে যেমন সকলের প্রতি ‘সালীমুস-সাদ্র’ তথা অমলিন মনের হয়ে থাকতে চাইতেন, প্রিয় খাদেমও যেন সদা-সর্বদা সেরকম থাকেন, সেই সবক এতে তাকে দান করেছেন।গভীর স্নেহ-মমতার সম্বোধন এতে লক্ষ্য করা যায়। ‘ওহে আমার প্রিয়পুত্র! বাছা হে!’ এভাবে পরম যত্নের সাথে তিনি প্রিয় খাদেমকে মনের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন। ফলে পরবর্তী জীবনে তিনি সারা জগতের মাখদূমে পরিণত হয়েছিলেন। আজ সারা জাহানের মুসলিম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর নাম নিয়ে থাকে।

শত শত বছর যাবত কত অগণিত মানুষ তার থেকে তালীম ও তারবিয়াতমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে। কত শত শত হাদীস তিনি বর্ণনা করেছেন। নবী জীবনের কত তথ্য তিনি মানুষের কাছে সরবরাহ করেছেন। এ আর কিছুই নয়, প্রিয় খাদেমকে শিক্ষা-দীক্ষায় মনের মতো করে গড়ে তোলার যে প্রযত্ন তিনি নিয়েছিলেন, কেবল তারই ফল। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও আমাদের অধীন, বিশেষত খাদেম-সেবকদের তালীম তারবিয়াতের প্রতি যত্নবান হব কি?

যাহোক, কথা হচ্ছিল মানুষের প্রতি প্রিয়নবী (সা.) এর মনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে। এটা ছিল তাঁর মহান চরিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জীবন গড়ার নমুনা। তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকই সারা জাহানের মানুষের জন্য আদর্শ। প্রতিটি মানুষের কর্তব্য সে অনুযায়ী নিজ জীবন গড়া। যে ব্যক্তি নিজেকে মুমিন ও মুসলিম বলে বিশ্বাস করে, তার যে, এ ব্যাপারে কত বেশি যত্নবান থাকা উচিত তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বলা যতই বাহুল্য হোক না কেন, নৈতিক অবক্ষয়ের যে পর্যায়ে আমরা পৌঁছে গেছি, তাতে এ কথা কেবল বলাই নয়; বারবার বলা এবং শতমুখে বলা অবশ্যই কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ আমরা কথায় কথায় একে অন্যের প্রতি মন খারাপ করে ফেলি। তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয়ে মন এত বেশি মলিন হয়ে যায় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভালো কিছুর প্রতিবিম্ব তাতে আর ধরা পড়ে না। এ ব্যাপারে আপন-পরেরও কোনো বালাই থাকে না। কথা তো ছিল পরের ব্যাপারেও সর্বদা ইনসাফের পরিচয় দেব। তার মন্দটি কেবল সেই মন্দতেই সীমাবদ্ধ রাখব। কিন্তু আমরা তা করি না। তার একটি মন্দ আমাদের অন্তরকে এমন ছায়াচ্ছন্ন করে ফেলে যে, ওই অন্তরের আয়নায় সে ব্যক্তির কোনো ভালো গুণ আর ধরা পড়ে না।

ওই একই অবস্থা আমাদের আপনজনদের ক্ষেত্রেও। কোনো এক ব্যাপারে আপনার কারও সাথে বিরোধ দেখা দিলে বা তার কোনো এক অপ্রীতিকর আচরণের সম্মুখীন হলে তার শুভ সবকিছু বেমালুম ভুলে যাই। তার ব্যাপারে মন সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। অতঃপর তার কোনওকিছুই প্রীতিকর থাকে না। তার মুখ দেখতে মনে চায় না। তার কথা শুনতে ভালো লাগে না। তার প্রতিটি বিষয়ই বিস্বাদ ঠেকে। যেন সে আমার চিরদিনের শত্রু। এমন তো কিছুতেই হওয়া উচিত ছিল না। প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নতের সঙ্গে এ স্বভাবের কোনো মিল নেই।
তাঁর সুন্নত অনুযায়ী মন হওয়া দরকার অনেক বড়। কারো ব্যাপারে সহজে তা মলিন হওয়াই উচিত না। যদি কোনোক্রমে মলিন হয়েও যায়, তবে সে মলিনতা যত দ্রুত সম্ভব দূর করে ফেলা উচিত। সমস্ত মানুষ এক আদম সন্তান। সব মুসলিম ভাই ভাই। অন্যের প্রতি আচরণেও থাকা উচিত ভ্রাতৃত্বের স্পর্শ এবং অন্যের আচরণ গ্রহণেও চাই ঔদার্য্যরে ছোঁয়া। প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নত তো আমাদের সে শিক্ষাই দান করে। এ সুন্নতের অনুসরণ করলে আমাদের জীবন হতে পারে অনেক সুন্দর, অনেক শান্তিময়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।



 

Show all comments
  • salman ২০ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৫ এএম says : 0
    Amin, Summa Amin
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন