Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মেসি, সউদী আরব আর সেই এরিকসেন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

শেষবারের মত ৩২ দল নিয়ে বসতে যাচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ। ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের এবারের আসরে চারটি করে দল নিয়ে মোট আট গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে দেশগুলো। কাতার ফুটবল মহাযজ্ঞের বাকি আর মাত্র ৪ দিন। তার আগে চলুন দেখে নিই গ্রুপ গুলোর কি হালচাল। দৈনিক ইনকিলাবের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে গ্রুপ ‘সি’ আর ‘ডি’ নিয়ে আলোচনা...

গ্রুপ ‘সি’
মেসি, সউদী আরব আর সেই এরিকসেন
কাতার বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। আরও আছে রবার্ট লোভান্দোভস্কির পোল্যান্ড। তাছাড়া গ্রুপের বাকি দুই মেক্সিকো ও এশিয়ার প্রতিনিধি সউদী আরব। কোন সন্দেহ ছাড়াই এই গ্রুপের বাকি ৩ দলের চেয়ে বহু এগিয়ে আছে দুই বারের বিশ্বসেরা আর্জেন্টিনা। আগামী মঙ্গলবার মেসি-দের প্রথম ম্যাচ সাউদীর বিপক্ষে। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেন লিওনেল স্কালোনি। এই কোচের ট্যাকটিসেই একদম বদলে গিয়েছে লাতিন চ্যাম্পিয়নরা।
বিগত সাড়ে তিন বছরে, ৩৫ ম্যাচে হারেনি আর্জেন্টাইনরা। আক্রমণভাগে মেসি-মারিয়া-লাউতারো কম্বিনেশন, রক্ষণে রোমেরো ও ওটামেন্ডির রসায়নতো আছেই। একই সঙ্গে আলবিসেলেস্তাদের পূর্বের ভঙ্গুর মধ্যমাঠের করুণ অবস্থা থেকেও সম্পূর্ণভাবে মুক্ত। সবশেষ ৩ বিশ্বকাপে এই মধ্যমাঠই বড় দুশ্চিন্তার কারণ ছিল দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ব্যাপারটা এমন নয় যে এই জায়গায় রাতারাতি তারকা ফুটবলার পেয়ে গিয়েছে দলটি, বরং স্কালোনি দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার কথা মাথায় রেখেই ট্যাকটিকস সাজান। সেই টোটকাতেই বদলে যাওয়া আর্জেন্টিনা দল, যারা এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ফেবারিট। চোটের কারণে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় বলতে কেবল লো সেলসোই বিশ্বকাপ মিস করবেন।
পোল্যান্ড ছিল গত শতাব্দীতে, ফুটবলে বিশাল শক্তির নাম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইউরোপের এই দলটির গায়ে এখন ক্ষুদে শক্তির তকমা লেগে গিয়েছে। তবে দলে আছেন হালের ফুটবলের সবচেয়ে বড় স্ট্রাইকার লেভান্দোভস্কির মত বিশাল এক তারকা আছে তাদের। ইতালিয়ান লিগে খেলা দুই মিডফিল্ডার জাওলোস্কি ও জেলেনস্কির মত তারকারাও আছেন দলটিতে। আক্রমণে লেওয়াকে সঙ্গ দিবেন মিলিক আর গোলবারে অতন্দ্র প্রহরী জুভেন্টাসের সেজনি। সবঠিক থাকলে গ্রুপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ হবে মেসি ও লেওয়াদের মাঝেই।
বিশ্বকাপ এলেই বদলে যায় মেক্সিকোর চেহরা। কনফা অঞ্চলের দলটিতে নেই কোন বিশাল তারকা। তবে দলীয় প্রচেষ্টায় প্রতিবারের বিশ্ব আসরেই কিছু চমক দেখায় মেক্সিকানরা। মাঝের ৪ বছর লাপাত্তা থাকলেও বিশ্বকাপে মেক্সিকানদের গোলবারের নিচে বিশ্বস্ত এক হাত হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকেন ওচোয়া। ডিফেন্সে হোর্হে সানচেজ ছাড়া নেই কোন বড় নাম। তবে হেরেরা, গুরদাদো, গুতিয়ারেজ ও আলভারেজদের নিয়ে গড়া মধ্যমাঠ বেশ শক্তিশালী। আর আক্রমণের গোটা দায়িত্বই থাকবে হেমিনেজ ও লোজানোর উপরে।
শক্তির দিকে থেকে বাকি ৩ দলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সাউদী আরব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা ফুটবলে উন্নতি করছে। গেল মাসে নর্থ মেসিডনিয়ার বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর গত সপ্তাহে হারিয়েছে আইসল্যান্ডকে। মরূর দেশে বিশ্বকাপে চমক দেখাতে পারে আরবরাও।

গ্রুপ ‘ডি’ ফ্রান্স, তিউনিশিয়া, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়া
এই গ্রুপের সবচেয়ে বড় দল নিঃসন্দেহে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তবে বিশ্ব চ্যম্পিয়নদের জন্য হুমকির নাম ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের ডেনমার্ক। গ্রুপের বাকি দুই দল আস্ট্রেলিয়া ও তিউনিশিয়া আছে অঘটন সৃষ্টির অপেক্ষায়। তবে গোটা গ্রুপের ব্যাপারটাই একটা কাকতাল! তিউনিশিয়া ব্যতীত বাকি ৩ দলই গত রাশিয়া বিশ্বকাপে সি গ্রুপে ছিল।
কথায় আছে ফুটবল বিশ্বকাপ জয় যেমন আশীর্বাদ ঠিক তেমনি একটি অভিশাপ। সেই ২০০২ বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু। আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ পর্বেই বাদ। কেবল এরপরের জার্মানি আসরেই ব্রাজিল সেই ধারায় ছেদ টানতে পেরেছিল। এরপরের ৩ আসরে আবারও সেই ‘হিস্ট্রি রিপিটস’। এই শতাব্দীতে ফ্রান্সকে দিয়েই এই অভিশাপের শুরু এবং ২০০২ সালে হওয়া সেই আসর এশিয়াতেই হয়েছিল। সেই মহাদেশেয় ঠিক ২০ বছর পর আবারও ফিরেছে গ্রেটেস্ট শো অব দ্য আর্থ। তাহলে কি আবারও ফ্রান্সের কাটা পরার পালা? ইনজুরিতে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন দলের প্রধান দুই মিডফিল্ডার কান্তে ও পগবা। পরশুদিন সেই দলে যোগ দিয়েছেন ডিফেন্ডার কিম্পেম্বে। তাছাড়া হালের সেনসেশন এমবাপ্পে ও ব্যালন ডি’অর জয়ী করিম বেনজেমা ছাড়া দলটির বাকি সবাই যেন গোল করতেই ভুলে গেছে।
তবে এরপরও দলটার নাম যেহেতু ফ্রান্স, তাই তারকায় ঠাসা দলটিকে ফেবারিটের তকমা থেকেই বাদ দেওয়ার উপায় নেই। তবে ফরাসি বস দেশমের ভাবনা শেষ ৬ ম্যাচে ১টি জয় পাওয়াটা, যার মাঝে গ্রুপের আরেক দল ডেনমার্কের সাথেই হেরেছে ২বার! এই গ্রুপে তাই ফ্রান্সের পরেই অবস্থান নিঃসন্দেহে ডেনমার্কের। দলটির সবচেয়ে বর ক্ষমতা হচ্ছে একতা। এছাড়া গত ইউরোতে মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করা এরিকসন যে ডেনিশদের অনুপ্রেরণার নাম। কোচ ক্যাসপার হুলমেন্ডের দলের প্রতি বিভাগেই আছে তারকা। আর তাদের পারফরম্যান্সও আছে ভারসাম্য। গত আসরে ক্রোয়শিয়া যেমন চমকে দিয়েছিল, এবার কাতারে সেই কাজটা ডেনিশরা করার সম্ভাবনা বেশি। শেষ ৬ ম্যাচে ৪ জয় দলটির।
ওশেনিয়া অঞ্চলের দল হয়েও অস্ট্রেলিয়া করছে এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব। এই বছর খেলা ৫ ম্যাচের ৩টিতেই জয় সকারুদের। টিম কাহিল যুগের পর দলটির সবচেয়ে বর তারকা স্কটিশ বংশোদ্ভুত দুই ফুটবলার বোয়েল ও হার্স্তিক। গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল তিউনিশিয়া। এই নিয়ে পঞ্চম বারের মত বিশ্বকাপ খেলবে দেশটি। তবে আগের চার আসরে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি আফ্রিকান দেশটি। সবশেষ ৪ ম্যাচের ৩টিতেই জয় দলটির। দলের সবচেয়ে বড় তারকা স্ট্রাইকার খাজরি। এই ৩১ বছর বয়সী ফুটবলার ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে মোপেলিয়র হয়ে খেলন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ