মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বের এখনকার জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে টেকসই ব্যবস্থাপনার বিপরীতে প্রতিবছর আমাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের ১৭৫ শতাংশ দরকার । বিশ্বের জনসংখ্যা যে নতুন আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করছে, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদও সে চাপ অনুভব করতে পারছে। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ, গতি বাড়ছে পরিবেশ ধ্বংসের। একই সঙ্গে আশঙ্কা বাড়ছে পৃথিবী আর মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের টিকে থাকার মন্ত্র অবশ্য বলছে, কেবল বাড়ন্ত জনসংখ্যার দিকে নজর রাখলেই চলবে না, মনোযোগ দিতে হবে সম্পদের অতি ভোগের দিকেও। ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, এ বছরের ১৫ নভেম্বর বিশ্বের জনসংখ্যা ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি অতিক্রম করছে; এই হিসাবে শেষ ১০০ কোটির মাইলফলকে পৌঁছাতে পৃথিবীকে এক যুগও অপেক্ষা করতে হয়নি। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি অভাবনীয় সফলতার কাহিনী, ১৯৫০ সালের পর থেকে গত ২৫ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য গড় আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রজনন সেবার আওতা বাড়ায়, পরিবার পরিকল্পনা ও মেয়েদের শিক্ষালাভের অধিক সুযোগের ফলে জন্মহার কমার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ সারা হারটগ। তবে পৃথিবীকে এই ‘অভাবনীয় সফলতার’ মূল্যও চুকাতে হয়েছে।জাতিসংঘের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ও পরিবেশ ধ্ংসের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যোগ হওয়া প্রতিটি মানুষ এই গ্রহের সীমিত জৈবিক সম্পদের ওপর আগের তুলনায় আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, বন উজাড়, পানি এবং খাদ্যের ঘাটতি- এ সবই আমাদের বিশাল এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে ত্বরান্বিত হচ্ছে, বলেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা পপুলেশন ম্যাটারস। হারটগ বলছেন, দক্ষিণের (লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ও ওশেনিয়া) উপচে পড়া জনসংখ্যার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সম্পদের অতি ব্যবহার যে টেকসই ব্যবস্থাপনার বিপরীত, সেটা বলা সহজ। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোই যে এর একমাত্র সমাধান, সেটা ভাবলেও ভুল হবে। বেশি সম্পদ ব্যবহার এবং এর ফলে হওয়া দূষণের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়েও অনেক বেশি অবদান রাখছে আয় বেড়ে যাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ কিংবা কারও কারও বিপরীতমুখী হলেও বিশ্বের ধনী দেশগুলোই অন্যদের তুলনায় জনপ্রতি বেশি সম্পদ ব্যবহার করছে ইঙ্গিত করে বলেন জাতিসংঘের এ জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ। দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল সাব-সাহারান আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু অংশ, সামনের দশকগুলোতে যারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই ধারণ করবে, তারা বিশ্বের মোট ক্র্বান নিঃসরণ ও সম্পদ ব্যবহারে কিয়দংশের জন্য দায়ী। গেøাবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর সবাই যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মতো করে বাস করতে চায়, তাহলে আমাদের অন্তত ৫টি পৃথিবীর সম্পদ লাগবে। আর যদি নাইজেরিয়ার নাগরিকদের মতো বাস করতে চাই, তাহলে পৃথিবীর এখন যে সম্পদ আছে তার ৩০ শতাংশই বেঁচে যাবে। একই কথা সত্য ভারতের ক্ষেত্রেও। ১৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির নাগরিকদের মতো করে যদি পৃথিবীর সবাই বাস করতে চান, তাহলে পৃথিবীর মাত্র ৮০ শতাংশ সম্পদ ব্যবহৃত হবে। বিশ্বের এখনকার জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে টেকসই ব্যবস্থাপনার বিপরীতে প্রতিবছর আমাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের ১৭৫ শতাংশ দরকার, অর্থ্যাৎ এখন যা আছে তার চেয়েও ৭৫ শতাংশ বেশি, বলছে গেøাবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক। মানে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের এখনই দরকার পড়ছে পৌনে ২টা পৃথিবীর। জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছানো আমাদের বৈচিত্র ও অগ্রগতিকে উদ্যাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছে, সঙ্গে মনে করতে বলছে ধরিত্রীর প্রতি আমাদের যৌথ দায়িত্বের কথাও, এক বিবৃতিতে একথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।সিএনএন লিখেছে, পৃথিবীতে যত মানুষ বাড়বে, ততই পরিবেশের ওপর চাপ বাড়বে। পানি, খাদ্য ও জায়গা নিয়ে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের লড়াইও বাড়বে। জনসংখ্যার দ্রæত বৃদ্ধি এবং তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আসছে দশকগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে, বাড়বে দ্ব›দ্ব-সংঘাত, বলছেন বিশেষজ্ঞরাও। খাদ্য হোক বা পানি, ব্যাটারি কিংবা জ্বালানি গ্যাস, জনসংখ্যা যত বাড়বে এসব সম্পদে আমাদের ভাগও ততই কমতে থাকবে। তবে এর সঙ্গে, প্রতিটি মানুষ কী পরিমাণ সম্পদ ব্যবহার করছে তাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বলছেনত নীতিনির্ধারকরা। সম্পদ ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আনলে তা এখনকার তুলনায় বড় পার্থক্য সৃষ্টি করবে, ভাষ্য তাদের। আগামী অন্তত কয়েক দশক জনসংখ্যার বৃদ্ধি এড়ানো অসম্ভব। জাতিসংঘের হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছাবে। ২১০০ সালে এটি বেড়ে সর্বোচ্চ এক হাজার ১০০ কোটিতে দাঁড়াতে পারে।এ কারণে বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু সংকটের সমাধানও অন্যত্র খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন। ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক অর্থনীতি বিষয়ক পরিচালক ভেনেসা পেরেজ-সিরেরা বলছেন, পৃথিবীর কাছে এখন যে সম্পদ আছে তা ৮০০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। আমরা যদি ভূমি ব্যবহারের এখনকার চর্চায় বদল আনি, তাহলে সম্ভবত এই সম্পদ অতিরিক্ত আরও কয়েকশ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাতে পারবে। হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজ্যুমার ইকোনমিকসের অধ্যাপক এবং জার্মানির সাসটেইনেবল ইউরোপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ার সিলভিয়া লোরেকের মতে, সম্পদ কতটুকু লাগবে তা নির্ভর করবে সম্পদ আমরা কীভাবে এক অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি তার উপর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।