বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দান করলে আল্লাহ তা’আলা ধন বাড়িয়ে দেন, এ বাড়িয়ে দেয়ার এটি একটি প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি কখনো পরিমাণের দিক থেকে হতে পারে। এটা খোলা চোখে দেখা যায়। কখনো বিষয়টি থাকে প্রচ্ছন্ন, লুক্কায়িত। অনেক সময় দানকারীও টের পায় না। কিন্তু এর ফল ঠিকই সে ভোগ করে। সম্পদ বৃদ্ধির প্রচ্ছন্ন দিকটি হচ্ছে, উপার্জিত সম্পদে বরকত লাভ। আল্লাহ যদি বরকত দেন, তবে অল্প আয়েও জীবন চলে যাবে পালতোলা নৌকার মতো তরতর করে। যেখানে হোঁচট খাওয়ার কোনো ভয় নেই, পা পিছলে যাওয়ারও নেই কোনো আশঙ্কা। ঘরভর্তি সম্পদ নয়, আমরা আমাদের উপার্জিত সম্পদের এ বরকতটাই চাই।
দানের আরেক পুরস্কার আল্লাহ তা’আলার সাহায্য লাভ। ঘরে-বাইরে, আপদে-বিপদে আল্লাহ তা’আলার সাহায্যই আমাদের একমাত্র ভরসা। সুখে-দুঃখে, সদা-সর্বত্র তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। মুমিন-মুসলমান যাদের পরিচয়, তারা আল্লাহকে ছেড়ে আর কারো কাছে সাহায্য চাইতেই পারে না। তিনিই প্রথম আশ্রয়, তিনিই শেষ আশ্রয়। নবীজী (সা.) আমাদের এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘যখন তুমি কিছু চাইবে, আল্লাহর কাছে চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে, আল্লাহর কাছেই চাইবে।’ (জামে তিরমিযী : ২৫১৬)।
কথা হল, যে মহান মালিকের সাহায্য চাইতে আমরা আদিষ্ট, সে সাহায্য যদি এমনিতেই পাওয়া যায়, তো আর কী চাই! আর মহাক্ষমতাধর আল্লাহ যখন কাউকে সাহায্য করবেন, তার আর অক্ষম মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না-এটা বলাবাহুল্য। অসহায় কাউকে দান করলে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহ তা’আলাও সহযোগিতাকারীকে সাহায্য করেন। মানুষের দান তো কেবলই দুনিয়ায়। এর প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা সে লাভ করবে, তা বিস্তৃত দুনিয়া-আখেরাত সর্বত্র। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : বান্দা যতক্ষণ নিজ ভাইয়ের সহযোগিতা করে, ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সহযোগিতা করেন। (সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯)।
হাদীসের বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, অন্যকে যে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। আর দান তো সহযোগিতাই। এক মানুষের প্রয়োজনে আরেক মানুষের এগিয়ে আসা। তাই এ সহযোগিতা যে করবে, আল্লাহর বান্দাদের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তাকে সহযোগিতা করবেন। এ সহযোগিতা নানা ধরনের হতে পারে। বান্দা সহযোগিতা করে সীমিত সামর্থ্য দিয়ে, আল্লাহ সাহায্য করেন নিজ শান মোতাবেক অসীম সামর্থ্য দিয়ে।
আল্লাহ কখনো বান্দার প্রয়োজন পূরণ করে দিয়ে সাহায্য করেন, কখনো তার বিপদ দূর করে দিয়ে সাহায্য করেন, কখনো তাকে সম্মান দান করে সাহায্য করেন, অর্থসম্পদে বরকত দিয়ে সাহায্য করেন, দুনিয়ার লাঞ্ছনা সরিয়ে দিয়ে সাহায্য করেন। এসব তো আল্লাহ তা’আলাই করেন। তিনি ছাড়া আর কে আছে, যে এর- কোনো একটি সম্পাদন করতে পারে? না, আর কেউ নেই। আমাদের বিশ্বাস এমনই।
কথা একটাই, দানে ধন বাড়ে। এ বৃদ্ধি সম্পদের পরিমাণের বিবেচনায়ও হতে পারে, প্রচ্ছন্ন বরকত লাভের মধ্য দিয়েও হতে পারে, বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকার মধ্য দিয়েও হতে পারে। আর দুনিয়াতে মানুষ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে দান করে, এ দানের শীতল ছায়া সে লাভ করবে দুনিয়ার পাশাপাশি পরকালেও। এরপর আর ভয় কীসের! শয়তানের পক্ষ থেকে দরিদ্রতা আর অভাবের মিথ্যা আশঙ্কাকে পদদলিত করে মহান প্রতিপালকের আশ্বাসবাণী আমাদের বরণ করতেই হবে।
আল্লাহ যে কখনোই কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করেন না! তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর সমৃদ্ধি দানের ওয়াদাকে যারা বুকে ধারণ করতে পারবে, আস্থায় ও বিশ্বাসে, তাদের জন্যে নবীজী (সা.) এর এ হাদীসটি বেশ হৃদয়জুড়ানো। তিনি বলেছেন : প্রতিদিনই দুজন ফেরেশতা নেমে আসেন। তাদের একজন দোয়া করেন- আল্লাহ! যে দান করে তাকে আপনি আরো দিন। অপরজন দু’আ করেন- আল্লাহ! যে ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখে, তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন। (সহীহ বুখারী : ১৪৪২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।