বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কেয়ামতের ময়দানে যখন মানুষের আমলের হিসাব হবে, তখন কারো হাতেই কোনো টাকা-পয়সা থাকবে না। দুনিয়ার আমলই তখন একমাত্র সম্বল। হিসাব-নিকাশের পর ভালো আমল যার বেশি হবে, তার খুশির কোনো সীমা থাকবে না। সে অন্যদের ডেকে ডেকে নিজের আমলনামা দেখাবে, পড়তে দেবে। আর যার মন্দ আমলের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে, তার অবস্থা হবে ঠিক বিপরীত। নিজের কৃতকর্মের জন্যে আফসোস করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকবে না।
দুনিয়াতে মানুষ যখন শাস্তির মুখে পড়ে, তখন টাকা-পয়সা দিয়ে তা থেকে মুক্তির চেষ্টা চালায়। কিন্তু ওই সময় তো আর টাকা-পয়সা থাকবে না কারো। যদি থাকত, তবে গোনাহের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্যে সবই সে তখন দান করে দিত। এমনকি দুনিয়া ভর্তি স্বর্ণ-রুপাও যদি তখন কারো হাতে থাকত, দোজখের আজাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে সবই সে বিলিয়ে দিত। তবুও যদি রেহাই পাওয়া যেত!
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা সবই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। সূরা ইউনুসের ৫৪ নং আয়াত : যারা জুলুম করেছে, তাদের প্রত্যেকের কাছেই যদি পৃথিবীর সকল সম্পদও থাকত, তবে তারা তা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিত। যখন তারা শাস্তি দেখবে, তখন মনে মনে আফসোস করবে। তাদের মাঝে ন্যায়ের সঙ্গেই বিচার করা হবে। তাদের কাউকেই কোনো জুলুম করা হবে না।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, গোনাহের অভিশাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে পরকালে মানুষ যে সম্পদ মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে, মুক্তিপণ দিতে না পারায় এবং শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি না পাওয়ায় কেবল আফসোস করবে, দুনিয়াতে সে সম্পদ দানেই আল্লাহ তা’আলা গোনাহ মাফ করে দেয়ার কথা দিচ্ছেন। বোঝা গেল, সম্পদ দিয়ে শাস্তি থেকে বাঁচা যাবে। দুনিয়াতে মানুষের শাস্তি থেকে যেমন টাকার বিনিময়ে বাঁচা যায়, তা পরকালেও সম্ভব। তবে কথা হল, পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে টাকা ব্যয় করতে হবে দুনিয়াতে। দুনিয়ার দান পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবে।
এ তো গেল দানের প্রথম পুরস্কার প্রসঙ্গ। দ্বিতীয় পুরস্কার, দান যে করবে আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দেবেন। শুধু পরকালের পুরস্কারই নয়, দুনিয়ার জীবনেও সমৃদ্ধি দেবেন। এটা নগদ পুরস্কার। আল্লাহ বিশ্বাসী মুমিন যারা, এ কথা তাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। এমন পুরস্কারের ঘোষণা পবিত্র কোরআনে আরো আছে : তুমি বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিজিক বাড়িয়ে দেন, (যাকে ইচ্ছা) কমিয়ে দেন। আর তোমরা যা কিছুই দান কর, তিনি তার জায়গায় অন্য কিছু দিয়ে দেন। আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। (সূরা সাবা : ৩৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) জোর দিয়েই বলেছেন : কোনো দান-সদকাই সম্পদে ঘাটতি সৃষ্টি করে না। (সহীহ মুসলিম : ২৫৮৮)। এ তো পুরস্কারের এক দিক। অর্থাৎ কেউ যখন কিছু দান করে, আল্লাহ তা’আলা পুরস্কারস্বরূপ তাকে এর বদলে সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন। তাই দান করলে সম্পদ কমে যাওয়ার ভয় নেই। মুমিনের বিশ্বাস এমনই।
পুরস্কারের আরেকটি দিক হল, দান-সদকা মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে। দান আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ দমিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই দান আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং মন্দ মৃত্যু ঠেকিয়ে দেয়। (জামে তিরমিজি : ৬৬৪)।
বান্দা যখন পাপ করে, আল্লাহ তা’আলা এতে অসন্তুষ্ট হন। সে অসন্তুষ্টি দূর করার একটি সহজ উপায় দান। আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি যদি দূর হয়, তিনি যদি সন্তুষ্ট থাকেন, স্বাভাবিক কথা, তখন আমরা নিরাপদে থাকব যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে, আমাদের জীবন হবে শান্তিময়।
অনাকাক্সিক্ষত কত বিপদে কত টাকা আমাদের হাত থেকে হারিয়ে যায়! বিপদ কখনো আসে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীর বেশে। কখনো আসে রোগ-শোক, মামলা-মোকদ্দমা জাতীয় কোনো সঙ্কটের বেশে। বিপদ যেমনই হোক, তাতে টাকা-পয়সা যায়। কখনো টাকা হারিয়ে যায়, কখনো কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, কখনো আবার আমরা নিজেরাই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য টাকা বিলাই। অনাকাক্সিক্ষত খাতে স্বেচ্ছায় টাকা খরচ করি।
প্রশ্ন হলো, এভাবে হাসপাতালে কোট-কাচারিতে দেয়ার জন্যে কিংবা চোর-ডাকাতের পকেট ভারি করার জন্যে কি কেউ টাকা উপার্জন করে? এ প্রশ্নের উত্তর সর্বজনবিদিত এ সবই অনাকাক্সিক্ষত। এগুলো আমরা চাই না। তবুও নানা সময় এসব ক্ষেত্রে আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত সম্পদ চলে যায় কিংবা বিলিয়ে দিতে হয়। দান যদি আমাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলার অসন্তোষ দূর করে দিতে পারে, তবে আমরা এমন অনেক অনাকাক্সিক্ষত বিপদ থেকে বেঁচে যেতে পারব- সন্দেহ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।