Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউনাইটেডে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার রোনালদো!

বিশ্বকাপের আগে সিআরসেভেন বোমা

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে মোটেই স্বাচ্ছন্দ্যে নেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই ব্যাপারে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই নানা দিক থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। তবে রোনালদো নিজে বা ম্যানইউ কতৃপক্ষ, কেউই এই সত্যটা স্বীকার করেছিল না গণমাধ্যমের সামনে। এসবের মাঝে চলে এলো কাতার বিশ্বকাপ। যে আসর শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৫ দিন। এমন সময় এসে বোমা ফাটালেন রোনালদো। ম্যানইউ ম্যানেজার এরিক টেন হাগ, ক্লাবের কিছু কর্মকর্তা, সাবেক কোচ রালফ রাঙনিক ও সাবেক সতীর্থ ওয়েইন রুনির উপর জমে থাকা ক্ষোভ এবার উগরে দিলেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
গতপরশু মধ্যরাতে তিনি টকটিভিতে জনপ্রিয় উপস্থাপক পিয়ার্স মরগানকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে রোনালদো জানান, ক্লাবে তিনি বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার। এমনকি কোচ টেন হাগের প্রতি নেই তার কোন সম্মান। রোনালদোর দেওয়া দেড় ঘন্টার সাক্ষাৎকারটি আগামীকাল ও পরশু দুই খন্ডে প্রচার করা হবে। তার আগে উপস্থাপক মরগান টুইটারে লিখেছেন, ‘রোনালদোর জীবনে দেয়া সবচেয়ে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার এটি।’ তাছাড়া এই বৃটিশ ব্রডকাস্টার ডেইলি সানে এই সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে লিখেছেন গতকাল। সেখান থেকে পাওয়া কিছু বিষ্ফোরক মন্তব্যের ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রে।
গত মাসে টটেনহ্যামের বিপক্ষে একটি ম্যাচে বদলি হিসেবে একদম শেষ মুহূর্তে রোনালদোকে নামতে নির্দেশ দেন টেন হাগ। তবে ম্যাচে অবদান রাখার মত সময় নেই বলে অপরাগতা জানানোর পর ম্যানইউর কোচ চেলসির বিপক্ষে একটি ম্যাচে পর্তুগিজ তারকাকে স্কোয়াড থেকে বাদ দেন শৃঙ্খলাজনিত কারন দেখিয়ে। এরপরই দুই জনের মধ্য তিক্ততা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এই ব্যাপারে উপস্থাপকে রোনালদোর কাছে জানান, ‘আমার তার প্রতি কোনও সম্মান নেই, কারণ তিনি আমাকে সম্মান দেখাননি। যদি আপনি আমাকে সম্মান না দেখান আমারও আপনার প্রতি কোনও সম্মান নেই।’ মরগান তখন জানতে চান, ম্যানইউর উচ্চ মহল থেকে তাকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কি না? রোনালদোর সোজা-সাপ্টা উত্তর, ‘হ্যাঁ শুধু কোচই নন আরও দু’তিন জন আছেন ক্লাবের ভেতর। আমি প্রতারিত বোধ করছি। আমি পরোয়া করি না। মানুষের সত্য জানা প্রয়োজন। শুধু এই বছর না, গত বছরও আমাকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।’
মরগান ডেইলি সানের প্রতিবেদনে আরও লিখেন, ২০২১ সালের আগস্টে রোনালদো ম্যানইউতে ফেরার পর, তিনি (রোনালদো) ক্লাবের অবনমন টের পেয়েছেন। রোনালদোর ভাষায়, ‘আমি মনে করি সমর্থকদের সত্য জানা প্রয়োজন। আমি ক্লাবের জন্য সেরাটা দিতেই এখানে এসেছি। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ক্লাব ছাড়ার পর ক্লাবে কোনও পরিবর্তন আসেনি, কিছুই বদলায়নি। আমি ২০০৯ সালে যখন ক্লাব ছাড়ি তখন যে প্রযুক্তি বা সুবিধা ছিল আজও তেমনই আছে। এমনকি রান্নাঘর ও শেফটাও বদলায়নি। লিভারপুল, ম্যানসিটি এমনকি আর্সেনালের সঙ্গে যদি আপনি প্রতিযোগিতা করতে চান তাহলে অনেক কিছুই বদলাতে হবে।’
রোনালদো এত রাগ-অভিমানের মধ্যেও জানালেন ক্লাব বও সমর্তকদের প্রতি এখনো তার ভালবাসা একদম অটুট আছে, ‘আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভালোবাসি, আমি সমর্থকদের ভালোবাসি, তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে কিন্তু তারা যদি অন্য কিছু চায় তবে ক্লাবে অনেক অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন।’ এই সময় ৫ বারের ব্যালন ডি-অর জয়ী তার গুরু কিংবদন্তী ম্যানেজার স্যার ফার্গির কথা টেনে এনে বলেন, ‘তিনি সবার চেয়ে ভালো জানেন যে ক্লাবটি যে পথে থাকার কথা সেই পথে নেই।’
রোনালদো যখন গতবছর ইউনাইটেডে ফেরেন তখন সাবেক সতীর্থ ওলে গানার সোলশার ছিলেন কোচের দায়িত্বে। তার জায়গায় গত মৌসুমের মাঝে রাঙনিককে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে এই পর্তুগিজ জানান, সাবেক ম্যানইউ এই জার্মান কোচকে নাকি তিনি চিনতেনই না, ‘উনি তো কোচই নন। একজন স্পোর্টিং ডিরেক্টর কীভাবে ম্যানইউর বস হবেন? আমি তো উনার নামই শুনিনি।’ রোনালদোর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক সতীর্থ ওয়েন রুনি এই মৌসুমে সমালোচনা করেছিলেন। রুনির ব্যাপারে কিছুটা মজার ছলেই রোনালদো বলেন, ‘আমি জানি না রুনি এতো বাজেভাবে কেন আমার সমালোচনা করে। হয়তো তার ক্যারিয়ার শেষ এবং আমি এখনও শীর্ষ পর্যায়ে খেলছি এই কারণে (হাসি)।’
রোনালদোর পূর্ণ সাক্ষাৎকার একাশিত হবার আগেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্বে। লিভারপুলের সাবেক ফুটবলার জেমি ক্যারেঘার একটি টুইট করে লিখেছেন, ‘এসবের পর ইউনাইটেডের ৯৯% ভক্তই কোচের পক্ষে থাকবেন।’ সাবেক সতীর্থ গ্যারি নেভিল জানান, ‘রোনালদো যা বলেছেন তা ম্যানিউর জন্য ভয়ংকর হবে।’ উল্লেখ্য, রোনালদোর আরেক সাবেক সতীর্থ বিখ্যাত মিডফিল্ডার রয় কিন ২০০৫ সালে এভাবেই ম্যানইউর সমালোচনা করে সেই মৌসুমেই ক্লাব ছেড়েছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ম্যানইউর কোচ টেন হাগ, প্রধান নির্বাহী রিচার্ড আর্নল্ড ও স্পোর্টিং ডিরেক্টর জন মোর্টা গতকাল জরুরী মিটিংয়ে বসেছিলেন। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল এই সাক্ষাৎকার।
ইউরোপে এখন বিশ্বকাপের বিরতি, আবারও মাঠে নামবে বড়দিনের পর। রোনালদো ম্যানচেস্টারে আদও আর ফিরবেন কি না সেই প্রশ্নের উত্তর ততদিনে পাওয়া যাবে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, এই পর্তুগিজ কখনই নিজেকে অবহেলিত দেখতে পছন্দ করেন না। টেন হাগ ও ক্লাব কতৃপক্ষের উপেক্ষা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। তবে ঠিক বিশ্বকাপ সামনে রেখে এমন বিতর্কিত মন্তব্য করার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে একটা ব্যাপারই স্পষ্ট হচ্ছে। রোনালদো এই অতিরিক্ত চাপটা ইচ্ছে করেই নিচ্ছেন কেবল নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। কারণ চাপেই এই পর্তুগিজ তার সেরাটা দেন। সামনে বিশ্বকাপে একটা দারুন পারফরম্যান্স হয়ত সব বিতর্কই পেছনে ফেলে দিবে। তাইতো রোনালদোর পূর্ন মনোযোগ থাকবে এখন কাতার বিশ্বকাপের দিকে, যেখানে ঘানা, উরুগুয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে একই গ্রুপে আছে পর্তুগাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ